Advertisement
E-Paper

বাড়ছে মৃত্যু, তবু কেন আগাম ঘোষণা মমতার

বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ন’টা। ভেঙে পড়া বিবেকানন্দ রোড উড়ালপুলের একটু দূরে চেয়ারে বসে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করেছিলেন, ‘‘উদ্ধারকাজ শেষ।’’ তার পর ঘটনাস্থল থেকে সোজা মেডিক্যাল কলেজে আহতদের দেখতে চলে যান তিনি। তত ক্ষণে এলাকা ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন রাজ্যের মন্ত্রী-আমলারাও।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৩ এপ্রিল ২০১৬ ০৩:০৫
উড়ালপুলের ধ্বংসস্তূপ থেকে বার করে আনা হচ্ছে দেহ। শনিবার। — নিজস্ব চিত্র

উড়ালপুলের ধ্বংসস্তূপ থেকে বার করে আনা হচ্ছে দেহ। শনিবার। — নিজস্ব চিত্র

বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ন’টা। ভেঙে পড়া বিবেকানন্দ রোড উড়ালপুলের একটু দূরে চেয়ারে বসে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করেছিলেন, ‘‘উদ্ধারকাজ শেষ।’’ তার পর ঘটনাস্থল থেকে সোজা মেডিক্যাল কলেজে আহতদের দেখতে চলে যান তিনি। তত ক্ষণে এলাকা ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন রাজ্যের মন্ত্রী-আমলারাও।

মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা মেনে অবশ্য উদ্ধারকাজ শেষ হয়নি সে দিন। দুর্ঘটনার পর দিন, শুক্রবার সকালে ধ্বংসস্তূপ থেকে দু’জনের দেহ উদ্ধার করা হয়। রাতে আটকে থাকা লরি থেকে বার করা হয় খালাসি আব্দুর রেজ্জাকের দেহ। শনিবারও কিন্তু ধ্বংসস্তূপের মধ্যে থাকা একটি মন্দির চত্বর থেকে আরও দুই ব্যক্তির দেহ উদ্ধার করা হল। তবে রাত পর্যন্ত তাঁদের পরিচয় জানা যায়নি। লালবাজারের হিসেবে এ দিন সন্ধ্যা পর্যন্ত এই দুর্ঘটনায় মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৬।

শনিবার দুপুরেও যেখানে দেহ উদ্ধার হচ্ছে, সেখানে বৃহস্পতিবার রাতেই মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধারকাজ শেষ করার কথা ঘোষণা করলেন কী ভাবে? এই প্রশ্নটা উঠতে শুরু করেছে। সেনা অবশ্য তখনই জানিয়েছিল, উদ্ধারকাজ চালিয়ে যাচ্ছে তারা। শুক্রবার দুপুরে উদ্ধারের মূল কাজ সেরে সরে গিয়েছিল সেনা। তার পর থেকে এ দিন রাত পর্যন্ত পুলিশ, বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী উদ্ধারের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য নিয়ে কোনও মন্তব্য না করলেও লালবাজারের এক কর্তা বলেন, ‘‘ধ্বংসস্তূপের ভিতরে আর কেউ নেই, এ ব্যাপারে নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত উদ্ধারকাজ চলে। এটাই নিয়ম।’’ তবে মুখ্যমন্ত্রীর আগাম ঘোষণা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন কলকাতার প্রাক্তন পুলিশ কমিশনার তুষার তালুকদার। তিনি বলছেন, ‘‘উদ্ধারকাজ শেষ হয়েছে কি না, তা মুখ্যমন্ত্রী বলবেন কী ভাবে? এটা তো যাঁরা কাজটা করছেন, তাঁদের বলার কথা।’’ মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে ঘটনাস্থলে হাজির ছিলেন পুলিশ-প্রশাসনের শীর্ষকর্তারাও। তাঁরাও কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর ভুল শুধরে দেননি। তুষারবাবু অবশ্য এতে আশ্চর্য হচ্ছেন না। তাঁর কথায়, ‘‘ওঁরা তো কর্তার ইচ্ছায় চলেন। মুখ্যমন্ত্রী যা বলেন তাতেই সায় দেন।’’

ঘটনাস্থলে মুখ্যমন্ত্রী এবং অন্য মন্ত্রীদের যাওয়া নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে আগেই। ভিআইপিদের উপস্থিতিতে কাজে অসুবিধা হচ্ছে বলে জানিয়েছিলেন উদ্ধারকারীদের অনেকে। এই পরিস্থিতিতে প্রশ্ন উঠেছে, তড়িঘড়ি উদ্ধারকাজ শেষের ঘোষণা কি বিপর্যয় মোকাবিলায় রাজ্যের দক্ষতা প্রমাণ করার চেষ্টা? তুষারবাবু বলছেন, ‘‘রাজ্য যদি বিপর্যয় মোকাবিলায় দক্ষই হবে, তা হলে সেনা না পৌঁছনো পর্যন্ত কাজে গতি এল না কেন?’’

তৃণমূলের এক নেতা অবশ্য মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণার মধ্যে কোনও বিভ্রান্তি দেখছেন না। তিনি বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী মেডিক্যালে যাওয়ার সময় বলেছিলেন, আরও কয়েকটি দেহ আছে। তাই কিছু লোক রেখে গেলাম। সেই দেহগুলিই এখন উদ্ধার করা হচ্ছে।’’ যদিও অনেকেই বলছেন, মুখ্যমন্ত্রী সে দিন ধ্বংসস্তূপে আরও তিন জনের থাকার কথা বলেছিলেন। কিন্তু এ পর্যন্ত উদ্ধার করা হয়েছে মোট পাঁচ জনের দেহ।

বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর একাংশ বলছে, লরির ভিতরে খালাসির দেহ রয়েছে, তা আগেই বোঝা গিয়েছিল। কিন্তু মন্দির চত্বরেও যে দেহ রয়েছে, তা বৃহস্পতিবার রাতে বোঝা যায়নি। শুক্রবার দুপুরের পর থেকে পচা গন্ধ বেরোতে শুরু করার পরেই আরও দেহ চাপা পড়ে থাকার বিষয়টি আঁচ করেছিলেন উদ্ধারকারীরা। কিন্তু যে ভাবে সেতুটা ভেঙে পড়েছিল, তাতে ভিতরে ঢোকা যাচ্ছিল না। শুক্রবার সন্ধ্যায় কংক্রিটের ব্লক এনে ঝুলতে থাকা সেতুর অংশটির তলায় লাগানো হয়। এ দিন বেলা ১২টা নাগাদ ধীরে ধীরে ওই ঝুলন্ত অংশের ভিতরে ঢোকেন উদ্ধারকারীরা। সেখান থেকেই পচাগলা দুই ব্যক্তির দেহ মেলে।

উড়ালপুল ভেঙে পড়ার পর থেকেই এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়েছিল। ঝুলে পড়া অংশ ভেঙে পড়লে ফের প্রাণহানি হতে পারে, এটা আঁচ করেই আশপাশের ৫টি বাড়ির বাসিন্দাদের সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। পুরসভা অবশ্য আশ্বাস দিয়েছে, দিন তিনেক পরেই বাসিন্দাদের বাড়িতে ফিরিয়ে দেওয়া হবে। তবে এই বিপর্যয়ের পরে উড়ালপুল তৈরি হওয়া নিয়ে ফের ক্ষোভ ছড়িয়েছে এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে। এই প্রকল্প বাতিলের দাবিতে এ দিন দুপুরে মিছিল করেন তাঁরা। সন্ধ্যায় মৃতদের স্মৃতির উদ্দেশে মোমবাতি মিছিলও হয়। একটি সংস্থার অনুষ্ঠানে হাজির হতে শহরে এসেছিলেন নির্ভয়ার বাবা-মা। এই ঘটনার খবর শুনে দুর্ঘটনাস্থল ও মেডিক্যাল কলেজেও যান তাঁরা। নির্ভয়ার বাবা বলেন, ‘‘আমাদের মেয়ের মৃত্যুর পর সারা দেশ পাশে দাঁড়িয়েছিল। তাই আমরাও এই ঘটনায় মৃত ও আহতদের পাশে দাঁড়াতে এসেছি।’’

MostReadStories
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy