হাসপাতালে ভর্তি ডেঙ্গি আক্রান্তেরা। — ফাইল চিত্র।
চলতি বছরের শুরু থেকে গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত শহরে ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা ছিল সাড়ে পাঁচ হাজার। শেষ চার সপ্তাহে আক্রান্তের সংখ্যা যথাক্রমে ৬০৬, ৫৯৬, ৭৪৫ এবং ৬৮১। সাপ্তাহিক পরিসংখ্যান দেখলেই বোঝা যাবে যে ডেঙ্গি আক্রান্তের হার কতটা বাড়ছে। সরকারি তথ্যই বলছে, সারা রাজ্যের মধ্যে কলকাতা পুর এলাকায় ডেঙ্গির পজ়িটিভিটি রেট সর্বাধিক।
গত শুক্রবার সাত নম্বর বরো এলাকার ৬৩ নম্বর ওয়ার্ডে ফের এক বালকের ডেঙ্গিতে মৃত্যু হয়েছে। পুর স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, ওই ওয়ার্ডে বাড়ছে ডেঙ্গিআক্রান্ত। ছ’নম্বর ও সাত নম্বর বরো এলাকার একাধিক ওয়ার্ডে ডেঙ্গি ছড়িয়েছে। তথ্য জানাচ্ছে, পুরসভার ১৫ নম্বর বরো এলাকা দীর্ঘদিন ধরে ডেঙ্গিমুক্ত ছিল। বর্তমানে পুর স্বাস্থ্য দফতরের পরিসংখ্যান বলছে, সেই ১৫ নম্বর বরো অর্থাৎ, গার্ডেনরিচ এলাকাতেও ডেঙ্গি আক্রান্তের খোঁজ মিলছে। এক স্বাস্থ্য আধিকারিকের কথায়, ‘‘১৫ নম্বর বরোয় আক্রান্তের সংখ্যা খুব বেশি নয়। তবে দীর্ঘদিন ওই এলাকা যেমন আক্রান্ত শূন্য ছিল, সেটা এখন আর নেই।’’
চিন্তা বাড়াচ্ছে ১২ নম্বর বরোও। এই বরোর ১০৬ নম্বর ওয়ার্ডে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। পুর স্বাস্থ্য দফতরের পরিসংখ্যান বলছে, ওই বরোর ১০১, ১০৬, ১০৭ এবং ১০৯ নম্বর ওয়ার্ডে ডেঙ্গি পরিস্থিতি উদ্বেগজনক। পুরসভার চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, ১২ নম্বর বরোর কসবা, ই এম বাইপাস সংলগ্ন ওয়ার্ডগুলির পরিস্থিতি খারাপ। পরিস্থিতি ভাল নয় মেয়র ফিরহাদ হাকিমের ৮২ নম্বর ওয়ার্ডেরও। ওই ওয়ার্ডে গত চার সপ্তাহে ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা ছিল যথাক্রমে ৬৭, ৮৩, ৯৯ এবং ৯৯। পুর স্বাস্থ্য দফতর জানাচ্ছে, মাস তিনেক আগেই ৮২ নম্বর ওয়ার্ডকে অতিশয় ডেঙ্গিপ্রবণ বলে চিহ্নিত করা হয়েছিল। ওয়ার্ডের চেতলার বিভিন্ন এলাকায় ঘরে ঘরে ডেঙ্গির প্রকোপ। টালিনালা সংলগ্ন ওয়ার্ডগুলিতে ডেঙ্গি সংক্রমণ বাড়ছে বলে মানছেন পুরসভার স্বাস্থ্য আধিকারিকেরা।
এ ছাড়াও ১৩ নম্বর বরোর ১১৫ নম্বর ওয়ার্ড, ১০ নম্বর বরোর ৮১, ৯৩, ৯৮ ও ৯৯ নম্বর ওয়ার্ড, ১১ নম্বর বরোর ১১২ নম্বর ওয়ার্ড এবং ১৪ নম্বর বরোর ১৩১ নম্বর ওয়ার্ডে ডেঙ্গি পরিস্থিতি উদ্বেগজনক। পুরসভার এক স্বাস্থ্য আধিকারিকের কথায়, ‘‘গত তিন মাস ধরে এই সব ওয়ার্ডগুলিতে ডেঙ্গি আক্রান্ত বেড়েই চলেছে। মানুষকে সচেতন হতে অনুরোধ করেও লাভ হচ্ছে না। শীত জাঁকিয়ে না-পড়লে ডেঙ্গি সংক্রমণের হার কমবে না।’’
যদিও অভিযোগ উঠছে, চলতি বছরে মশাবাহিত রোগ দমনে নাগরিকদের সচেতন করতে পুর স্বাস্থ্য দফতরের তরফে সদর্থক ভূমিকা নেওয়া হয়নি। কংগ্রেসকাউন্সিলর সন্তোষ পাঠক বা বিজেপি কাউন্সিলর সজল ঘোষেদের অভিযোগ, ‘‘একমাত্র কলকাতা পুরসভারই ভেক্টর কন্ট্রোল বিভাগ রয়েছে, যার জন্য বছরে মোটা টাকা খরচ হয়। অথচ মশাবাহিত রোগের প্রকোপ কমার লক্ষণ নেই। এর থেকেই বোঝা যাচ্ছে, দফতর কী কাজ করছে।’’ মেয়র ফিরহাদ হাকিমের যুক্তি, মশাবাহিত রোগ দমনে পুরসভা বছরের শুরু থেকেই সচেতন করতে ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে প্রচার চালিয়েছে।মানুষ সচেতন না-হলে এই রোগ নির্মূল করা কঠিন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy