Advertisement
০৫ মে ২০২৪

চিকিৎসা না পেয়ে মৃত্যু মেডিক্যালে

সকাল সাড়ে সাতটায় শ্বাসকষ্ট নিয়ে ৬২ বছরের প্রৌঢ়কে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এনেছিলেন ছেলে। সাড়ে বারোটায় মৃত্যু হয় তাঁর। অভিযোগ, বারবার অনুরোধ করা সত্ত্বেও গুরুতর অসুস্থ জীবন দাসকে ভর্তি নেয়নি হাসপাতাল।

অমানবিক: জীবন দাসের দেহ নিয়ে তাঁর মেয়ে। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী

অমানবিক: জীবন দাসের দেহ নিয়ে তাঁর মেয়ে। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী

তিয়াষ মুখোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ০৬ এপ্রিল ২০১৭ ০২:২৮
Share: Save:

সকাল সাড়ে সাতটায় শ্বাসকষ্ট নিয়ে ৬২ বছরের প্রৌঢ়কে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এনেছিলেন ছেলে। সাড়ে বারোটায় মৃত্যু হয় তাঁর। অভিযোগ, বারবার অনুরোধ করা সত্ত্বেও গুরুতর অসুস্থ জীবন দাসকে ভর্তি নেয়নি হাসপাতাল। কার্যত বিনা চিকিৎসায় বাবার মৃত্যু হয়েছে— এই মর্মে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগও দায়ের করেছেন তাঁর ছেলে প্রদীপ দাস।

প্রদীপ দাসের অভিযোগ, বুধবার সকাল সাড়ে সাতটায় তাঁরা হাসপাতালের ইমার্জেন্সিতে পৌঁছনোর পরেই সিটি স্ক্যান ও ইসিজি করে তাঁকে ভর্তি নেওয়ার কথা লিখে দেওয়া হয়। ঘণ্টা খানেকের বেশি সময় লাগে পরীক্ষাগুলি করতে। তত ক্ষণে জীবনবাবুর শ্বাসকষ্ট বাড়লে তাঁকে নেবুলাইজার ও অক্সিজেন দেওয়া হয়। লাগানো হয় ক্যাথিটারও। ওই অবস্থাতেই সব পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর হৃদ্‌রোগ বিভাগে নিয়ে যাওয়ার তোড়জোড় করেন প্রদীপরা। ‘‘একটা ট্রলি পেলাম না, কোনও ওয়ার্ড বয় সাহায্য পর্যন্ত করলেন না। কোনও রকমে একটা চাকা ভাঙা ট্রলি জোগাড় করে আমি আর দিদি ঠেলতে ঠেলতে সেই কত দূরের কার্ডিও বিভাগে নিয়ে গেলাম বাবাকে’’— বললেন প্রদীপ।

কিন্তু অভিযোগ, সেখানে গিয়ে ভর্তি নেওয়া দূরের কথা, চিকিৎসক দেখেননি পর্যন্ত। প্রদীপবাবুর দাবি, তাঁদের লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট করতে বলা হয়। সেটা করার পরেও চিকিৎসক দেখেননি বরং বলা হয় ‘লাইন আছে, অপেক্ষা করুন।’ তত ক্ষণে জীবনবাবুর অবস্থা ক্রমেই খারাপ হচ্ছে। ‘‘আমরা বারবার মিনতি করি, বাবাকে এক বার দেখার জন্য। কিছুতেই এলেন না ডাক্তার। অথচ বাবাকে ভর্তির জন্য ইমার্জেন্সি থেকেই বলে দিয়েছিল।’’— কাঁদতে কাঁদতে বললেন মৃত জীবন দাসের মেয়ে কৃষ্ণা ঘোষ।

প্রদীপ জানান, এই অবস্থাতেই বেশ কিছু অপেক্ষা করার পর সাড়ে বারোটা নাগাদ ঠান্ডা হয়ে আসে জীবনবাবুর হাত-পা। ‘‘বাবার কষ্ট বাড়ছিল, অক্সিজেন মাস্ক খুলে দিতে চাইছিলেন। তখন আমরা চেঁচামেচি করতে শুরু করি।’’— বললেন তিনি। এর পরে চিকিৎসকেরা আসেন, বুকে পাম্প করে শ্বাসপ্রশ্বাস চালানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু সে চেষ্টা সফল হয়নি। মারা গিয়েছেন জীবনবাবু।

জীবনবাবুর জামাই রাজা ঘোষের অভিযোগ, আশঙ্কাজনক অবস্থায় জীবনবাবুকে হাসপাতালে আনা হয়েছিল ঠিকই, কিন্তু তার পরেও উনি পাঁচ ঘণ্টা সময় দিয়েছেন চিকিৎসার। সেই সময়টাই অবহেলা করে নষ্ট করলেন চিকিৎসকেরা। ‘‘চরম অব্যবস্থা। ট্রলি নেই। দু’টো বিভাগের মধ্যে সমন্বয় নেই। ভর্তির কাগজ হাতে নিয়েও ভর্তি করা গেল না মানুষটাকে। স্রেফ গাফিলতিতে মারা গেলেন।’’— দাবি ক্ষুব্ধ রাজার।

হাসপাতালের সুপার শিখা বন্দ্যোপাধ্যায়কে এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি জানান, তিনি ছুটিতে রয়েছেন। অভিযোগ পেলে খতিয়ে দেখবেন। হৃদ্‌রোগ বিভাগের প্রধানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ব্যস্ত আছেন বলে ফোন কেটে দেন। ফোন ধরেননি রোগীকল্যাণ সমিতির সভাপতি নির্মল মাজি, উত্তর দেননি এসএমএস-এরও। কলেজের অধ্যক্ষ তপন লাহিড়ি বলেন, ‘‘যা করার আমরা করব। এখনই এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য করব না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Medical College and Hospital Treatment Dead
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE