উদ্বোধনের পরে সাত মাসেই হতশ্রী অবস্থা কালীঘাট স্কাইওয়াকের!
কালীঘাট মন্দিরে পৌঁছনোর জন্য স্কাইওয়াকের উদ্বোধন হয়েছিল গত ১৪ এপ্রিল, বাংলা নববর্ষের দিন। সে সময়ে জানানো হয়েছিল, স্কাইওয়াকের নীচের রাস্তায় কোনও হকার বসবেন না। কিন্তু বুধবার বিকেলে আশুতোষ মুখার্জি রোড থেকে কালীঘাট মন্দিরে যাওয়ার রাস্তা কালী টেম্পল রোডে গিয়ে দেখা গেল, কোথাও মূল রাস্তার উপরেই পসরা সাজিয়ে বসেছেন হকারেরা। কোথাও রেলিংয়ের গায়ে ঝুলছে কাপড়। সেই সঙ্গে যত্রতত্র দাঁড় করানো রয়েছে গাড়ি। উদ্বোধনের পরে বছর না পেরোতেই স্কাইওয়াকের বড় স্তম্ভগুলির নীচের অংশ ছেয়ে গিয়েছে পান-গুটখার পিকে!
কালীঘাট মন্দিরের সামনে স্কাইওয়াক যেখানে শেষ হচ্ছে, সেখানে এক কোণে দেখা গেল, ফুটপাতে সংসার পেতে বসা হয়েছে। রেলিংয়ে ঝুলছে কাপড়। স্কাইওয়াক লাগোয়া ফুটপাতও জবরদখল হয়ে গিয়েছে। পথচারীরা বাধ্য হয়ে তাই ফুটপাত ছেড়ে মূল রাস্তা দিয়েই চলাফেরা করছেন। স্কাইওয়াক নির্মাণের পরে হকারের সংখ্যা যে বেড়েছে, সে কথা স্বীকার করে স্থানীয় পুরপ্রতিনিধি প্রবীর মুখোপাধ্যায় বললেন, ‘‘আগের তুলনায় হকার বেড়েছে। বিষয়টি নিয়ে আমরা চিন্তিত। প্রশাসনের শীর্ষ স্তরে জানিয়েছি।’’
গোদের উপরে বিষফোড়া হয়ে দাঁড়িয়েছে স্কাইওয়াকের নীচে কালী টেম্পল রোডের যেখানে-সেখানে গাড়ির অবৈধ পার্কিং। স্থানীয় এক ব্যবসায়ীর কথায়, ‘‘এখানে সরকারি পার্কিং লট থাকলেও অনেকেই নিজেদের সুবিধার্থে কালীঘাট মন্দিরের সামনে থেকেই গাড়ি ধরতে চান। রাস্তার দু’দিকে প্রচুর গাড়ি রাখা থাকে। আমরা প্রতিবাদ করতে গেলে চালকেরা উল্টে আমাদেরই শাসান। কেউ দেখার নেই।’’ এ দিন বিকেলে দেখা গেল, স্কাইওয়াকের নীচে কালী টেম্পল রোডের এক দিকে অটো রেখে সারাইয়ের কাজ চলছে। পাশেই কালীঘাট থানা। রাস্তায় থানারও একাধিক গাড়ি দাঁড় করানো। তার মধ্যে রয়েছে দুর্ঘটনাগ্রস্ত গাড়িও। প্রশ্ন উঠেছে, সামনে থানা থাকা সত্ত্বেও পুলিশ কেন বেআইনি হকার ও পার্কিং ঠেকাতে ব্যবস্থা নিচ্ছে না?
কালীঘাট মন্দিরের দিকে কালী টেম্পল রোড শেষ হতেই ডান দিকে রাস্তার উপরে সার দিয়ে সিঁদুরের পসরা সাজিয়ে বসেছেন জনাকয়েক মহিলা। এখানে বসে ব্যবসা করা তো নিষেধ? প্রশ্ন করতেই এক মহিলা বলে উঠলেন, ‘‘পুলিশ বারণ করলেই উঠে যাই।’’ আর এক মহিলার কথায়, ‘‘৩০ বছর ধরে এখানেই সিঁদুর বিক্রি করে পেট চালাচ্ছি। আমরা এখান থেকে কোথায় যাব?’’ যত্রতত্র অবৈধ গাড়ি পার্কিং নিয়ে পুলিশের ভূমিকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় ব্যবসায়ী থেকে জনপ্রতিনিধি, সকলেই। পুলিশ কেন রাস্তা থেকে হকার সরায় না? বেআইনি পার্কিংয়ের বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নেয় না? এ বিষয়ে জানতে কলকাতা পুলিশের ডিসি (দক্ষিণ) প্রিয়ব্রত রাইকে একাধিক বার ফোন করা হলেও সেটি বেজে গিয়েছে। মেসেজ করেও উত্তর মেলেনি।
দক্ষিণ কলকাতার হকার নেতা কুমার সাহা বললেন, ‘‘রাস্তায় কোনও হকার বেআইনি ভাবে বসে থাকলে পুলিশ ব্যবস্থা নিক।’’ স্থানীয় বিধায়ক তথা কলকাতা পুরসভার মেয়র পারিষদ (হকার পুনর্বাসন কমিটি) দেবাশিস কুমার বলেন, ‘‘ওই রাস্তায় হকারদের বসার কথা নয়। গাড়ি রাখারও কথা নয়। পুরো বিষয়টি নিয়ে পুলিশের সঙ্গে কথা বলব।’’
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)