Advertisement
২২ মে ২০২৪
Day Care worker

খুলেছে ডে-কেয়ার সেন্টার, সতর্কতার পরামর্শ চিকিৎসকদের

শহরের একটি পরিচিত প্রিস্কুল চেনের অন্যতম কর্ণধার নবনীতা বসু জানান, করোনার মধ্যে তাঁদের কোনও প্রিস্কুল খোলেনি।

পরিচর্যা: সল্টলেকের একটি ডে-কেয়ার সেন্টারে ঘুমের প্রস্তুতি। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য

পরিচর্যা: সল্টলেকের একটি ডে-কেয়ার সেন্টারে ঘুমের প্রস্তুতি। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য

আর্যভট্ট খান
কলকাতা শেষ আপডেট: ৩১ জানুয়ারি ২০২১ ০৫:৫২
Share: Save:

কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় তো বটেই, খোলেনি প্রাথমিক স্কুল এবং প্রিস্কুলও। কিন্তু কচিকাঁচাদের দেখভাল করার জন্য প্রিস্কুলের সঙ্গে থাকা কিছু ডে-কেয়ার সেন্টার খুলে গিয়েছে। কোভিড পরিস্থিতি এখনও পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসেনি। তাই প্রশ্ন উঠেছে, সরকারের কোনও নির্দেশ না পেয়েও ডে-কেয়ার সেন্টারে বাচ্চাদের রাখা কতটা নিরাপদ? ডে-কেয়ার সেন্টারের কর্তারা আবার জানাচ্ছেন, তাঁরা শিশুদের অভিভাবকদের অনুরোধেই কোভিড-বিধি মেনে, খুব কম শিশুকে নিয়ে সেন্টার খুলেছেন।


শহরের একটি পরিচিত প্রিস্কুল চেনের অন্যতম কর্ণধার নবনীতা বসু জানান, করোনার মধ্যে তাঁদের কোনও প্রিস্কুল খোলেনি। তবে সল্টলেকের একটি ডে-কেয়ার সেন্টার খুলেছেন তাঁরা। তাঁর দাবি, সব স্বাস্থ্য-বিধি মেনেই সেন্টারটি খোলা হয়েছে। আগের থেকে অনেক কম সংখ্যায় রাখা হচ্ছে শিশুদের।


সল্টলেকের ওই ডে-কেয়ার সেন্টারে গিয়ে দেখা যায়, বাচ্চারা ঘুমোচ্ছে। তাদের দেখভাল করার জন্য যে আয়ারা রয়েছেন, তাঁদের মুখে মাস্ক। নবনীতা বলেন, ‘‘সরকার তো অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র খোলার নির্দেশ দিয়েছে। সেখানে বাচ্চাদের রেখেই কাজে যান তাদের মায়েরা। অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র ও ডে-কেয়ার সেন্টারের কাজ তো একই রকম। তা ছাড়া, এখন প্রায় সব অফিসই খুলে গিয়েছে। অনেক মা-বাবাই সেন্টার খোলার জন্য অনুরোধ করেছিলেন। বাচ্চাদের নিরাপদ জায়গায় রেখে কাজে যেতে চান তাঁরা।’’


শোভাবাজারের বাসিন্দা এক দম্পতি জানালেন, করোনার আগে সকাল ৮টায় অফিসে যাওয়ার সময়ে দেড় বছরের ছেলেকে সল্টলেকের একটি ডে-কেয়ার সেন্টারে দিয়ে যেতেন। সন্ধ্যা ৭টা নাগাদ ছেলেকে নিয়ে আসতেন। ওই দম্পতি জানান, তাঁদের অফিস এখন বাড়ি থেকে কাজের মেয়াদ কমিয়ে সপ্তাহে পাঁচ দিন অফিসে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। তাঁদের প্রশ্ন, ছেলেকে কোথায় রেখে যাবেন? কারণ যে সেন্টারে আগে ছেলেকে তাঁরা রাখতেন, সেটি এখনও খোলেনি।
এই সমস্যার পাশাপাশি করোনা পরিস্থিতিতে ডে-কেয়ার সেন্টারে বাচ্চাদের রেখে আসতেও অনেকে দ্বিধাগ্রস্ত। নিউ টাউনের বাসিন্দা অনিন্দ্য মজুমদার বলেন, ‘‘আয়ার উপরে ভরসা করে বাড়িতে রেখে যাওয়ার থেকে ডে-কেয়ার সেন্টারে বাচ্চাকে রেখে যাওয়া বেশি নিরাপদ বলেই মনে করি। কারণ, সেখানে সিসি ক্যামেরা থাকার জন্য বাচ্চা কী করছে, তা অফিস থেকে দেখতে পাই। কী খাওয়ানো হচ্ছে তা-ও দেখতে পাই। কিন্তু করোনার মধ্যে বাচ্চাকে ডে-কেয়ার সেন্টারে পাঠানো ঠিক হবে কি না, বুঝতে পারছি না। স্ত্রী ও আমার অফিসও এই জন্য কামাই হচ্ছে।’’


সল্টলেকে একটি প্রিস্কুল চালান নিউ টাউনের বাসিন্দা নিধি কয়াল। তিনি জানান, মূলত মা-বাবাদের অনুরোধেই তাঁকে বাচ্চাদের রাখতে হয়েছে। নিধি বলেন, ‘‘ডে-কেয়ার সেন্টারটি খুলিনি। কিন্তু অনুরোধ রাখতে নিজের বাড়িতে চার জন বাচ্চাকে রাখছি।’’


দক্ষিণ কলকাতার রিজেন্ট এস্টেটের একটি ডে-কেয়ার সেন্টারের এক আধিকারিক জানান, তাঁদের সেন্টারে নতুন কোনও বাচ্চাকে রাখা হচ্ছে না। আগে যারা থাকত, মা-বাবারা অনুরোধ করায় তাদেরই রাখা হচ্ছে। বাগুইআটির একটি সেন্টারের আধিকারিক বীথিকা সাহা জানান, এখনও পর্যন্ত এক জন বাচ্চাকেই রাখা হচ্ছে তাঁদের দায়িত্বে।


করোনা পরিস্থিতিতে ডে-কেয়ার সেন্টারে শিশুদের রাখতে গেলে যাঁরা সেন্টার চালাচ্ছেন, তাঁদের অতিরিক্ত সতর্ক থাকতে হবে বলে মনে করেন চিকিৎসক অরুণাংশু তালুকদার। তিনি বলেন, ‘‘সাধারণত বড় থেকে ছোট শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ধাপে ধাপে খোলার কথা। প্রথমে কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় খুলবে। তার পরে
স্কুল, প্রাথমিক স্কুল এবং সব শেষে প্রিস্কুল ও ডে-কেয়ার সেন্টার।


কোনও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার আগে সরকারি নির্দেশও জরুরি।’’ তবে তাঁর মতে, অনেক সময়েই দেখা যাচ্ছে বাচ্চার মা, বাবা কর্মরত।
তাই তাঁরা সন্তানদের ডে-কেয়ার সেন্টারে রাখতে বাধ্য হচ্ছেন। এ ক্ষেত্রে ওই সেন্টারগুলিতে শুধু জীবাণুমুক্ত করা বা মাস্ক পরার মতো স্বাস্থ্য-বিধি মানলেই চলবে না। সেখানে যাঁরা কাজ করছেন, সম্ভব হলে প্রতি সপ্তাহে তাঁদের এক বার করোনা পরীক্ষা করা দরকার। ছোট শিশুদের সব সময়ে মাস্ক পরিয়ে রাখা সম্ভব হয় না। তাই অতিরিক্ত সতর্ক থাকতে হবে কর্মীদেরই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Day Care worker Pre School
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE