Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪
ক্রাইম কনফারেন্স

আলিপুর বা নীলরতন প্রসঙ্গের ধারেকাছেই গেলেন না নগরপাল

ফাইলপত্র বগলে ভয়ে ভয়ে বৃহস্পতিবার পুলিশ কমিশনারের ক্রাইম কনফারেন্সে গিয়েছিলেন দুই থানার অফিসার ইন-চার্জ। আশঙ্কা ছিল, অন্য সব থানার ওসি-দের সামনে অপদস্থ হতে হবে। বৈঠক শেষে দেখা গেল আলিপুর এবং এন্টালি থানার দুই ওসি-ই বেরোচ্ছেন হাসি হাসি মুখে। কারণ, এ দিনের বৈঠকে আলিপুর থানায় তৃণমূলের হামলা এবং এনআরএস-কাণ্ড নিয়ে কোনও আলোচনাই হয়নি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২৮ নভেম্বর ২০১৪ ০০:৫৮
Share: Save:

ফাইলপত্র বগলে ভয়ে ভয়ে বৃহস্পতিবার পুলিশ কমিশনারের ক্রাইম কনফারেন্সে গিয়েছিলেন দুই থানার অফিসার ইন-চার্জ। আশঙ্কা ছিল, অন্য সব থানার ওসি-দের সামনে অপদস্থ হতে হবে। বৈঠক শেষে দেখা গেল আলিপুর এবং এন্টালি থানার দুই ওসি-ই বেরোচ্ছেন হাসি হাসি মুখে। কারণ, এ দিনের বৈঠকে আলিপুর থানায় তৃণমূলের হামলা এবং এনআরএস-কাণ্ড নিয়ে কোনও আলোচনাই হয়নি।

লালবাজার সূত্রের খবর, বৈঠকে অন্য নানা বিষয়ে বিভিন্ন থানার ওসি এবং গোয়েন্দা বিভাগের অফিসারদের বকাঝকা করলেও, কেন গত ১৪ নভেম্বর তৃণমূলের হামলার সময়ে আলিপুর থানার এক পুলিশকর্মীকে ফাইল হাতে টেবিলের তলায় আশ্রয় নিতে হয়েছিল— পুলিশ কমিশনার সুরজিত্‌ করপুরকায়স্থ তা জানতে চাননি। কিংবা ১৬ নভেম্বর ভোরে এনআরএস হাসপাতালে হবু চিকিত্‌সকদের হস্টেলে গণপিটুনিতে কোরপান শাহ নামে এক যুবকের মৃত্যুতে অভিযুক্তদের কাউকেই কেন গ্রেফতার করা হল না, তা নিয়েও এন্টালি থানার ওসি-কে জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি হতে হয়নি।

ক্রাইম কনফারেন্সেও ওই দু’টি ঘটনা আলোচনায় না আসায় বিস্মিত পুলিশের অনেক কর্তাই। লালবাজারের এক শীর্ষ কর্তার ব্যাখ্যা, এ বারের বৈঠকে আলোচনার বিষয় ছিল অক্টোবর মাসে শহরে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন অপরাধের বিশ্লেষণ। আলিপুর থানায় ভাঙচুর এবং এনআরএসের হস্টেলে খুন, দু’টিই নভেম্বরের ঘটনা। তাই পরের মাসিক ক্রাইম বৈঠকে ওই দু’টি ঘটনা নিয়ে আলোচনা হওয়ার কথা। কিন্তু কলকাতা পুলিশে দীর্ঘদিন কাজ করে যাওয়া অফিসারেরাই বলছেন, ক্রাইম কনফারেন্সে এ রকম একটা প্রথা থাকলেও, সাম্প্রতিক কোনও গুরুত্বপূর্ণ ঘটনায় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠলে বৈঠকে তা নিয়ে অবশ্যই আলোচনা হতে পারে। অতীতে এমন অনেক নিদর্শন রয়েছে।

লালবাজার সূত্রের খবর, এ দিনের বৈঠকে শহরের বিভিন্ন এলাকায় মোটরবাইক চুরি এবং গাড়ি চুরির ঘটনা বেড়ে যাওয়া নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন সিপি। তখনই যুগ্ম কমিশনার (অপরাধ দমন) শহরে গাড়ি চুরির একটি ঘটনার কিনারা করার বিবরণ দিয়ে বন্দর বিভাগের বিশেষ গোয়েন্দা শাখার (এসএসপিডি) প্রশংসা করেন। ওই ঘটনাটি কিন্তু নভেম্বর মাসের। তাই পুলিশের নিচুতলার অভিযোগ, ইচ্ছে করেই পুলিশ কমিশনার ও তাঁর অনুগত লালবাজারের কর্তারা এ দিন অলিপুর ও এন্টালি থানার ঘটনা দু’টির প্রসঙ্গই তোলেননি।

কলকাতা পুলিশে দীর্ঘদিন ওসি এবং এসি পদে কাটিয়ে যাওয়া অবসরপ্রাপ্ত এক পুলিশ অফিসার বলেন, “আমরা দেখেছি, কমিশনার অনেক সময়ে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উত্থাপন করতে ভুলে গেলে অন্য পদস্থ কর্তারা মনে করিয়ে দেন। সে জন্য ওই পুলিশকর্তাদের ধন্যবাদও জানাতে দেখেছি কোনও কোনও পুলিশ কমিশনারকে। কিন্তু শুনেছি এখন নবান্নের ছোঁয়া লেগেছে লালবাজারেও। ক্রাইম কনফারেন্সের মতো গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকেও অন্য পদস্থ কর্তারা মুখ বুজে থাকেন। সিপি-কে কোনও সুপরামর্শ দেওয়ার সাহসও দেখান না কেউ।”

লালবাজারের একটি সূত্র বলছে, আলিপুর থানায় হামলা এবং এনআরএস-কাণ্ড, দু’টি ঘটনাতেই শাসক দলের ‘চাপ’ রয়েছে পুলিশের উপরে। আলিপুর-কাণ্ডে মূল অভিযুক্ত প্রতাপ সাহা পুরমন্ত্রী ফিরহাদ (ববি) হাকিমের ঘনিষ্ঠ। প্রতাপ এবং তাঁর সঙ্গীদের না ধরার জন্য আলিপুর থানার উপরে চাপ রয়েছে বলে অভিযোগ পুলিশের নিচুতলার। যোগেশ বোরা ছাড়া ঘটনার সঙ্গে প্রত্যক্ষ ভাবে জড়িত আর কাউকেই বৃহস্পতিবার পর্যন্ত গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। ঘটনার তদন্ত ঠিকমতো হয়নি বলে আদালতে দু’বার ভর্ত্‌সনাও করা হয় আলিপুর থানাকে।

পাশাপাশি এনআরএস-কাণ্ডে অভিযুক্ত হবু ডাক্তারদের কাউকেই যাতে গ্রেফতার করা না হয়, তার জন্য তৃণমূলের স্বাস্থ্য সেলের চাপ রয়েছে বলে অভিযোগ। লালবাজারের সূত্রটির খবর, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ হস্টেলের আবাসিকদের নামের তালিকা দিয়েছেন ঘটনার ১০ দিন পরে। এই রাজনৈতিক চাপের জন্যই এখনও কাউকে গ্রেফতার করা যায়নি বলে পুলিশের নিচুতলার অভিযোগ। যেহেতু দু’টি ঘটনাতেই শাসক দলের স্বার্থ জড়িত, সে কারণেই ক্রাইম কনফারেন্সে নভেম্বরের ওই দুটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা নিয়ে আলোচনা হয়নি বলে মনে করছেন অনেকেই।

লালবাজারের কর্তাদের অবশ্য মুখে কুলুপ। তাঁরা বলছেন, “যে বৈঠক খোদ পুলিশ কমিশনার পরিচালনা করেন, সেখানে কী হয়েছে বা হয়নি তা নিয়ে আমরা প্রকাশ্যে মন্তব্য করতে পারি না।” পুলিশ কমিশনার সুরজিত্‌ করপুরকায়স্থ ফোন ধরেননি। জবাব দেননি এসএমএসেরও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE