গত সোমবার সারা রাত অতি ভারী বর্ষণের জেরে শহরের একাধিক এলাকা এখনও জলমগ্ন। তিন দিন পেরিয়ে গেলেও সেই জমা জল সরেনি। শহরের একাধিক আবাসনেও জল জমে রয়েছে। বেহালার সরশুনা এলাকার বেশ কিছু রাস্তাও এখনও জলমগ্ন। এই পরিস্থিতিতে জমা জলে ডেঙ্গির বাহক এডিস ইজিপ্টাই মশার বংশবিস্তারের আশঙ্কা প্রবল বলে জানাচ্ছেন কলকাতা পুরসভার পতঙ্গবিদেরা।
গত এক মাসে দক্ষিণ কলকাতায় ডেঙ্গির প্রকোপ ভালই বেড়েছে। পুর স্বাস্থ্য দফতরের চিকিৎসকদের সতর্কবার্তা, ‘‘শহরবাসীকে সতর্ক থাকতে হবে। বাড়ির আনাচকানাচে পড়ে থাকা ডাবের খোলা, চায়ের ভাঁড় বা প্লাস্টিকের পাত্রে যেন কোনও ভাবেই জল না জমে।’’ পুরসভার নিকাশি দফতর সূত্রের খবর, সরশুনার একাধিক রাস্তায় বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত জল জমে ছিল। প্রগতি ময়দান থানার পাশ দিয়ে আড়ুপোতা যাওয়ার রাস্তাও রাত পর্যন্ত জলে ডুবে ছিল। শহরের আরও বেশ কিছু এলাকা এখনও জলমগ্ন। যদিও পুরসভার নিকাশি দফতরের এক আধিকারিক এ দিন বিকেলে বলেন, ‘‘শহরের কোথাও জল জমে নেই। আবাসনে জল জমে থাকার কারণ সেখানকার নিজস্ব নিকাশি ব্যবস্থা না থাকা।’’
সব মিলিয়ে এই মুহূর্তে বেশ কিছু এলাকায় জল জমে থাকায় মশা নিয়ে আতঙ্ক বাড়ছে। পুজোর মণ্ডপেও বাঁশের ডগায় বা ফাঁকফোকরে জমা জলে ডেঙ্গির মশা বংশবিস্তার করতে পারে বলে জানাচ্ছেন পুরসভার পতঙ্গবিদ থেকে স্বাস্থ্য দফতরের আধিকারিকেরা। মণ্ডপের আশপাশে কোথাও যাতে জল জমে না থাকে, সে বিষয়ে পুজোর উদ্যোক্তাদের সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে পুরসভার স্বাস্থ্য দফতরের তরফে।
গত মাসেই কলকাতায় ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়ে তিন জনের মৃত্যু হয়েছিল। আগের বছরের তুলনায় এ বার যে হারে শহরে ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে, তাতে কপালে ভাঁজ পড়েছে পুর স্বাস্থ্য দফতরেরকর্তাদের। পুরসভার স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, শহরের ছয়, সাত, আট এবং নয় নম্বর বরো এলাকায় ডেঙ্গি সংক্রমণের হার সর্বাধিক। দক্ষিণ কলকাতার ছ’নম্বর বরো, অর্থাৎ তালতলা, রিপন স্ট্রিট, মৌলালি, এন্টালি, বেনিয়াপুকুর এলাকায় গত বছরের তুলনায় ডেঙ্গিআক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। সাত নম্বর বরো, অর্থাৎ, পার্ক স্ট্রিট, মল্লিকবাজার, ট্যাংরা, পার্ক সার্কাস এলাকায় ডেঙ্গি সংক্রমণ ভাবাচ্ছে পুরসভাকে। ওই বরোর ৫৭ ও ৬৭ নম্বর ওয়ার্ড ডেঙ্গিপ্রবণ বলে চিহ্নিত করেছে পুরসভা। আট নম্বর বরো, অর্থাৎ, গড়িয়াহাট, বালিগঞ্জ, ভবানীপুর এলাকায় ব্যাপক হারে ডেঙ্গি বাড়ছে। ওই বরোর ৭০ নম্বর ওয়ার্ডেও গত এক মাসে দ্রুত হারে ডেঙ্গির সংক্রমণ বেড়েছে।
নয় নম্বর বরোর ভবানীপুর, আলিপুরের একাংশ, একবালপুর, মোমিনপুর, হেস্টিংস কলকাতা বন্দর এলাকার অধীনে। ওই বরোর ৭৪, ৭৬, ৭৭, ৭৮ ও ৭৯ নম্বরওয়ার্ডে দাপিয়ে বাড়ছে ডেঙ্গির প্রকোপ। পুরসভার এক পতঙ্গবিদের কথায়, ‘‘গত এক মাসে আট ও নয় নম্বর বরো এলাকায় ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা লাফিয়ে বেড়েছে। আট নম্বর বরোর ৭০ নম্বর ওয়ার্ড এবং নয় নম্বর বরোর ৭৭ নম্বরওয়ার্ডে ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা সব থেকে বেশি।’’
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)