এখন সমাজমাধ্যমই দর্শকের সঙ্গে তারকাদের সবচেয়ে বড় যোগসূত্র। বেশির ভাগ তারকাই এই মাধ্যমকে ভরপুর ব্যবহার করেন। সমাজমাধ্যমে তাঁদের কয়েক কোটি ‘ফলোয়ার’ অর্থাৎ অনুসরণকারী। সেখানে বিভিন্ন বিষয়ে তাঁরা নিজেদের মতামত রাখেন, কখনও বিভিন্ন ধরনের ছবি-ভিডিয়ো ভাগ করে নেন। এই সমাজমাধ্যমের কারণেই নানা সময়ে তাঁরা সমালোচনারও শিকার হন। চলতি বছরে যেমন ‘কন্ট্রোভার্সি’ তৈরি হয় দেবের কথায়। আবার প্রায় প্রতি মুহূর্তে সমালোচিত হন কাঞ্চন-শ্রীময়ী। এ ছাড়াও তালিকায় রয়েছেন শ্রীলেখা মিত্র থেকে রাজ চক্রবর্তী। ২০২৫ সালে সমাজমাধ্যমে নানা ধরনের অভিজ্ঞতা হয়েছে তাঁদের। এই বছর থেকে শিক্ষা নিয়ে নতুন বছরে প্রবেশের আগে কোন প্রতিজ্ঞা করলেন তারকারা?
বাংলা সিনেদুনিয়ার তারকা অভিনেতা দেব। চলতি বছরে একাধিক কারণে সমালোচিত হয়েছেন তিনি। কখনও তিনি নিজের ছবির সহ-অভিনেত্রী শুভশ্রী গঙ্গোপাধ্যায়কে নিয়ে কথা বলতে গিয়ে সমালোচিত হয়েছেন। আবার কখনও তাঁকে নিয়ে সমালোচনায় সরব হয়েছেন প্রযোজকেরা। নায়কের বিরুদ্ধে সরাসরি ‘রেটিং’ থেকে বক্সঅফিসে লাভের অঙ্কের হিসাবে কারচুপির অভিযোগ এনেছেন তাঁরা। যদিও দেব জানান, কটাক্ষ এখন জীবনধারার অঙ্গ। কটাক্ষ প্রসঙ্গে দেব বলেন, ‘‘রাজ চক্রবর্তী, শুভশ্রী গঙ্গোপাধ্যায়, আমি— আরও অনেকে প্রতি দিন কটাক্ষের শিকার হই। যা বলি, তা-ই নিয়ে কটাক্ষ। আমার উচ্চারণ নিয়ে। আমার কাজ নিয়ে। প্রথম প্রথম প্রতিক্রিয়া জানাতাম। পরে বুঝলাম, সবাই আমাদের ভালবাসবেন, এটা তো হওয়ার নয়। প্রত্যেকে কোনও না কোনও কারণে তাই কটাক্ষের শিকার। যত কম গায়ে মাখবেন, ততই ভাল।’’
দেবের একসময়ের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ও টলিপাড়ার তারকা পরিচালক রাজ চক্রবর্তীকেও ট্রোল্ড হতে হয়েছে। স্ত্রী শুভশ্রীর পাশে দাঁড়িয়ে তাঁর বিরুদ্ধে হওয়া সমালোচনার জবাব দিতে গিয়ে অথবা স্ত্রীর প্রতি ভালবাসার বহিঃপ্রকাশ করতে গিয়ে, আবার কখনও নিজের মতামত জানাতে গিয়ে— নানা কারণেই সমাজমাধ্যমে সমালোচনার শিকার হন রাজ। তবে তিনিও এ সবে বিশেষ পাত্তা দিতে নারাজ। রাজের স্পষ্ট কথা, ‘‘আমাদের জন্য ওঁদের (সমালোচক) সংসার চলছে, চলুক। কারণ, ‘চ্যালেঞ্জ নিবি না’ বললে আজকাল হিতে বিপরীত হচ্ছে।’’
সমাজমাধ্যমে প্রায়ই সমালোচনার শিকার হন অভিনেত্রী শ্রীলেখা মিত্র। কখনও আরজি কর আন্দোলনে সরব হয়ে, আবার কখনও পশুপ্রেমের জন্য কটাক্ষের শিকার হয়েছেন। চলতি বছরেও নিজের আবাসনে একাধিক বার হেনস্থার শিকার হওয়ার অভিযোগ তোলেন অভিনেত্রী। তবে তাঁর মতে, ট্রোল্ড হওয়ার চেয়েও সমাজমাধ্যমের কারণেই লোকে বুঝেছেন যে, শ্রীলেখার কথা একেবারে ফেলে দেওয়া যায় না। অভিনেত্রীর কথায়, ‘‘আসলে সমালোচনা বা কটাক্ষ, কোনও কিছুর জন্য নিজেকে বদলে ফেলব না। কারণ আমি নিজের জন্য, আমার চারপেয়ে সন্তানদের জন্য ও মেয়ের জন্য বাঁচি। তাই সমালোচনা এই ‘আমি’র বদল ঘটাবে না। তবে নতুন বছরে রাগ নিয়ন্ত্রণে রাখব, সেটা প্রতিজ্ঞা করেছি।’’
চলতি বছরে সমাজমাধ্যমে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল অভিনেতা কাঞ্চন মল্লিক ও স্ত্রী শ্রীময়ী চট্টরাজের। একটি পোস্টের মন্তব্যবাক্সে তারকাদম্পতিকে নিয়ে কুমন্তব্য করা হয়েছিল, যে জল গড়ায় পুলিশ পর্যন্ত। সেই সমস্যা মিটলেও কখনও মেয়ে কৃষভির সঙ্গে বাবা কাঞ্চনের মুখের গড়ন, আবার কখনও দম্পতির আদুরে ছবি দেখে কটাক্ষ ধেয়ে আসে প্রায়ই। যদিও কাঞ্চন বলেন, ‘‘আমি নতুন বছরে সকলের জন্য শুধু শুভ কামনা করতে পারি। বাকি আমরা দু’জন, যেমন যা করছিলাম, সেটাই করব। আর নতুন বছরে আরও বেশি করে পত্নীনিষ্ঠ হয়ে থাকব।’’
আরও পড়ুন:
তবে বিধায়ক-অভিনেতার স্ত্রী শ্রীময়ী এতটা নরম হতে নারাজ। তিনি বলেন, ‘‘আসলে ওঁরা (সমালোচক) বিখ্যাত হতে পারেন না। তাই আমাদের ছবি দেখে সেই ক্ষোভ মেটান। এই নতুন বছরে নেতিবাচক লোকজন, যেমন আত্মীয়-পরিজন, বেশ কিছু সহকর্মীকেও জীবন থেকে সরিয়ে দেব। আর যাঁরা আমার মেয়েকে নিয়ে কটুকথা বলছেন, বলুন। তাঁদের বলায় আমার মেয়ে তো বদলে যাবে না। তাই যখন প্রয়োজন মনে করব, ওঁদের জবাব দেব। তত ক্ষণ আমি আমার মতো ভাল আছি।’’