Advertisement
E-Paper

স্বেচ্ছাসেবক নয়, রক্ষী বসাবে সিপিএম

‘মোদী হাওয়া’ ধরে রাখতে মাস কয়েক আগে রাজ্য বিজেপি নেতাদের ডেকে বিজেপি’র সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ বলেছিলেন, ‘বাংলায় চাই ওয়ান বুথ, টেন ইয়ুথ।’ মানে, প্রতি বুথের পিছনে দলের অন্তত দশ জন যুবা-কর্মী থাকুন। গড়ে উঠুক বুথরক্ষা কমিটি। ‘‘বুথ রক্ষা হলেই দলরক্ষা হবে। আর দলরক্ষা হলেই নবান্ন থেকে সরানো যাবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে।’’— দাওয়াই দিয়েছিলেন বিজেপি সভাপতি।

অত্রি মিত্র

শেষ আপডেট: ১৮ এপ্রিল ২০১৫ ০৩:০৪

‘মোদী হাওয়া’ ধরে রাখতে মাস কয়েক আগে রাজ্য বিজেপি নেতাদের ডেকে বিজেপি’র সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ বলেছিলেন, ‘বাংলায় চাই ওয়ান বুথ, টেন ইয়ুথ।’

মানে, প্রতি বুথের পিছনে দলের অন্তত দশ জন যুবা-কর্মী থাকুন। গড়ে উঠুক বুথরক্ষা কমিটি। ‘‘বুথ রক্ষা হলেই দলরক্ষা হবে। আর দলরক্ষা হলেই নবান্ন থেকে সরানো যাবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে।’’— দাওয়াই দিয়েছিলেন বিজেপি সভাপতি।
রাহুল সিংহদের সংগঠন অবশ্য সেই ‘শাহ ফর্মুলা’ বাংলার মাটিতে বাস্তবায়িত করতে পারেনি। বরং পরপর জনমত সমীক্ষা বলছে, কলকাতার বুকে রামের ঘরেই বামের বৃদ্ধি হচ্ছে। আর সেই বামেরা আজ, শনিবার অমিত শাহেরই দেওয়া বুথরক্ষার মন্ত্র আঁকড়ে ভোটরক্ষায় নামতে চলেছে।

কী ভাবে?

সন্তোষপুরের ১০৮ নম্বর ওয়ার্ডের সিপিএম প্রার্থী সুব্রত দাশগুপ্ত জানাচ্ছেন, আজ বুথে বুথে তাঁদের স্বেচ্ছাসেবকের বদলে ‘বুথরক্ষা বাহিনী’ মোতায়েন হবে। সুব্রতবাবুর অভিযোগ, অন্যান্য ওয়ার্ডের মতো তাঁর এলাকাতেও শাসকদল সন্ত্রাসের পরিবেশ সৃষ্টি করে, বুথ কব্জা করে ভোটে জিততে চাইছে। তৃণমূলের সেই প্রয়াস বানচাল করতেই সিপিএমের এ হেন পরিকল্পনা। সেটা ঠিক কী রকম?

সুব্রতবাবু জানান, প্রতি বার ভোটের দিন তাঁদের স্বেচ্ছাসেবকেরা নানা কাজে সাহায্য করেন। যেমন ভোটারদের বুথে নিয়ে আসা, পৌঁছে দেওয়া, ইত্যাদি। ‘‘কিন্তু এ বার তেমন নিরামিষ কাজ হবে না। ওঁরা বুথ রক্ষা করবেন। দিনভর প্রহরায় থাকবেন বুথের সামনে।’’— দাবি করেছেন বাম ছাত্র আন্দোলনের ময়দান থেকে উঠে আসা ওই নেতা।

অর্থাৎ স্বেচ্ছাসেবকেরা পুরোদস্তুর রক্ষীর ভূমিকা নেবেন। বুথ দখল হতে দেখলে প্রতিরোধ গড়বেন। এ বারের পুরভোটে সিপিএম যে খানিকটা প্রতিরোধ গড়ে তোলার চেষ্টা করবে, ক’দিন আগের ব্রিগে়ড সমাবেশে তেমন বার্তা মিলেছিল। শাসকদলের ‘নিরন্তর হামলার’ মুখে বৃহস্পতিবার ফের সেই ‘প্রতিরোধের’ ডাক শোনা গিয়েছে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের মুখে। এক বিবৃতিতে তিনি বলেছেন, ‘‘রাজনৈতিক ভাবে কোণঠাসা তৃণমূল ভয়-ভীতি ও সন্ত্রাসের আবহ তৈরির চেষ্টা করছে।... ভয় দেখিয়ে ক’জনকে রোখা যাবে? ক’টা ঘটনা ঘটানো যাবে? প্রয়োজন সঙ্ঘবদ্ধ ও সর্বাত্মক প্রতিরোধ।’’

ভোটের ঠিক প্রাক্কালে বুদ্ধবাবুর বিবৃতিটি সিপিএমের প্রতিরোধী মেজাজকে প্রত্যয়ী সুরে বেঁধে দিয়েছে বলে দলের রাজ্য নেতাদের দাবি। যদিও বুথ আগলাতে সর্বত্র তাঁরা একই ফর্মুলার আশ্রয় নেওয়ার পক্ষপাতী নন। নেতাদের বক্তব্য, পরিস্থিতি ও সংশ্লিষ্ট এলাকার চরিত্র অনুযায়ী প্রতিরোধের চরিত্র স্থির হবে। দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য রবীন দেবের কথায়, ‘‘সব জায়গায় এক পরিকল্পনা থাকবে না। অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা হবে।’’

তবে পরিস্থিতি যা-ই হোক, তাঁরা কোথাও ‘বিনাযুদ্ধে’ বুথ ছাড়বেন না বলে ঘোষণা করেছেন রবীনবাবু। যদিও সিপিএম নেতাদের দাবি, তাঁদের বুথরক্ষার লড়াই কখনওই হিংসাত্মক হবে না। ‘‘আমরা মারামারি, সংঘর্ষে যাব না। ভোটকেন্দ্রে যাব। ভোট দিতে না-পারলে প্রয়োজনে রাস্তায় শুয়ে পড়ব। প্রতিবাদ হবেই।’’— বলছেন সিপিএমের দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য কান্তি গঙ্গোপাধ্যায়। বেলগাছিয়ার তিন নম্বর ওয়ার্ডে সিপিএম প্রার্থী কণীনিকা ঘোষের গলাতেও এক সুর। তিনি বলেন, ‘‘হাজারো হামলা সত্ত্বেও এত দিন ধরে প্রচার করেছি। এখন বুথ ছেড়ে দেব? মানুষকে সঙ্গে নিয়ে শেষ পর্যন্ত বুথ আঁকড়ে পড়ে থাকব।’’

কান্তি-কণীনিকাদের প্রতিবাদের আঁচ পুরভোটের প্রচার পর্বেও টের পাওয়া গিয়েছে। গড়িয়া-যাদবপুর-মুকুন্দপুরের মতো এলাকায় শাসকদলের ‘আক্রমণ’ ঠেকাতে কান্তিবাবুর নেতৃত্বে অনেক জায়গায় রাত পাহারা দিয়েছেন সিপিএম কর্মী-সমর্থকেরা। নেতাদের দাবি, তাতে ফলও মিলেছে। বস্তুত এ দিন রাতে মুকুন্দপুরে কান্তিবাবুর উপরে যে হামলা হয়েছে, সেটি ‘প্রতিরোধে সন্ত্রস্ত’ তৃণমূলেরই কাজ বলে সিপিএম নেতাদের অভিযোগ।

এ দিকে কলকাতা পুরভোটের মুখে একাধিক জনমত সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে, বিজেপির জনপ্রিয়তার পারদ দিন দিন নামছে। সমীক্ষাগুলির পূর্বাভাস, তৃণমূলকে হারাতে না-পারলেও এ শহরে লোকসভা ভোটের তুলনায় সিপিএমের ভোট বেশ খানিকটা বাড়তে পারে। কিন্তু সিপিএম নেতৃত্বের বক্তব্য, জনমত সমীক্ষা যা-ই বলুক, ভোটের দিন শাসকদলের বুথ-সন্ত্রাস রুখতে না-পারলে কাঙ্খিত ফল মিলবে না।

কাজেই কোমর বেঁধে বুথ বাঁচানোর তোড়জোড়। শাসকপক্ষ যদিও বিরোধী দলের উদ্যোগকে ফুৎকারে ওড়াচ্ছে। ‘‘সিপিএম দিবাস্বপ্ন দেখছে। চার-গাছা মানুষ যাদের সঙ্গে নেই, তারা আবার কী প্রতিরোধ করবে?’’— মন্তব্য এক তৃণমূল নেতার।

তার মানে কি আজ প্রতিরোধ করার পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে?

স্পষ্ট কোনও উত্তর মেলেনি।

trinamool tmc cpm vandalis municipal election Atri Mitra kolkata BJP Rabin Deb
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy