এপ্রিলের দুই সপ্তাহ কেটে গেল। অথচ গত বছর ডেঙ্গিতে পর্যুদস্ত দক্ষিণ দমদম পুরসভা মশাবাহিত রোগ নিয়ে জন সচেতনতার কাজ শুরুই করতে পারল না।
গত বছর উত্তর ২৪ পরগনায় ডেঙ্গিতে সবচেয়ে বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছিল দক্ষিণ দমদম পুরসভা এলাকাতেই। তার জন্য ওই পুরসভাকে নবান্ন থেকে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তাতে যে কোনও কাজ হয়েছে, তা পুরসভার হাবভাবে বোঝার উপায় নেই। পুর এলাকার বাসিন্দারা মশার দাপটে আতঙ্কিত। কিন্তু পুরসভা তাদের কাজটাই শুরু করতে পারেনি এখনও।
কেন? পুরসভা সূত্রের খবর, ওই এলাকায় ডেঙ্গি-ম্যালেরিয়া সচেতনতা অভিযানের জন্য কোনও পুরকর্মী নেই। এই কাজটা করেন স্টেট আর্বান ডেভলপমেন্ট অথরিটি (সুডা)-র কর্মীরা। ওই কর্মীরা এ বার দৈনিক ৭৫ টাকা মজুরিতে আর কাজ করতে চাইছেন না। ওই টাকাটা দেয় পুরসভা। এখনও সচেতনতা অভিযান শুরু না হওয়ায় কাউন্সিলরদের অনেকেই পুর-কর্তৃপক্ষের উপরে চাপ বাড়িয়েছেন। ওই চাপেই পুরসভা সুডা কর্মীদের দৈনিক মজুরি কী ভাবে বাড়ানো যায়, তা নিয়ে আলোচনা শুরু করেছে দক্ষিণ দমদম পুরসভা।
পুরসভার এই গয়ংগচ্ছ মনোভাবে কাউন্সিলারেরা অনেকেই বিরক্ত। এক কাউন্সিলরের মন্তব্য, ‘‘কলকাতা পুরসভা জানুয়ারি মাস থেকেই ডেঙ্গি, ম্যালেরিয়ার সচেতনতা অভিযান শুরু করে দিয়েছে। আর আমাদের পুরসভা এখন ঠিকই করতে পারল না কবে থেকে তারা অভিযান শুরু করবে। কে বলবে গত বছর ডেঙ্গি মৃত্যুতে আমরা রাজ্যে প্রথম স্থান পেয়েছিলাম।’’
পুরসভা সূত্রে দাবি করা হয়েছে, সচেতনতা অভিযান যে একেবারেই হয়নি তা নয়, দু’-তিনটি প্রচার মিছিল হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এবং মনুষের মনে আস্থা ফেরাতে পুর-কর্তৃপক্ষ কাউন্সিলরদের বিশেষ দায়িত্ব দিয়েছে। ঠিক হয়েছে, কাউন্সিলরের ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের সঙ্গে পুরসভার স্বাস্থ্য, জনস্বাস্থ্য বিভাগের কর্মীদের মুখোমুখি বসিয়ে দেবেন। যাতে বাসিন্দারা নিজেদের সমস্যা জানাতে পারেন। পুরসভা সূত্রে বলা হয়, সচেতনতা এবং মশা মারার অভিযানে নামার সময়ে দেখা যায় বেশ কিছু নাগরিক নিজেদের বাড়িতে ঢুকতে দিতে চান না পুরকর্মীদের। এই ধরনের প্রকাশ্য সভায় সনাক্ত করা যাবে ওই সব নাগরিককে যাঁরা সচেতনতার কাজে ব্যাঘাত ঘটাচ্ছেন।
মশা মারা অভিযান এবং সচেতনতা অভিযানে সব কর্মীর প্রতিদিন ৫০টি বাড়িতে যাওয়ার কথা। কিন্তু দৈনিক ৭৫ টাকা মজুরিতে কোনও কর্মীই দৈনিক ৫০টি বাড়িতে যেতে চাইছেন না। এক কাউন্সিলর বলেন, ‘‘এত কম টাকায় কেউই প্রতিদিন ৫০টি বাড়িতে পৌঁছন না। তার উপরে সুডা-র নিয়ম, মাসে ১০ দিন কাজ হবে। ফলে সুডা কর্মীরা কেউই তেমন ভাবে কাজে উৎসাহ দেখাচ্ছেন না।’’
দক্ষিণ দমদম পুরসভার চেয়ারম্যান পারিষদ (স্বাস্থ্য) গোপা পাণ্ডে বলেন, ‘‘আমরা টাকার সমস্যার সমাধানের চেষ্টা করছি।’’ গোপাদেবীর দাবি, সুডা কর্মীরা ছাড়াও পুরসভার জনস্বাস্থ্য বিভাগের কর্মীরা নাগরিকদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্রচার ও সচেতনতার কাজ করেন। নাগরিকেরা অবশ্য এমন দাবি মানতেই চাইছেন না। তাঁরা আতঙ্কে অপেক্ষা করছেন বর্ষার পরের পরিস্থিতির জন্য। তখনই যে থাবা বসায় ডেঙ্গি-ম্যালেরিয়া।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy