অতীত থেকে শিক্ষা নেয়নি শহরের অধিকাংশ বাজারই। এ শহরে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন বাজার ভস্মীভূত হয়ে গিয়েছে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে। সে সব ঘটনায় মারাও গিয়েছেন বহু মানুষ। প্রতিটি আগুনের ঘটনার পরেই সরকারি তরফে বেশ কিছু ব্যবস্থা নেওয়ার কথা ঘোষণা করা হয়। তৈরি হয় কমিটি। কিন্তু তার পরেও জতুগৃহ হয়ে থাকা বাজারগুলির অবস্থা
বদলায় না।
২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে শিয়ালদহের সূর্য সেন বাজারে ভোরের ভয়াবহ আগুনে পুড়ে ২০ জনের মৃত্যু হয়েছিল। আহত হয়েছিলেন অনেকে। আবার ২০১২ সালের মার্চে আগুন লেগে পুরোপুরি ভস্মীভূত হয়ে গিয়েছিল হাতিবাগান বাজার। সূর্য সেন বাজারের
অগ্নিকাণ্ডে সেখানকার ২০ জন কর্মী দমবন্ধ হয়ে মারা গিয়েছিলেন। কারণ, ওই বাজার থেকে বেরোনোর আপৎকালীন রাস্তা বা সিঁড়ি, কিছুই ছিল না। সোমবার ওই বাজারে গিয়ে দেখা গেল, আগুন নেভানোর জলাধার, জলের পাইপ এবং আপৎকালীন পরিস্থিতিতে বেরোনোর জন্য একাধিক পথ করা হয়েছে ঠিকই, কিন্তু ঘুপচি বাজারের বহু জায়গায় প্লাস্টিকবন্দি সামগ্রী ডাঁই হয়ে পড়ে রয়েছে।
বাজারের দোতলায় গিয়ে দেখা গেল, আপৎকালীন বেরোনোর পথও প্লাস্টিকের বস্তা দিয়ে আটকানো। অর্থাৎ, আগুন লাগলেও সেখান দিয়ে বেরোনো যাবে না। বিভিন্ন দোকানের সামনে বড় বড় প্লাস্টিকের বস্তা ডাঁই হয়ে পড়ে রয়েছে। ফের আগুন লাগলে এই সমস্ত সামগ্রীই যে বড় বিপদের কারণ হতে পারে, তা বিলক্ষণ জানেন সূর্য সেন বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সদস্য অঞ্জন দাস। তাঁর অভিযোগ, ‘‘২০১৩ সালের অগ্নিকাণ্ডের পরে ব্যবসায়ী সমিতির তরফে নানা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করেছি। প্রতি সপ্তাহে আগুন মোকাবিলার মহড়া হয়। জলাধার থেকে পাইপের মাধ্যমে জল ছেটানো হয়। কিন্তু এক শ্রেণির ব্যবসায়ীর সচেতনতার অভাবের কারণে এখনও বিপদ ঘাড়ে বয়ে চলতে হচ্ছে।’’
শিয়ালদহের কোলে মার্কেটের কাছে বিদ্যাপতি সেতুর নীচেও প্লাস্টিকের ছাউনি বিপদের কারণ হতে পারে বলে মানছেন স্থানীয়েরা। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে মেয়র ফিরহাদ হাকিমকে চিঠি লিখেছেন স্থানীয় পুরপ্রতিনিধি মোনালিসা বন্দ্যোপাধ্যায়।
সূর্য সেন বাজারের মতো অনেকটা একই ভাবে ২০১২ সালের ২২ মার্চ ভোরে আগুন লেগে পুরোপুরি পুড়ে গিয়েছিল উত্তর কলকাতার হাতিবাগান বাজার। পরের দিন বিকেলে সেই আগুন নিয়ন্ত্রণে এসেছিল। ওই ঘটনায় কেউ হতাহত না হলেও প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল। জামাকাপড় থেকে বিভিন্ন সামগ্রী— সবই পুড়ে গিয়েছিল। হাতিবাগান বাজারে ঢোকার দু’টি পথ। একটি বিধান সরণির দিকে। আর একটি অরবিন্দ সরণির দিকে। এ দিন ওই বাজারে গিয়ে দেখা গেল, দু’টি প্রবেশপথই প্রায় অবরুদ্ধ। সেখানে ব্যবসায়ীরা তাঁদের সামগ্রী এমন ভাবে রেখে দিয়েছেন, যাতে বাজারে ঢোকা-বেরোনোয় খুবই সমস্যা হচ্ছে। বাজার লাগোয়া ফুটপাত হকারদের প্লাস্টিকের ছাউনিতে ভর্তি। ফের আগুন লাগলে সেই প্লাস্টিক যে বড়সড় বিপদের কারণ হতে পারে, তা মানছেন ব্যবসায়ীরা। তাঁদের একাংশের অভিযোগ, ‘‘ফুটপাতে হকারেরা বিপজ্জনক ভাবে প্লাস্টিক ব্যবহার করছেন। প্রশাসনের তরফেও কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।’’ বাজারের দোতলায় গিয়ে দেখা গেল, কার্বন-ডাইঅক্সাইড ভর্তি সিলিন্ডার আবর্জনার স্তূপে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে রয়েছে।
ওই বাজারে আগুন লাগার ১৩ বছর পরেও জলের হাইড্র্যান্ট তৈরি হয়নি। পুরসভার তরফে বাজারের বাইরে জলের কল তৈরি করা হলেও ভিতরে আগুন নেভাতে পাইপ
বসানো হয়নি। কেন? হাতিবাগান বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি রঞ্জন রায়ের দাবি, ‘‘২০১২ সালে আগুন লাগার পরে দমকলের তরফে বলা হয়েছিল, তারাই বাজারের ভিতরে হাইড্র্যান্টের ব্যবস্থা করে দেবে। কিন্তু আজ পর্যন্ত তা হয়ে ওঠেনি।’’ এই প্রসঙ্গে দমকলের ডিজি রণবীর কুমার বলেন, ‘‘১৩ বছর আগের ঘটনা আমি কিছু জানি না। খোঁজ নিতে হবে।’’ হাতিবাগান বাজারের প্রতিটি দোকানের বাইরে
জিনিসপত্র এমন বিপজ্জনক ভাবে ছড়িয়ে রয়েছে যে, তাতে বাজারের ভিতরের রাস্তাও প্রায় অবরুদ্ধ। বাজারের ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, দমকলের তরফে ফায়ার অডিট করা হয় না। যা নিয়ে দমকলের ডিজি বলেন, ‘‘এ বিষয়ে খোঁজ নেব।’’
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)