Advertisement
E-Paper

হারিয়েছে বেশ কিছু, রয়েছে অনেক

লোহার গেটওয়ালা বাড়িটার সামনে গোলাপি বুগনভিলিয়া গাছে ফুটে থাকা ফুলগুলো এলোমেলো হাওয়ায় আপন ছন্দে দোল খায়। কিছুটা দূরে কাঠের কারখানায় ছেনি হাতুড়ি ঠুকঠাক শব্দ তাল মেলায় যানবাহনের আওয়াজে।

সুভাষচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৫ মার্চ ২০১৭ ০১:৩১
পথচলা: সন্ধ্যা নেমেছে স্কট লেনে। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক

পথচলা: সন্ধ্যা নেমেছে স্কট লেনে। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক

লোহার গেটওয়ালা বাড়িটার সামনে গোলাপি বুগনভিলিয়া গাছে ফুটে থাকা ফুলগুলো এলোমেলো হাওয়ায় আপন ছন্দে দোল খায়। কিছুটা দূরে কাঠের কারখানায় ছেনি হাতুড়ি ঠুকঠাক শব্দ তাল মেলায় যানবাহনের আওয়াজে। দুপুর গ়ড়িয়ে বিকেল হতেই স্কুল ফেরত এক দল কচিকাঁচার হুল্লোড় আর বাজারের কোলাহল ধরে রেখেছে আমার পাড়া স্কট লেনের নিজস্ব ছবিটা।

পাড়ার ব্যাপ্তি আমহার্স্ট স্ট্রিট থেকে শুরু হয়ে বৈঠকখানা রোড প্রর্যন্ত। লেডি ডাফরিন হাসপাতালের পাশের রাস্তাটা হল স্কট লেন। এখন পাড়ার নাম বদলে হয়েছে রাজকুমার চক্রবর্তী সরণি। তবে স্কট লেন নামটাই এখনও বেশি পরিচিত। তিনি ছিলেন বঙ্গবাসী কলেজের ইংরেজির অধ্যাপক। আমার কাছে পাড়া মনেই একটা সমন্বয়, একটা সম্পর্ক। সেখানে জাতি-ধর্ম, উচ্চ-নীচ, ধনী-দরিদ্র কোনও প্রভাব ফেলতে পারে না।

১৯৬০ থেকে এ পাড়ায়। অতীতে পাড়াটা ছিল ছবির মতো। সন্ধ্যা নামতেই জ্বলত গ্যাসবাতি। একে একে আসত ঘুগনিওয়ালা, কুলফিমালাই আর চানাচুরওয়ালা। এক দিন তারা সব হারিয়ে গেল। সেই সঙ্গে হারিয়ে গেল অতীতের কত মুখ।

এখনও সব বাড়ি। গায়ে গায়ে দেওয়াল থাকায় তৈরি হয়নি কোনও বহুতল। কাছাকাছি যে ক’টি ফ্ল্যাট তৈরি হয়েছে, সেখানেও এসেছেন মূলত আশেপাশের এলাকার মানুষ। তাই পাড়ার চরিত্রে খুব একটা পরিবর্তন আসেনি। \পড়শিদের মধ্যে সম্পর্কের উষ্ণতা আজও রয়েছে। হারায়নি মানুষে মানুষে টান। সময়ের প্রভাবে একে অপরের বাড়ি যাওয়ার অভ্যাসটা কমলেও যোগাযোগটা কিন্তু কমেনি। সেটা বোঝা যায় বিপদ-আপদে বা কোনও সমস্যায় যখন সকলকে এক ডাকে পাশে পাওয়া যায়। পাড়ার এক দিকে রয়েছে নাপিতবাগান বস্তি। সেখানে মূলত অবাঙালিদের বসবাস। তবু পাড়ার মানুষের সঙ্গে রয়েছে আন্তরিক সুসম্পর্ক। যে কোনও সমস্যায় তাঁদেরও পাশে পাওয়া যায়।

কাছেই বাজার, তাই পাড়ার মধ্যে কিছু কিছু আবর্জনা থেকেই যেত। এখন পুর উদ্যোগে নিয়মিত জঞ্জাল সাফাই হওয়ায় আগের চেয়ে পাড়াটা পরিষ্কার থাকছে। তবে কিছু মানুষের নাগরিক সচেতনতা না ‌থাকায় গভীর রাতে প্লাস্টিক-বন্দি আবর্জনা রাস্তায় আছড়ে পড়ে। তেমনই বদলায়নি কিছু মানুষের দেওয়ালের গায়ে পানের পিক ফেলার অভ্যাসটা। এ সব কারণেই পাড়াটা যতটা পরিচ্ছন্ন থাকা উচিত, ততটাও থাকে না। তবুও সময়ের সঙ্গে এসেছে উন্নয়ন। বসেছে জোরালো আলো। বর্ষায় আগে যতটা জল জমত, সেটা আগের চেয়ে অনেকটা কমেছে।

দেখতে দেখতে পাড়া সংলগ্ন অঞ্চলটাই বাজার হয়েছে। সেই প্রভাব পড়েছে পাড়ায়। এখানে পার্কিং সমস্যা প্রকট। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত পাড়ার মধ্যে গাড়ি নিয়ে ঢুকতে বেরোতে সমস্যা হয়। তবে বাজারিরা সব সময়ে সাহায্য করেন। পাড়ার পুজোটা এখনও সকলকে এক সঙ্গে ধরে রেখেছে। পাড়ার মানুষ পুজোটার সঙ্গে এখনও একাত্ম হয়ে রয়েছেন। কমেছে দায়িত্বশীল কাজ করার লোক। হয় বেশ কিছু কালীপুজোও। কাছেই কোলে মার্কেট আর বৈঠকখানা বাজার। ভোর থেকে মুটে ও ভ্যান-রিকশার যাতায়াত লেগে থাকে। তাই সারা রাত লোক চলাচল করায় পাড়াটা রাতেও নিরাপদ থাকে এ পাড়ার ভৌগলিক অবস্থান এবং যোগাযোগ ব্যবস্থা খুবই ভাল। কাছেই শিয়ালদহ, ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া মোড়, বৌবাজার আর কিছু দূরে মেট্রো।

এখনও এ পাড়ায় এবং আশপাশে আছেন কয়েক জন ডাক্তারবাবু, যাঁরা রাত-বিরেতে প্রয়োজন হলে রোগীর বাড়ি যান। তাঁদের মধ্যে প্রবীণ চিকিৎসক প্রণব ভৌমিক এবং তপন মুখোপাধ্যায়ের নাম উল্লেখ্য। হারিয়ে যাচ্ছে সাংস্কৃতিক পরিবেশটা। এক সময়ে এখানেই অনুষ্ঠানে এসেছেন ধনঞ্জয় ভট্টাচার্য থেকে প্রতিমা বন্দ্যোপাধ্যায়।

লেখক আইনজীবী

Kolkata Memory Scott Lane
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy