টালা ট্যাঙ্ক। ফাইল চিত্র।
ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাব যাতে কাঠামোয় না পড়ে, তাই টালা ট্যাঙ্কের চারটি প্রকোষ্ঠেই (কম্পার্টমেন্ট) জল ভর্তি করে রাখার জন্য কলকাতা পুরসভাকে পরামর্শ দিলেন বিশেষজ্ঞেরা। উদ্দেশ্য, ট্যাঙ্কের ওজনের ভারসাম্য বজায় রাখা। কারণ, এই মুহূর্তে টালা ট্যাঙ্ক সংস্কারের কাজ চলায় তিনটি প্রকোষ্ঠ জলভর্তি থাকে। আর একটি প্রকোষ্ঠ খালি করে তাতে সংস্কারের কাজ করা হয়। কিন্তু ঝড়-বৃষ্টির সময়ে ট্যাঙ্কের স্থানিক বিচ্যুতি না হওয়ার জন্যই এই পরামর্শ।
টালা ট্যাঙ্কের কাজের ক্ষেত্রে পরামর্শদাতা হিসেবে রয়েছেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের কনস্ট্রাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের বিশেষজ্ঞেরা। তাঁদের বক্তব্য, ইয়াসের জেরে অতি প্রবল হাওয়ার পূর্বাভাস না থাকলেও এ নিয়ে কোনও ঝুঁকি নেওয়া যাবে না। কারণ, অত উঁচুতে এমনিতেই হাওয়ার চাপ বেশি থাকে। আর সেই হাওয়ার চাপেই বেঁকে গিয়েছিল টালা ট্যাঙ্কের ভিতরের লোহার দেওয়ালের বহু জায়গা।
বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, টালা ট্যাঙ্কে দু’ভাবে সেই চাপ কাজ করেছে। প্রথমত, ট্যাঙ্ক শূন্য থাকা অবস্থায়। এই অবস্থায় হাওয়ার গতি বেশি হলে তার চাপে ট্যাঙ্কের দেওয়াল ভিতরে ঢুকে আসতে চায়। আর দ্বিতীয়ত, ট্যাঙ্ক জল-ভর্তি থাকা অবস্থায়। এই ক্ষেত্রে জোরালো হাওয়ার কারণে ট্যাঙ্কের দেওয়ালের বাইরের দিকে চাপ দেয় জল। ফলে দেওয়াল বাইরের দিকে ক্রমশ বেঁকতে থাকে। হাওয়ার চাপে ট্যাঙ্কের লোহার দেওয়াল যাতে ভিতরে-বাইরে না বেঁকে, তাই লোহার পাত দিয়ে সেটি মজবুত করা হয়েছে।
এমনিতে ২১৫টি লোহার স্তম্ভের উপরে দাঁড়ানো, ৯০ লক্ষ গ্যালন জলধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন টালা ট্যাঙ্ক শুধু আলগা ভাবে সেগুন কাঠের উপরে বসানো রয়েছে। কিন্তু সংস্কারের কাজের জন্য কাঠের সঙ্গে ট্যাঙ্কটি পুরোপুরি যুক্ত করা নেই। ফলে হাওয়ার কারণে যদি ট্যাঙ্কের সামান্যতম বিচ্যুতিও হয়, তা হলেও সেটিকে পূর্বাবস্থায় ফেরানো প্রায় অসম্ভব। সংস্কারের কাজে পরামর্শদাতা হিসেবে নিযুক্ত যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে বিশ্বজিৎ সোমের কথায়, ‘‘জল সরবরাহ হলেও এমন পরিমাণে তা করতে হবে, যাতে চারটি কম্পার্টমেন্টেই কমপক্ষে অর্ধেক জল ভর্তি থাকে।’’
যা যথেষ্ট চ্যালেঞ্জের কাজ বলেই জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞেরা। কারণ, টালা ট্যাঙ্কে যে পাইপের মাধ্যমে জল ওঠে, সেই একই পাইপের মাধ্যমে জল সরবরাহ করা হয়। ফলে এই দুইয়ের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখা পুরোটাই গাণিতিক হিসেব এবং তার বাস্তব রূপায়ণের উপরে নির্ভর করছে। পুরসভার এক ইঞ্জিনিয়ারের কথায়, ‘‘বিশেষজ্ঞেরা যা বলেছেন, সেটাই করা হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy