সপ্তাহ দুয়েক আগে রাতভর বৃষ্টিতে ডুবে গিয়েছিল কলকাতার অধিকাংশ এলাকা। তার পরেও বৃষ্টির বিরাম নেই। কলকাতা পুরসভার পতঙ্গবিদেরা জানাচ্ছেন, বৃষ্টির জমা জল ডেঙ্গির বাহক এডিস ইজিপ্টাই মশার বংশবিস্তারের আদর্শ পরিবেশ তৈরি করে দেয়। এ হেন পরিস্থিতিতে কলকাতায় গত বছরের তুলনায় এ বার যে হারে ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে, তাতে কপালে ভাঁজ পড়েছে পুর চিকিৎসকদের।
পুরসভার স্বাস্থ্য দফতর থেকে পাওয়া পরিসংখ্যান বলছে, গত দু’মাসে ডেঙ্গি সংক্রমণের হার ভাল রকম বেড়েছে। গত বছর ১ জানুয়ারি থেকে ৫ অক্টোবর পর্যন্ত কলকাতা পুর এলাকায় ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়েছিলেন ৫৮৯ জন। চলতি বছরে ওই একই সময়ে ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়েছেন ৭৯১ জন। পুর স্বাস্থ্য দফতরের এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘নভেম্বর পর্যন্ত চলবে ডেঙ্গির অনুকূল মরসুম। পুজোর আগে ভারী বৃষ্টিতে শহরের একাধিক এলাকা কয়েক দিন জলে ডুবে ছিল। তার পরেও বৃষ্টি থেমে নেই। এই অবস্থায় আগামী এক মাস আমাদের কাছে চ্যালেঞ্জ। জমে থাকা পরিষ্কার জলে এডিস ইজিপ্টাই-এর লার্ভা জন্মায়। গত এক মাসে যে হারে ডেঙ্গি বেড়েছে, তাতে চিন্তা তো রয়েছেই। সাধারণ মানুষের কাছে আমাদের একটাই আবেদন, কোনও ভাবেই জল জমতে দেবেন না।’’
কেবল দক্ষিণ কলকাতাতেই নয়, উত্তরের একাংশেও ডেঙ্গির সংক্রমণ গত বছরের তুলনায় বেড়েছে। পুর স্বাস্থ্য দফতরের পরিসংখ্যান বলছে, গত বছর ১ জানুয়ারি থেকে ৫ অক্টোবর পর্যন্ত এক নম্বর বরো, অর্থাৎ, কাশীপুর, বেলগাছিয়া, চিৎপুর, বাগবাজার ও শ্যামবাজারের একাংশে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ২৫। এ বছরের ওই সময়ে তা বেড়ে হয়েছে ৪৬।
ছয় নম্বর বরো, অর্থাৎ, ধর্মতলা, তালতলা, রিপন স্ট্রিট, মৌলালি, এন্টালি, বেনিয়াপুকুরের মতো এলাকায় গত বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ৫ অক্টোবর পর্যন্ত ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৩২। এ বছরের ওই সময়ে আক্রান্তের সংখ্যা ৫৬। ওই বরোর ৫২, ৫৫ ও ৬২ নম্বর ওয়ার্ডে সংক্রমণের হার সর্বাধিক। সাত নম্বর বরো, অর্থাৎ, পার্ক স্ট্রিট, মল্লিকবাজার, ট্যাংরা ও পার্ক সার্কাসে গত বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ৫ অক্টোবর পর্যন্ত আক্রান্ত হন ৪২ জন। এ বছর সংখ্যাটা ৭৬। ওই বরোর ৫৭, ৬৫, ৬৬ ও ৬৭ নম্বর ওয়ার্ডে যে হারে সংক্রমণ বাড়ছে, তাতে রীতিমতো উদ্বিগ্ন পুর চিকিৎসকেরা।
আট নম্বর বরো, অর্থাৎ, গড়িয়াহাট, বালিগঞ্জ, ভবানীপুরে গত বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ৫ অক্টোবর পর্যন্ত ডেঙ্গিতে ৪২ জন আক্রান্ত হয়েছিলেন। এ বছর আক্রান্ত হয়েছেন ৯২ জন। নয় নম্বর বরোর ভবানীপুর, আলিপুরের একাংশ, একবালপুর, মোমিনপুর ও হেস্টিংস কলকাতা বন্দর এলাকার অধীনে। ওই বরোই সব থেকে বেশি ভাবাচ্ছে পুরসভাকে। গত বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ৫ অক্টোবর পর্যন্ত ওই বরোয় ডেঙ্গিতে ৩৬ জন আক্রান্ত হয়েছিলেন। এ বছর সংখ্যাটা লাফ দিয়ে হয়েছে ১২৪। ওই বরোর ৭৪, ৭৬, ৭৭, ৭৮ ও ৭৯ নম্বর ওয়ার্ডে ব্যাপক হারে সংক্রমণ বাড়ছে। এ ছাড়া, ১৩ ও ১৪ নম্বর বরো, অর্থাৎ, হরিদেবপুর ও বেহালায় গত বছর ৫ অক্টোবর পর্যন্ত ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়েছিলেন যথাক্রমে ১২ এবং ৩৩ জন। চলতি বছরে ওই সময়ে আক্রান্তের সংখ্যা যথাক্রমে ৩৩ ও ৫৫।
শহরের ডেঙ্গি পরিস্থিতি নিয়ে ডেপুটি মেয়র তথা পুরসভার মেয়র পারিষদ (স্বাস্থ্য) অতীন ঘোষ বলেন, ‘‘এই সময়ে ডেঙ্গির প্রকোপ বাড়ে। পুজোর প্যান্ডেল, বাঁশে জল জমে থাকলে তাতে মশা জন্মায়। আমরা পুজোকর্তাদের এ বিষয়ে সতর্ক করেছি। পুজোর সমস্ত বাঁশ সরিয়ে ফেলতে বলেছি। সামনেই কালীপুজো। পুর স্বাস্থ্য দফতর সতর্ক নজর রাখছে। সাধারণ মানুষকে সচেতন হতে আবেদন করছি।’’
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)