Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪
Drinking

কাল নয়, আজকের শপথেই নিজেকে ফিরে পেয়েছেন ওঁরা

দুই সন্তান ও স্ত্রী-সহ হাবড়ার বাণীপুরে রবিবার এক বনভোজনে এসেছিলেন তিনি।

একসঙ্গে: হাবড়ার বাণীপুরের সেই বনভোজন। রবিবার। নিজস্ব চিত্র

একসঙ্গে: হাবড়ার বাণীপুরের সেই বনভোজন। রবিবার। নিজস্ব চিত্র

অরুণাক্ষ ভট্টাচার্য
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ জানুয়ারি ২০২১ ০৫:১৬
Share: Save:

তাঁর ছেলের যখন তিন বছর বয়স, বাড়ি থেকে বার করে দেওয়া হয় বাগুইআটির রাজেশকে। তাঁর কথায়, ‘‘ভাড়া বাড়ির শৌচাগারটা প্রায় ‘বার’ বানিয়ে ফেলেছিলাম। মদ্যপানের জন্য চাকরি চলে যায়। ভেসে যায় পরিবারটাই। এক দিন শৌচাগারেই সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়ি।” সেই রাজেশ অবশ্য ২০১১ সাল থেকে আর নেশা করেন না।

দুই সন্তান ও স্ত্রী-সহ হাবড়ার বাণীপুরে রবিবার এক বনভোজনে এসেছিলেন তিনি। সেখানেই এসেছিল নেশার ছোবল থেকে ফিরে আসা এমন আরও একশোটির মতো পরিবার। নেশাগ্রস্ত হয়ে পড়ায় কারও পড়াশোনা থমকে গিয়েছিল। কেউ আবার নেশাদ্রব্য জোগাড়ে নানা অপরাধে হাত পাকিয়েছিল। ২১ বছরের তরুণী প্রিয়তা সপ্তম শ্রেণিতে পড়াকালীনই মাদকাসক্ত হয়ে পড়ে। এক সময়ে কিশোরী প্রিয়তার পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যায়।

কোনও বনভোজনে গিয়ে খাবার খেতেই পারতেন না দেবরাজ। আকণ্ঠ মদ্যপান করে বেহুঁশ হয়ে থাকতেন পেশায় আইনজীবী যুবক। তাঁর নেশার দৌরাত্ম্যে দূরে সরেছেন বাবা-মা। এখন সেই যুবক ছাড়তে পেরেছেন নেশা। “বাবা-মা কথা দিয়েছেন, এ বার ফিরে আসবেন আমার কাছে।”― মাংস-ভাত মুখে পুরে বললেন দেবরাজ। মাদকের টানে অপরাধে হাত পাকিয়েছিলেন নয়ন। তাঁর কথায়, ‘‘লোকে চোর বলত। রাতে পুলিশ হানা দিত বাড়িতে। বৌ ছেড়ে চলে যায়।’’

ভাই সিদ্ধার্থকে নিয়ে এসেছিলেন মধুমিতা। দু’জনেই স্কুল শিক্ষক। মধুমিতা বলেন, ‘‘সারাক্ষণ নেশা করত ভাই। নিজেকে আড়াল করতে সব সময়ে আমাদের দোষারোপ করত। এখন অবশ্য সবাই শান্তিতে আছি। কত দিন পরে এমন আনন্দ করলাম বলতে পারব না।’’ দক্ষিণ হাবড়ার পিনাকীর জীবনও তোলপাড় করে দিয়েছিল নেশা। বৌ-ছেলে নিয়ে সেই পিনাকীই এ দিনের বনভোজনের গুরুদায়িত্ব পালন করছিলেন।

নেশার কবল থেকে এমন অনেককে মূল স্রোতে ফিরিয়ে আনতে ২০০৩ সালেই এক সূত্রে বেঁধেছে ‘হারমনি গ্রুপ’। তাদের আয়োজিত বনভোজন ‘বহুদিন পর’-এ সপরিবার মেতে উঠলেন সবাই।


অ্যালকোহলিক অ্যানোনিমাসের সঙ্গে যুক্ত এই গ্রুপ। অ্যালকোহলিক অ্যানোনিমাসের সঙ্গে নেশামুক্ত হয়ে জড়িয়ে আছেন ১৮৬টি দেশের ৪৫ লক্ষের মতো মানুষ। দক্ষিণ হাবড়ার পিনাকীরাই প্রথমে তিন জন মিলে হারমনি গ্রুপ তৈরি করেন। সেই দলে একে একে যুক্ত হন রাজেশ, প্রিয়তা, দেবরাজরা।

গ্রুপের নিয়ম অনুযায়ী ওঁরা ‘সোবার’ (যাঁরা মদ্যপান ছেড়েছেন) এবং ‘ক্লিন’ (যাঁরা মাদক সেবন থেকে দূরে)। এ দিন ওঁরা সকলে রীতিমতো কব্জি ডুবিয়ে মাছ-মাংস, ভাত খাচ্ছিলেন। কারণ, মিউজ়িক্যাল চেয়ার, বাস্কেট বল, নাচ-গান করে পেটে তত ক্ষণে ছুঁচোরা ডনবৈঠক শুরু করে দিয়েছে। খেলার ফাঁকে প্রিয়তা বলছিলেন, ‘‘এখন পড়াশোনার পাশাপাশি আমি চাকরিও করছি।” পিনাকী বলেন, ‘‘একটি দিন নেশামুক্ত থাকার শপথ হয় এখানে। রোজ সেই শপথ হয়, শুধু সে দিনের জন্য। এ ভাবেই বছর গড়িয়ে যায়। নেশা ছাড়ার প্রথম দিনটিই জন্মদিন হিসেবে পালন করি। মেডেল, স্মারকও দেওয়া হয়।’’ এ ভাবেই ২০০৩ সালের ৭ এপ্রিল থেকে মদ ‘ছেড়ে নয়, বন্ধ’ রেখেছেন সল্টলেকের গৌতম। ওঁদের বক্তব্য, কাল নয়, আজকের শপথেই নিজেকে ফিরে পেয়েছেন ওঁরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Drinking Rehabilitation centre Drunk
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE