মাসকয়েক আগে চিকিৎসকের অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিতে গিয়ে এ ভাবেই প্রতারণার শিকার হয়ে লালবাজারের দ্বারস্থ হয়েছিলেন সার্ভে পার্ক থানা এলাকার এক বাসিন্দা। প্রতীকী ছবি।
মেয়ের দিনকয়েক ধরে জ্বর। তাই অনলাইনে চিকিৎসকের খোঁজ করছিলেন এক মহিলা। ইন্টারনেটে পাওয়া নম্বরে ফোন করায় প্রথমে কোনও সদুত্তর না মিললেও পরে তাঁকে ফোন করে বুকিংয়ের জন্য একটি লিঙ্ক পাঠানো হয় বলে অভিযোগ। লিঙ্কে ক্লিক করে ১০ টাকা দিলেই অ্যাপয়েন্টমেন্ট পেয়ে যাবেন বলেও জানানো হয়। অভিযোগ, এর পরে লিঙ্কে ক্লিক করতেই অ্যাকাউন্ট থেকে গায়েব হয়ে যায় প্রায় ৪০ হাজার টাকা।
মাসকয়েক আগে চিকিৎসকের অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিতে গিয়ে এ ভাবেই প্রতারণার শিকার হয়ে লালবাজারের দ্বারস্থ হয়েছিলেন সার্ভে পার্ক থানা এলাকার এক বাসিন্দা। সাম্প্রতিক সময়ে চিকিৎসকের অ্যাপয়েন্টমেন্ট করানোর নামে শহরে আরও এমন প্রতারণার ঘটনার অভিযোগ সামনে এসেছে। চিকিৎসক অপূর্ব ঘোষের অ্যাপয়েন্টমেন্ট করিয়ে দেওয়ার নামেও সাইবার-প্রতারণা ঘটেছে বলে অভিযোগ। উঠে এসেছে একাধিক ব্যক্তির অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগও। বিষয়টি কানে আসতেঅপূর্ববাবু নিজেই লালবাজারে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছিলেন। শুধু তা-ই নয়, সম্প্রতি প্রতারণা বন্ধ করার নামে, কখনও আবার জনপ্রিয় ওয়েবসাইট থেকে তাঁর নাম সরাতে খোদ চিকিৎসক অপূর্ব ঘোষকেই ফোন করে লিঙ্ক পাঠানো হচ্ছে বলে অভিযোগ। বিষয়টি তিনি ইতিমধ্যেই লালবাজারে জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘আমি কোনও দিন ওই ওয়েবসাইটে নিজের নম্বর দিয়ে প্রচার চাইনি। এমনকি, আমার কোনও সম্মতিও ছিল না। এখন ওয়েবসাইট থেকে নাম তোলানোর নামে প্রতারণার ফাঁদ পাতা হচ্ছে।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘লালবাজারে অভিযোগ জানানোর পর থেকে এই ফোন আসা শুরু হয়েছে। আমাকে ফোন করে সব সময়ে যে বাংলায় কথা বলা হচ্ছে, তা নয়। মাঝেমধ্যে বিভিন্ন নম্বর থেকে ফোন করে আধা হিন্দিতে কথা বলার পরে একাধিক লিঙ্ক পাঠানো হচ্ছে। এই ভাবে যে নতুন করে কোনও বিপদ বাড়বে না, কে বলতে পারে!’’
সূত্রের খবর, অনলাইনে একাধিক পরিচিত চিকিৎসকের অ্যাপয়েন্টমেন্ট করানোর নামে প্রতারণার বেশ কয়েকটি ঘটনা সামনে এসেছে গত কয়েক মাসে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই অনলাইনে পাওয়া নম্বরে ফোন করে বুক করতে গিয়ে প্রতারিত হতে হয়েছে বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা। কখনও বুকিং ফি-র নামে, আবার কখনও রেজিস্ট্রেশনের নামে লিঙ্ক পাঠিয়ে টাকা হাতানো হয়েছে বলে অভিযোগ। শুধু তা-ই নয়, এক চিকিৎসক বসবেন না জানিয়ে অন্য চিকিৎসকের অ্যাপয়েন্টমেন্ট বুকিংয়ের নামেও প্রতারণার অভিযোগ উঠেছে।
এই ধরনের প্রতারণা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন শহরের নাগরিকদের একটি বড় অংশ। বেলেঘাটার বাসিন্দা সায়ন্তী সাহা বলেন, ‘‘সব সময়ে সব চিকিৎসকের নম্বর থাকে না। আর তা ছাড়া, আপৎকালীন পরিস্থিতিতে নম্বর যাচাইয়ের সুযোগও থাকে না। প্রতারণার এই নয়া ছক ভয় ধরাতে বাধ্য।’’ তবে, সাইবার-বিশেষজ্ঞদের একাংশ জানাচ্ছেন, গোটাটাই আসলে সাইবার-প্রতারণার নয়া ছক। সাধারণ মানুষ যত সতর্ক হচ্ছেন, ততই নতুন নতুন পদ্ধতিতে প্রতারণা করার ছক কষছে প্রতারকেরা। অনলাইনে যে কোনও বুকিং বা অন্য কাজ করার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকার কথা বলছেন বিশেষজ্ঞেরা।
লালবাজারের এক পুলিশকর্তা অবশ্য বলছেন, ‘‘সাইবার-প্রতারণা সংক্রান্ত যে কোনও অভিযোগকেই গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হয়। প্রতারণা আটকাতে একাধিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। স্কুল, কলেজেও চলছে সচেতনতামূলক প্রচার। এমনকি, অপরাধীদের কাছে পৌঁছতে নেওয়া হচ্ছে প্রযুক্তির সহায়তাও।’’
কিন্তু শুধু সচেতনতার প্রচারেই সাইবার-প্রতারণা বাগে আনা যাবে কি? এই প্রশ্নের জবাব অবশ্য এড়িয়ে গিয়েছেন কলকাতা পুলিশের কর্তারা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy