Advertisement
০৪ মে ২০২৪

মেট্রোর কাজে রাশ কোর্টের, বৌবাজারে ধস নামার রিপোর্ট পেশের নির্দেশ

নবান্নে রাজ্যে বিভিন্ন দফতর, মেট্রো-কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

বিপর্যস্ত: মঙ্গলবার সকালে ভেঙে পড়ে বৌবাজারের দুর্গা পিতুরি লেনের আরও একটি বাড়ি। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী

বিপর্যস্ত: মঙ্গলবার সকালে ভেঙে পড়ে বৌবাজারের দুর্গা পিতুরি লেনের আরও একটি বাড়ি। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০৩:১২
Share: Save:

বিপর্যয়ের মুখে প্রকল্পের কাজ বন্ধ রাখা হয়েছে বলে কলকাতা হাইকোর্টে জানালেন ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো রেল কর্তৃপক্ষ। প্রধান বিচারপতি থোট্টাথিল ভাস্করন নায়ার রাধাকৃষ্ণন ও বিচারপতি অরিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চে জনস্বার্থ মামলার শুনানিতে মঙ্গলবার এ কথা জানানো হয়। ডিভিশন বেঞ্চ তার পরেই মেট্রো কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে দেয়, আদালতের অনুমতি ছাড়া প্রকল্পের কাজ ফের শুরু করা যাবে না। আর বৌবাজারে পাতাল রেলের সুড়ঙ্গ তৈরির সময় ধস নামার সবিস্তার রিপোর্ট ১৬ সেপ্টেম্বর পেশ করতে হবে আদালতে।

এ দিনই নবান্নে রাজ্যে বিভিন্ন দফতর, মেট্রো-কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ক্ষতিপূরণ, মেট্রো প্রকল্পের বাকি কাজ এবং বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে সবিস্তার আলোচনা হয়। মুখ্যমন্ত্রী পরে বলেন, ‘‘ক্ষতিপূরণের প্রশ্নে বাড়ির বিনিময়ে বাড়ি, দোকানের বিনিময়ে দোকান, আপৎকালীন সাহায্য হিসেবে পাঁচ লক্ষ করে টাকা, নথিপত্র হারালে সরকারি সহযোগিতা, ক্ষতিগ্রস্তদের থাকার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।’’

ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় সুড়ঙ্গ তৈরি করে মেট্রোর কাজ শুরু করার আগে পরিবেশগত ও ভৌগোলিক সমীক্ষা করা হয়নি বলে অভিযোগ তুলে জনস্বার্থে মামলা করেছে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। মামলার আবেদনে বলা হয়েছে, কলকাতার মাটি নরম। পাতাল রেলের কাজের জন্য এখানে যে-ধরনের প্রযুক্তিগত সাবধানতা নেওয়া উচিত ছিল, তা নেওয়া হয়নি।

ভেঙে পড়ার আগের মুহূর্তে এ ভাবেই হেলে পড়েছিল সেটি। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী।

মেট্রোর আইনজীবী জিষ্ণু সাহা ডিভিশন বেঞ্চে জানান, গঙ্গার তলায় বা ব্রেবোর্ন রোড, বি বা দী বাগে সুড়ঙ্গ তৈরির সময় এমন বিপত্তি দেখা দেয়নি। ১০.৯ কিলোমিটার সুড়ঙ্গের মধ্যে ৯.৮ কিলোমিটারের কাজ শেষ। বৌবাজার এলাকায় পাঁচটি বাড়ি ভেঙেছে। ৩০টি বাড়ির ক্ষতি হয়েছে। সেগুলি সারিয়ে দেওয়া হবে। মেট্রো-কর্তৃপক্ষ ৩২৩ জনকে অন্যত্র সরিয়ে দিয়েছেন। তাঁদের থাকার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। বিভিন্ন দেশের বিশেষজ্ঞদের কলকাতায় আনা হচ্ছে বিপর্যয় মোকাবিলার কাজে। বিশেষজ্ঞেরা যে-রিপোর্ট দেবেন, মেট্রো-কর্তৃপক্ষ তা আদালতে পেশ করবেন।

আবেদনকারীদের আইনজীবী সপ্তাংশু বসু ও ঋজু ঘোষাল আদালতে জানান, যাঁদের সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে, তাঁরা সব কিছু ফেলে চলে যেতে বাধ্য হয়েছেন। পরিবার-পিছু অন্তত এক জন যাতে বাড়িতে ঢুকে জামাকাপড়, টাকা বার করে আনতে পারেন, আদালত তার ব্যবস্থা করুক। ডিভিশন বেঞ্চ নির্দেশ দিয়েছে, দক্ষ কর্মীদের সাহায্যে পরিবার-পিছু এক জনকে বাড়িতে ঢুকতে দিতে হবে।

বৌবাজারে ফাটল ধরা বাড়িগুলি তাসের ঘরের মতন ভেঙে পড়ছে। এ দিন সকালে দুর্গা পিতুরি লেনের রেশন দোকান ধসে যাওয়ায় বাসিন্দাদের দুর্ভোগ বাড়ে। সাড়ে ১১টা নাগাদ হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ে তেতলা শীলবাড়ি। দুর্গা পিতুরি ও সেকরাপাড়া লেনে যাঁদের বাড়ি ভেঙেছে, তাঁরা এক কাপড়ে আশপাশের হোটেল ও আত্মীয়দের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন। জরুরি ও নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস বার করে আনার জন্য সাহায্য চেয়ে পুলিশের কাছে আর্জি জানান তাঁরা। এ দিন সকালে ৯৯ নম্বর বিবি গাঙ্গুলি স্ট্রিটে রাজীব দত্তের বাড়িতে ফাটল ধরা পড়ে। পরিদর্শনে যান মেট্রোর ইঞ্জিনিয়ারেরা। বাড়ি থেকে দামি জিনিসপত্র সরাতে থাকেন ইলেকট্রনিক্স দ্রব্যের কারবারি রাজীব। তাঁর ভাই দীপঙ্কর বলেন, ‘‘দুর্গা পিতুরি লেনের পৈতৃক বাড়িতে অফিস ও কারখানা রয়েছে। সেখানে ফাটল ধরায় দাদার বাড়িতে আশ্রয় নিই। এখন দাদার বাড়িতেও ফাটল ধরল।’’

হোটেলেও তাঁরা স্বস্তিতে নেই বলে বাস্তুহারাদের অভিযোগ। চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ সংলগ্ন একটি অতিথি নিবাসে রয়েছেন দুর্গা পিতুরি লেনের বাসিন্দা সঞ্জয় বসাক। তিনি বলেন, ‘‘একখানা ঘর দিয়েছে। সাত জন ওই ঘরেই থাকছি। মেঝেতে কাপড় পেতে শুয়ে হচ্ছে। খাবার চাইলে ফুটপাতের দোকানের খাবার এনে দিচ্ছেন হোটেলের লোকজন।’’ সঞ্জয় জানান, তাঁর কিডনিতে পাথর। দাদার ক্যানসার। চিকিৎসার সব নথিই বাড়িতে। হাতে নগদ টাকাও নেই!

মেট্রোর ইঞ্জিনিয়ারদের আশ্বাসে ভরসা করতে পারছেন না বাসিন্দারা। ভেঙে পড়া শীলবাড়ির লাগোয়া লাহাবাড়ির এক সদস্য জানান, শনিবার তাঁদের বাড়িতে ফাটল ধরে। মেট্রোর লোকজন বাড়ি পরিদর্শন
করে আশ্বাস দেন, সাত দিন থাকা যাবে। কিন্তু তাঁরা চলে যাওয়ার পরেই ছাদ থেকে চাঙড় খসে পড়তে থাকে! কলকাতা পুরসভার কর্মীরা এ দিন ধস নামা এলাকায় পানীয় জলের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে গিয়ে বিক্ষোভের মুখে পড়েন। তাঁদের বক্তব্য, একেই ধস নেমেছে। জলের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার জন্য খোঁড়াখুঁড়ি হলে বিপদ আরও বাড়বে। বিক্ষোভের মুখে ফিরে যান পুরকর্মীরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE