E-Paper

উৎসবে নিশানায় প্রবীণরা, ব্যাঙ্কে টাকা ঢুকলেই ফোন প্রতারকদের

পুজোর মধ্যে শহরের একাধিক প্রবীণ এমন সাইবার প্রতারণার শিকারের অভিযোগ জানিয়েছেন বলে পুলিশের দাবি। সূত্রের খবর, তদন্তে নেমে একটি নির্দিষ্ট পদ্ধতি লক্ষ করা গিয়েছে।

নীলোৎপল বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ২১ অক্টোবর ২০২৪ ০৮:০৫
—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি। Sourced by the ABP

এক জনের ডায়ালিসিস চলছে। অন্য জন চোখে ভাল দেখেন না। এ বারের দুর্গাপুজোয় তবু দু’জনে একসঙ্গে প্রতিমা দর্শনের আশা করেছিলেন। এই আশা তৈরি হয়েছিল পুজোর দিনকয়েক আগে একটি সংস্থার নাম করে আসা ফোনের সূত্রে। ফোনের অন্য প্রান্ত থেকে বলা হয়, প্রবীণদের প্রতিমা দর্শন করাতে এক প্রকল্পের সূচনা করেছে ওই সংস্থা। যার সুবিধায় বাড়িতেই গাড়ি চলে যাবে। প্রতিমা দর্শন করিয়ে পৌঁছে দেওয়া হবে বাড়িতে। বড় কয়েকটি পুজোর প্রতিমা দর্শন করিয়ে খাওয়ানো হবে কোনও বনেদি বাড়িতে। হুইলচেয়ার, ডাক্তার, অ্যাম্বুল্যান্স সব থাকবে। কিন্তু সেই আশা পূরণ হয়নি। বরং প্রতিমা দর্শনের ফাঁদে পা দিয়ে প্রতারকদের খপ্পরে পড়ে বেহালার এক প্রবীণ দম্পতির খোয়া গিয়েছে ব্যাঙ্কে গচ্ছিত আড়াই লক্ষ টাকা।

বৃদ্ধ ফোনে বললেন, ‘‘ছেলেরা দেখে না। যা পেনশন পাই, তাই দিয়েই চলে। যা শারীরিক অবস্থা, তাতে কবে কে আছি, কে নেই! সংস্থাটির ফোন পেয়ে এই সব ভেবেই এ বার ঠাকুর দেখার ইচ্ছে হয়। ফোনে বলা হয়েছিল, দু’জনের জন্য বুকিং বাবদ ১৫০০ টাকা দিতে হবে। এ জন্য একটা মোবাইল অ্যাপ ফোনে নামিয়ে ফর্ম পূরণ করতে হবে। আর সেটা করার কয়েক মুহূর্তেই সব টাকা কেটে নিয়েছে।’’ ধরে আসা গলায় বৃদ্ধ বলেন, ‘‘পুজো মিটলেই চিকিৎসার খরচ লাগবে। তাই একটা ফিক্সড ডিপোজ়িট ভাঙিয়েছিলাম। সেটাই সেভিংস অ্যাকাউন্টে রাখা ছিল।’’

পুজোর মধ্যে শহরের একাধিক প্রবীণ এমন সাইবার প্রতারণার শিকারের অভিযোগ জানিয়েছেন বলে পুলিশের দাবি। সূত্রের খবর, তদন্তে নেমে একটি নির্দিষ্ট পদ্ধতি লক্ষ করা গিয়েছে। যেখানে দেখা যাচ্ছে, প্রতারকদের এমন ফোন তাঁরাই বেশি পেয়েছেন, যাঁদের সেভিংস অ্যাকাউন্টে কিছু টাকা রয়েছে। সদ্য ফিক্সড ডিপোজ়িট ভাঙিয়ে বা অন্য সূত্রে যাঁদের সেভিংস অ্যাকাউন্টে টাকা ঢুকেছে, তাঁদের নিশানা করা হয়েছে বেশি।

এমনও জানা যাচ্ছে, ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের নম্বর, ডেবিট কার্ডের নম্বর, অ্যাকাউন্টের মালিকের সম্পর্কে সব তথ্য বলে দেওয়ার পাশাপাশি প্রতারকেরা এ-ও জানিয়ে দিচ্ছেন, সংশ্লিষ্ট ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ঠিক কত টাকা রয়েছে। দিন কয়েকের মধ্যে কোথা থেকে এবং কত টাকা ওই অ্যাকাউন্টে ঢুকেছে, সেই তথ্যও বলা হচ্ছে পুঙ্খানুপুঙ্খ।

এমনই একটি প্রতারণার কথা জানালেন বেলেঘাটার বাসিন্দা এক প্রৌঢ়। তাঁর দাবি, বহু দিন আগে তাঁর করা একটি ফিক্সড ডিপোজ়িটের সময় শেষ হয় পুজোর ঠিক আগে। পরিকল্পনা ছিল, পুজো মিটলে সেই টাকা ফের ফিক্সড করে রাখার। কিন্তু তার মধ্যেই ওই নির্দিষ্ট ব্যাঙ্কের নামে ফোন আসে তাঁর কাছে। প্রৌঢ় বলেন, ‘‘আমার ছেলের নাম করা হয়। বলা হয়, ফিক্সড ডিপোজ়িটের যে টাকা আমার সেভিংস অ্যাকাউন্টে রয়েছে, সেখান থেকে আমি ছেলেকে ৮০ হাজার টাকা দিয়েছি কিনা। এমন কিছুই আমি দিইনি বলার পরে, আমার অ্যাকাউন্ট সংক্রান্ত তথ্য ফোনেই নিশ্চিত করানো হয়। আমার সম্পর্কে সব তথ্য ঠিকঠাক জানাচ্ছে দেখে সন্দেহ হয়নি। এর পরেই অ্যাকাউন্ট সুরক্ষিত করার একটি অ্যাপ নামাতে বলে প্রায় সাড়ে ৬ লক্ষ টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে। পরে দেখেছি, আমার পাসবুকের সব তথ্য ওই প্রতারকের জানা ছিল। আমার সঙ্গে ছেলের পুরনো লেনদেনের তথ্য দেখেই ফাঁদ পাতা হয়েছিল।’’

‘ইন্ডিয়ান স্কুল অব অ্যান্টি হ্যাকিং‌’-এর অধিকর্তা তথা সাইবার গবেষক সন্দীপ সেনগুপ্ত বললেন, ‘‘তথ্য চুরি হচ্ছে এবং তা বিক্রি হচ্ছে। ফলে ধরে নিতে হবে, শেষ মুহূর্তে ফোনে যে ওটিপি আসছে, সেটি ছাড়া সব কিছুই প্রতারকের হাতের মধ্যে রয়েছে। কোনও ভাবেই ফোনে কোনও অচেনা অ্যাপনামানো যাবে না। নিজের ফোনে আসা ওটিপি কাউকেই বলা যাবে না।’’ এর পরে সন্দীপ বলেন, ‘‘ডিজিটাল পার্সোনাল ডাটা প্রটেকশন অ্যাক্ট কার্যকর না হওয়া পর্যন্ত এর কোনওটিই রোখা যাবে না।’’ লালবাজারের সাইবার অপরাধ সংক্রান্ত বিভাগের এক কর্তা বললেন, ‘‘দেখা যাচ্ছে, বয়স্করাই মূলত এই মুহূর্তে সাইবার প্রতারকদের নিশানায় রয়েছেন। দ্রুত বয়স্কদের মধ্যে সচেতনতা প্রচারের জন্য ক্লাস করানোর ভাবনাচিন্তা করা হচ্ছে।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Money Fraud Durga Puja 2024

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy