Advertisement
১৮ মে ২০২৪
ক্রাইম কনফারেন্স

‘সোর্স’-এ নিয়ন্ত্রণ কমছে, উদ্বিগ্ন সিপি

প্রথমে গিরিশ পার্কে পুলিশ অফিসারের গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনা, তার পরে হরিদেবপুরের ধুন্ধুমার গুলিবৃষ্টি ও এক জনের খুন হওয়া। অন্ধকার জগতের ‘সোর্স’রা যে পুলিশের হাতের বাইরে চলে যাচ্ছে, দু’টি ঘটনাতেই সেটা প্রকট বলে মেনে নিয়েছেন লালবাজারের কর্তাদের একাংশ। আর এ বার খোদ পুলিশ কমিশনার সুরজিৎ করপুরকায়স্থও সম্ভবত ঠারেঠোরে সেটাই বোঝাতে চাইলেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০৯ অগস্ট ২০১৫ ০০:৪৫
Share: Save:

প্রথমে গিরিশ পার্কে পুলিশ অফিসারের গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনা, তার পরে হরিদেবপুরের ধুন্ধুমার গুলিবৃষ্টি ও এক জনের খুন হওয়া। অন্ধকার জগতের ‘সোর্স’রা যে পুলিশের হাতের বাইরে চলে যাচ্ছে, দু’টি ঘটনাতেই সেটা প্রকট বলে মেনে নিয়েছেন লালবাজারের কর্তাদের একাংশ। আর এ বার খোদ পুলিশ কমিশনার সুরজিৎ করপুরকায়স্থও সম্ভবত ঠারেঠোরে সেটাই বোঝাতে চাইলেন।

লালবাজার সূত্রের খবর, শনিবার ক্রাইম কনফারেন্সে বাহিনীর সব ডিসি, থানার এবং গোয়েন্দা বিভাগের ওসিদের সামনে সিপি বলেন, পুলিশ অফিসারদের ‘পরিচিতরা’ যাতে নিজের নিজের তল্লাটে বাড়াবাড়ি না করে, তা নিশ্চিত করতে হবে। পুলিশকর্তাদের ব্যাখ্যা, অন্ধকার জগতের খবর জোগাড় করতে অপরাধীদের উপরেই ভরসা করতে হয় অফিসারদের। পুলিশি পরিভাষায়, ওই সব দুষ্কৃতীদের ‘সোর্স’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।
কিন্তু সেই সোর্সরা যেন পুলিশের নিয়ন্ত্রণের বাইরে না চলে যায়, সেই বার্তাই এ দিন দিতে চেয়েছেন সিপি। পাশাপাশি শহরের বিভিন্ন গোলমালপ্রবণ এলাকার তালিকা তৈরি করে ব্যবস্থা নিতেও বলেছেন বলে পুলিশ সূত্রে খবর।

কেন হঠাৎ এমন কথা বললেন পুলিশ কমিশনার?

লালবাজারের অন্দরের খবর, কলকাতা পুরভোটের দিন গিরিশ পার্কে পুলিশ অফিসার গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনায় মূল অভিযুক্ত গোপাল তিওয়ারি এবং তার দলের সঙ্গে খোদ গুন্ডাদমন শাখার অফিসারদের একাংশের ঘনিষ্ঠতা ছিল। তার ফলেই গোপালের ফেরার হয়ে যাওয়া এবং তাকে ধরতে একাধিক অভিযান ব্যর্থ হয়েছিল বলে অভিযোগ উঠেছিল গোয়েন্দা বিভাগেরই অন্দরে।

হরিদেবপুর-কাণ্ডে গোলমালে জড়ানো যুযুধান দু’পক্ষের একটি স্থানীয় থানা ও অন্যটি গোয়েন্দা বিভাগের ঘনিষ্ঠ বলেও অভিযোগ উঠেছিল। এ সব কারণেই ‘সোর্স’দের উপর নিয়ন্ত্রণ জোরালো করতে সিপি নির্দেশ দেন বলে মনে করছে পুলিশের একাংশ। লালবাজারের খবর, এলাকা নিয়ন্ত্রণে থানার ওসিদের জনসংযোগ বাড়াতেও নির্দেশ দেন সিপি। তিনি বলেছেন, সাধারণ মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়লে এলাকা নিয়ন্ত্রণে তাঁরা পুলিশের কাজে লাগবেন।

২৮ জুনের ক্রাইম কনফারেন্সে শহর জুড়ে অস্ত্র উদ্ধারের উপরে জোর দিয়েছিলেন সিপি। তার পরেই হরিদেবপুর-সহ শহরের একাধিক জায়গায় গুলি চলে। পুলিশ সূত্রের খবর, এ দিনের বৈঠকে সিপি গোয়েন্দা বিভাগের এক পদস্থ কর্তার কাছে হরিদেবপুরের গ্রেফতার, অস্ত্র উদ্ধার ও ধৃতের সংখ্যা জানতে চান। ওই কর্তা তাঁকে জানান, দুই গোষ্ঠীর চাঁই-সহ মোট ৯ জন গ্রেফতার হয়েছে। উদ্ধার হয়েছে ৮টি আগ্নেয়াস্ত্র। হরিদেবপুর-কাণ্ডে সামনে এসেছিল বেআইনি পানশালার প্রসঙ্গও। এ দিনের বৈঠকে নশালাগুলির উপরে আরও কড়া নজরদারি রাখার নির্দেশ দেন সিপি।

লালবাজার সূত্রের খবর, পুজো এগিয়ে আসছে। তার ব্যবস্থা নিয়ে নির্দিষ্ট বৈঠক এখনও বাকি। তবে এ দিনের বৈঠকেই পুজোর আগে বিভিন্ন এলাকায় নজরদারি বাড়াতে নির্দেশ দিয়েছেন সুরজিৎবাবু।
পুলিশের একাংশের ব্যাখ্যা, গোলমালপ্রবণ এলাকার তালিকা তৈরি করে ব্যবস্থা নেওয়ার যে নির্দেশ কমিশনার দিয়েছেন, তার সঙ্গে পুজোর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির সম্পর্ক আছে।

লালবাজার সূত্রের খবর, শহরে গত এক মাসে বেশ কয়েকটি চুরি হয়েছে। তার মধ্যে কয়েকটি ক্ষেত্রে পরিচারক-পরিচারিকাদের যোগাযোগের তথ্য উঠে এসেছে। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা গিয়েছে, বাড়ির মালিকেরাই পরিচারকদের তথ্য পুলিশকে দেননি। বৈঠকে সিপি অফিসারদের জানান, পরিচারক-পরিচারিকাদের তথ্য দেওয়ার জন্য একটি অনলাইন পোর্টাল চালু করা হচ্ছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE