Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
পুরভোট ২০১৫

অবাধে ঘুরছে জামিনে মুক্ত দাগি অপরাধীরা, উদ্বিগ্ন পুলিশ

পুরভোটের মুখে এমনিতেই ছোটবড় গণ্ডগোল লেগে থাকে পাড়ায় পাড়ায়। তার মধ্যেই বাড়তি উদ্বেগ পুলিশের। পুলিশ সূত্রে খবর, কসবা, বালিগঞ্জ, বেহালা, ঠাকুরপুকুর, টালিগঞ্জ এলাকার খুন, তোলাবাজি-সহ একাধিক অপরাধের দাগি অপরাধীরা জামিনে ছাড়া পেয়ে এলাকায় ফিরে দলবল নিয়ে ঘোরাফেরা শুরু করেছে। এক পুলিশকর্তার মতে, দাগি অপরাধীদের অধিকাংশই জেল থেকে বেরিয়ে আসার পরে নিজের জায়গা ফিরে পাওয়ার চেষ্টা করে।

শুভাশিস ঘটক
শেষ আপডেট: ২৭ মার্চ ২০১৫ ০০:০১
Share: Save:

পুরভোটের মুখে এমনিতেই ছোটবড় গণ্ডগোল লেগে থাকে পাড়ায় পাড়ায়। তার মধ্যেই বাড়তি উদ্বেগ পুলিশের।

পুলিশ সূত্রে খবর, কসবা, বালিগঞ্জ, বেহালা, ঠাকুরপুকুর, টালিগঞ্জ এলাকার খুন, তোলাবাজি-সহ একাধিক অপরাধের দাগি অপরাধীরা জামিনে ছাড়া পেয়ে এলাকায় ফিরে দলবল নিয়ে ঘোরাফেরা শুরু করেছে। এক পুলিশকর্তার মতে, দাগি অপরাধীদের অধিকাংশই জেল থেকে বেরিয়ে আসার পরে নিজের জায়গা ফিরে পাওয়ার চেষ্টা করে। এলাকায় পায়ের তলার মাটি জোগাড় করতে চাই রাজনৈতিক ক্ষমতা। সেই উদ্দেশ্যে পুর-নির্বাচনকে হাতিয়ার করে শাসক বা বিরোধী দলের ঘনিষ্ঠ হতে তারা ফের দলবল জুটিয়ে পুরনো চেহারায় ফিরবে কি না, সেটাই চিন্তায় ফেলছে লালবাজারকে। তাই শহর ও শহরতলি সর্বত্রই জামিনে ছাড়া পাওয়া দাগি অপরাধীদের উপরে নজরদারি শুরু করছে পুলিশ।

লালবাজার সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই দাগিদের মামলা এখনও বিচারাধীন। ইতিমধ্যে জামিনে মুক্ত হয়ে তারা এলাকায় ফিরে আসায় ফের আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন সাধারণ মানুষ। এর পাশাপাশি, পুর-নির্বাচনে ওই দাগীদের অবাধ বিচরণে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উপর প্রভাব পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন খোদ পুলিশকর্তারাই। সেই কারণেই তাদের গতিবিধির উপরে কড়া নজর রাখা প্রয়োজন বলে মনে করছেন তাঁরা।

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, সম্প্রতি কসবা এলাকার দাগি অপরাধী তারক দাস, মুন্না পাণ্ডে, বালিগঞ্জে ত্রিলোকী প্রসাদ, ঠাকুরপুকুর-বেহালায় যিশু জৈন, চিংড়ি, বম্বে, বরুণ এবং টালিগঞ্জ এলাকায় শেখ বিনোদ জামিনে মুক্ত হয়ে এলাকায় ফিরেছে। ফের দলবল জুটিয়ে তাদের পাড়ায় ঘুরতে দেখা যাচ্ছে বলে স্থানীয় সূত্রে খবর। লালবাজারের এক পুলিশকর্তার কথায়, ওই সব দাগি দুষ্কৃতীরা ফিরে আসায় ফের সন্ত্রাসের পরিবেশ ফিরে আসার আশঙ্কায় রয়েছেন এলাকার মানুষ। মৌখিক ভাবে ও গোপনে তাঁরা এ নিয়ে অভিযোগও দায়েরও করেছেন।

অন্য দিকে, পুর-নির্বাচনে সন্ত্রাস সৃষ্টির উদ্দেশ্যে শাসক দল এই দাগি অপরাধীদের ব্যবহার করার পরিকল্পনা করছে বলে অভিযোগ তুলেছেন বিরোধীরা। ওই সব দাগি ও তাদের দলবল শাসক দলের নেতাদের সঙ্গে ওঠাবসা করা শুরু করেছে বলেও তাদের অভিযোগ।

সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য সুজন চক্রবর্তী বলেন, “পুর-নির্বাচনে শাসক দল বুথ দখল ও সন্ত্রাস সৃষ্টির জন্য এই অপরাধীদের দলবলকে ব্যবহার করবে বলে পরিকল্পনা করেই রেখেছে। সাধারণ মানুষকে এখন থেকেই ভয় দেখানো শুরু করেছে ওই দাগিরা। বুথ লুঠের পরিস্থিতি সৃষ্টি করছে শাসক দল।” প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী বলেন, “গত লোকসভা নির্বাচনে ফলাফল অনুযায়ী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বুঝে গিয়েছেন, কলকাতা শহরে লড়াই কঠিন। সেই কারণে অনুগামী নেতাদের মাধ্যমে এই দাগিদের মাঠে নামিয়ে নির্বাচনের দিন সন্ত্রাস করে ভোট লুঠ করবেন।”

বিজেপির রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহও বলেন, “শহরের মানুষ বিজেপির দিকেই ঝুঁকে রয়েছে। সেই কারণে সন্ত্রাস সৃষ্টি করে নির্বাচন করা ছাড়া কোনও উপায় নেই। তৃণমূলের দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গিয়েছে। এখন দাগি অপরাধীরাই একমাত্র ভরসা।”

অভিযোগ অস্বীকার করে তৃণমূল নেতা তথা আইনজীবী বৈশ্বানর চট্টোপাধ্যায় বলেন, “বিচার ব্যবস্থায় ওরা জামিনে মুক্ত। ওই দাগিদের সঙ্গে শাসক দলের কোনও যোগ নেই। অপরাধ হলে আইনানুগ পদক্ষেপ করবে প্রশাসন। বিরোধীরা সব ক্ষেত্রেই ভূত দেখছেন।”

কিন্তু পুর-নির্বাচনের আগে ওই অপরাধীদের নিয়ন্ত্রণে কী ভাবছেন লালবাজারের কর্তারা?

এক পুলিশকর্তা জানিয়েছেন, নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনামা ও ভারতীয় দণ্ডবিধির ১১০ ধারায় ওই দাগিদের গতিবিধির উপরে নজরদারির ব্যবস্থা হয়েছে। প্রয়োজনে থানায় হাজিরার নির্দেশও দেওয়া হবে। কোনও ভাবে অপরাধে জড়িয়ে পড়লে গ্রেফতারও করা হতে পারে।

কলকাতা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (অপরাধ দমন) পল্লবকান্তি ঘোষ বলেন, “সব অপরাধীর গতিবিধিই খেয়াল রাখা হচ্ছে। প্রয়োজন অনুযায়ী আইনি পদক্ষেপ করা হবে। নাগরিকদের নিরাপত্তা যাতে কোনও ভাবে বিঘ্নিত না হয়। সেই বিষয়ে কঠোর নজরদারি রয়েছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE