Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪

বন্ধ ঘর থেকে উদ্ধার প্রৌঢ়ার পচাগলা দেহ

বন্ধ ঘরে মৃত মায়ের পচাগলা দেহ আঁকড়ে কয়েকদিন পড়ে থাকলেন ছেলে। রবিনসন স্ট্রিটের ঘটনায় দিদির দেহ কঙ্কাল হয়ে গেলেও ছেড়ে যাননি ভাই। কিন্তু এ ক্ষেত্রে তা ঘটেনি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২০ এপ্রিল ২০১৬ ০১:২৬
Share: Save:

রবিনসন স্ট্রিটের ছায়া এ বার হাওড়ায়!

বন্ধ ঘরে মৃত মায়ের পচাগলা দেহ আঁকড়ে কয়েকদিন পড়ে থাকলেন ছেলে। রবিনসন স্ট্রিটের ঘটনায় দিদির দেহ কঙ্কাল হয়ে গেলেও ছেড়ে যাননি ভাই। কিন্তু এ ক্ষেত্রে তা ঘটেনি। মায়ের পচাগলা দেহের গন্ধ চেষ্টা করেও আটকাতে না পেরে শেষে দরজা বাইরে থেকে বন্ধ করে রাতারাতি নিরুদ্দেশ হয়ে গিয়েছেন ছেলে।

হাওড়ায় ঘটনাটি ঘটেছে শিবপুরের বৈষ্ণবপাড়া বাজারের কাছে ২/২, চন্দ্রকুমার ব্যানার্জি লেনে। সোমবার রাতে ওই বাড়ির বন্ধ ঘর থেকে এক প্রৌঢ়ার পচাগলা দেহ উদ্ধার করে পুলিশ। পুলিশ জানায়, মৃতার নাম ছবিরানি পাঁজা (৫৫)। স্থানীয় সূত্রে খবর, ছেলে তাপসকে নিয়ে বাড়ির দোতলায় একটি ঘরে থাকতেন তিনি। বছর দশেক আগে মৃত্যু হয়েছে স্বামী শ্যামল পাঁজার। মেয়েরও বিয়ে হয়ে গিয়েছে। শ্যামলবাবুর অন্য চার ভাইয়ের পরিবারও ওই বাড়িতেই থাকেন।

পুলিশ জানায়, শ্যামলবাবুর মৃত্যুর পরে বাড়ির ভাগ নিয়ে ছবিরানিদেবীর সঙ্গে তাঁর ভাইদের অশান্তি শুরু হয়। পরস্পরের বিরুদ্ধে মামলাও হয়। শ্যামলবাবুর ভাই গৌতম পাঁজা বলেন, ‘‘বাড়ির ভাগ নিয়ে বৌদির সঙ্গে মামলা চলছিল। কেউ কারও খোঁজ রাখতাম না। তাই ঠিক কি ঘটেছে জানি না।’’ পুলিশ জানায়, এই অশান্তির জেরেই কিছু বছর ধরে ছবিরানিদেবী মানসিক অবসাদে ভুগছিলেন। পুলিশ জানিয়েছে, কারও সঙ্গে মিশতেন না মা ও ছেলে। পাড়ায় তাপসের কোনও বন্ধু ছিল না। আগে জুটমিলে চাকরি করতেন তাপস। চাকরি চলে যাওয়ায় কলমিস্ত্রীর কাজ করতেন।

পুলিশ জানায়, সোমবার সন্ধ্যায় ঘর থেকে দুর্গন্ধ পেয়ে সন্দেহ হয় বাসিন্দাদের। তাঁরা দেখেন, উপরের ঘরের সমস্ত জানলা-দরজা বন্ধ। রেনপাইপ দিয়ে রক্তের মতো কিছু চুঁইয়ে পড়ছে নর্দমায়। খবর যায় শিবপুর থানায়। প্রথমে পুলিশ তালা ভেঙে ঢুকতে রাজি হয়নি। রাতে ওই পরিবারের এক ঘনিষ্ঠ আত্মীয়কে ডেকে তাঁর এবং স্থানীয়দের সামনে তালা ভেঙে ঘরে ঢুকে পুলিশ ওই প্রৌঢ়ার পচাগলা দেহ উদ্ধার করে। পুলিশ জানায়, দেহটি মেঝেতে পড়েছিল। তাতে এতটাই পচন ধরেছিল যে শরীরের রক্তরস গলে রেনপাইপ দিয়ে রাস্তায় গিয়ে পড়ছিল। পুলিশ জানায়, গন্ধ যাতে না ছড়ায় তাই ঘরের প্রত্যেকটি ঘুলঘুলি কাগজ দিয়ে আটকে দেওয়া হয়েছিল। কাগজ দিয়ে বন্ধ করা হয়েছিল জানলার ফাঁকফোকরও।

এলাকার এক বাসিন্দা সৌমেন মণ্ডল বলেন, ‘‘আগে ওই মহিলাকে বাড়ির সামনে বা রাস্তায় দেখা যেত। কিন্তু গত ১৫ দিন ধরে তাঁকে দেখা যাচ্ছিল না। পাঁচ দিন ধরে দেখছিলাম না তাপসকেও।’’ তবে পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, তাপসকে কয়েকদিন দেখা না গেলেও সোমবার সকালে দরজায় তালা দিয়ে চলে যেতে দেখা যায়। পরস্পরের মধ্যে কথাবার্তা না থাকায় কেউ তাঁকে মায়ের কথা জিজ্ঞাসা করেননি। তার পরে আর তাঁর খোঁজ মেলেনি। তাপসের খোঁজে তল্লাশি শুরু করেছে পুলিশ।

পুলিশের অনুমান, ওই প্রৌঢ়ার মৃত্যু হয়েছে কম করে তিন দিন আগে। তাহলে কী গত তিনদিন ধরে মায়ের মৃতদেহ আঁকড়ে পড়ে ছিলেন ছেলে? কেনই বা পরিবার বা পাড়ার সকলকে জানালেন না? কিছু কী লুকোতে চাইছেন তিনি? পুলিশ জানায়, এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে প্রথমেই তাই ময়নাতদন্তের উপর জোর দেওয়া হয়েছে। জানার চেষ্টা হচ্ছে এটি খুন না স্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Decomposed body older woman
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE