Advertisement
E-Paper

বৃষ্টি নেই, বাঁধভাঙা উৎসব-যাপনে কালীপুজোর রাতকে টেক্কা দীপাবলির

সন্ধ্যার পরে ওই দুই জায়গাতেই আলাদা করে যান নিয়ন্ত্রণ করতে হয় পুলিশকে। তবে বিকেল পর্যন্ত ফাঁকা থাকলেও রাত যত বেড়েছে, ততই মণ্ডপে ভিড় বেড়েছে খিদিরপুরে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৬ অক্টোবর ২০২২ ০৮:০৬
উৎসাহ: পায়োনিয়র অ্যাথলেটিক ক্লাবের সামনে দর্শনার্থীদের ভিড়। মঙ্গলবার, বারাসতে। ছবি: সুদীপ ঘোষ।

উৎসাহ: পায়োনিয়র অ্যাথলেটিক ক্লাবের সামনে দর্শনার্থীদের ভিড়। মঙ্গলবার, বারাসতে। ছবি: সুদীপ ঘোষ।

ঝড়-বৃষ্টির আতঙ্কে কালীপুজোর দিনটা কারও কেটেছে বাড়িতে, কেউ আবার গোটা দিনই পাড়ায়। কিন্তু দীপাবলিতে সেই আশঙ্কা কিছুটা কমতেই পুজোমুখী জনতার ঢল নামল রাস্তায়। দুপুর থেকেই মণ্ডপে মণ্ডপে ভিড় দেখে উৎসাহী পুজো উদ্যোক্তারাও। কেউ তড়িঘড়ি আয়োজন করে ফেললেন জলসার, কেউ খাওয়াদাওয়ার। এর মধ্যেই চলল রাত পর্যন্ত বক্স বা মাইক বাজিয়ে শব্দ-তাণ্ডব। ট্র্যাফিক-বিধি বলবৎ করতেও নাজেহাল হতে হল পুলিশকে। যা নিয়ে দিনের শেষে লালবাজারের এক পুলিশকর্তার মন্তব্য, ‘‘কালীপুজোর রাত বরাবরই পুলিশের কাছে বড় চ্যালেঞ্জ। সোমবার তবু কাজ কিছুটা সহজ করেছিল ঝড়-বৃষ্টির আতঙ্ক। মঙ্গলবার তার কিছুই না থাকায় সেই পুরনো পুজোর শহর। বাজির আওয়াজ বলে আমায় দেখ, মাইক বলে আমায় দেখ!’’

এ দিন দুপুর থেকেই ভিড় জমতে থাকে দমদম রোড এবং আমহার্স্ট স্ট্রিটের মতো কালীপুজোর জন্য বিখ্যাত বিভিন্ন এলাকায়। সন্ধ্যার পরে ওই দুই জায়গাতেই আলাদা করে যান নিয়ন্ত্রণ করতে হয় পুলিশকে। তবে বিকেল পর্যন্ত ফাঁকা থাকলেও রাত যত বেড়েছে, ততই মণ্ডপে ভিড় বেড়েছে খিদিরপুরে। অনেকেই তড়িঘড়ি এই সব এলাকার মণ্ডপ ঘুরে উত্তর শহরতলি বা বারাসতের দিকে প্রতিমা দর্শনের জন্য বেরিয়ে যেতে তৎপর ছিলেন। খিদিরপুরেই একটি মণ্ডপের সামনে কলেজপড়ুয়া শুভম দে বললেন, ‘‘গত কাল বৃষ্টির ভয়ে কিছুই দেখা সম্ভব হয়নি। এ বার এক দিনই সময়। সব এর মধ্যেই দেখা শেষ করতে হবে। শুধু রাতের দিকে বৃষ্টি না এলেই হয়।’’ দমদম রোডে ভিড় ঠেলে প্রতিমা দর্শনের জন্য এগোনো সুমেধা সরকার আবার বললেন, ‘‘হাতে ছাতা নিয়ে বেরিয়েছি। ছেলের রেন কোটও সঙ্গে রয়েছে। দুর্গাপুজোতেও বৃষ্টিতে প্রতিমা দেখার অভিজ্ঞতা রয়েছে। ফলে সে ভাবে কোনও সমস্যা হবে না।’’ দুর্গাপুজোর কথা মনে রেখেই হয়তো কালীপুজো দেখতে বেরোনো জনতার হাতে হাতে ছিল ছাতা। অনেকেরই দাবি, এমন জুতো পরে বেরিয়েছেন, যা ভিজলেও সমস্যা নেই। আমহার্স্ট স্ট্রিটের এক পুজোমুখী দর্শক আবার বললেন, ‘‘ঠাকুর দেখা, ভাল কোথাও খাওয়া, সবই রয়েছে পরিকল্পনায়। তাই বৃষ্টি নিয়ে বিশেষ ভাবছি না। যতটা হয় দেখব। এর পরে বৃষ্টি এলেই কোথাও খেতে ঢুকে যাব।’’

তবে পুজোর উদ্যোক্তাদের দাবি, কালীপুজোর রাত ৯টা থেকেই বৃষ্টি কমতে শুরু করার পরে মণ্ডপে মণ্ডপে লোক বাড়ছিল। রাতের দিকে যা আরও বাড়ে। অনেকেই বৃষ্টিহীন আকাশ দেখে দেরি করে বেরিয়ে, ভোগের খিচুড়ি খেয়ে বাড়ি ফিরেছেন। সোমেন মিত্রের (ছোড়দা) পুজো নামে পরিচিত, আমহার্স্ট স্ট্রিট সাধারণ শ্রীশ্রী কালীপুজো কমিটির উদ্যোক্তা বাদল ভট্টাচার্য যেমন বললেন, ‘‘বৃষ্টির ভয়ে একটা বড় অংশের মানুষ পথে বেরোননি। তাতে ফাঁকায় ফাঁকায় দারুণ ভাবে পুজোটা করা গিয়েছে। তবে লোক না হওয়ায় মণ্ডপের আশপাশের খাবারের দোকানগুলো খুব ভুগেছে। যদিও দীপাবলির রাতের ভিড় দেখে মনে হয়, তাদের পুষিয়ে গিয়েছে।’’ মধ্য কলকাতার সীতারাম ঘোষ স্ট্রিটের নব যুবক সঙ্ঘের (ফাটাকেষ্টর পুজো নামেই বেশি পরিচিত) পুজো উদ্যোক্তা সুকৃতি দত্তের আবার দাবি, ‘‘বৃষ্টির ভয়ে এক দিন লোকে বাড়িতে কাটিয়েছেন। এ দিন পথে বেরিয়ে আরও দ্বিগুণ আনন্দ করেছেন। এটাই বা কম কী?’’ এর পরে তড়িঘড়ি মণ্ডপের দিকে যাওয়ার পথে তাঁর মন্তব্য, ‘‘আমাদের আজ জলসা রয়েছে। মোট ১৭ জন শিল্পী। নামী অনেকেই তালিকায় রয়েছেন। করোনার পরে আবার এত ভাল পুজো হচ্ছে। রাত পর্যন্ত আজ উৎসব আছে।’’ একই রকম জলসার দাবি চেতলা প্রদীপ সঙ্ঘ, খিদিরপুর সর্বশ্রী সঙ্ঘ বা হরিদেবপুর নেতাজি স্পোর্টিং ক্লাবের মতো বহু পুজো কমিটির। সেখানকার উদ্যোক্তাদের দাবি, ‘‘গত কাল কমিটির সদস্যদের সময় কেটেছে মণ্ডপ আগলে। এ দিন তাঁদের খুশি করার জন্য কিছু না কিছু করতেই হবে।’’

এই খুশি হওয়ার তাড়নাতেই বহু জায়গায় রাত পর্যন্ত হওয়া জলসায় তারস্বরে মাইক বেজেছে বলে অভিযোগ। পুলিশি নির্দেশ উড়িয়ে ফেটেছে দেদার শব্দবাজিও। রাস্তার মোড়ে মোড়ে দেখা গিয়েছে বাইকবাহিনীর দাপট। হেলমেটহীন অনেককেই বাগে আনতে রীতিমতো নাজেহাল হয়েছে পুলিশ। কলকাতা পুলিশ সূত্রেই খবর, অভব্য আচরণের জন্য গ্রেফতার করা হয়েছে ৪৬৮ জনকে। কলকাতা ট্র্যাফিক পুলিশও ব্যবস্থা নিয়েছে ৩২৫ জনের বিরুদ্ধে। এর মধ্যে সব চেয়ে বেশি মামলা হয়েছে হেলমেট না পরার কারণে। প্রায় ৮৭টি ক্ষেত্রে। যা নিয়ে কলকাতা পুলিশের এক কর্তার মন্তব্য, ‘‘বিধি ভাঙাই যেন উৎসব-যাপনের সমার্থক হয়ে দাঁড়াচ্ছে। বৃষ্টি না বাঁচালে হয়তো দীপাবলিকে ছাপিয়ে যেত কালীপুজোর রাত।’’

kali Puja 2022 Cyclone Sitrang
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy