Advertisement
E-Paper

‘বিকট শব্দে ঘুরে দেখি বাড়িটাই আর নেই’

বেঁচে আছেন। সেটাই বিশ্বাস হচ্ছে না পাথুরিয়াঘাটা স্ট্রিটের বাসিন্দা দীপক সিংহের। দুঃস্বপ্ন কাটাতে মঙ্গলবার সারা রাত ঘুমন্ত ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে গিয়েছেন বাবা অজয় সিংহ। বুধবার দিনভরও ঘরবন্দিই ছিলেন দীপক। এ দিন ৪২ নম্বর পাথুরিয়াঘাটা স্ট্রিটের ধ্বংসস্তূপ সরানোর কাজ দেখতে পাড়ার অন্য বাসিন্দারা গলির মোড়ে ভিড় করলেও ধারেকাছে যাননি তিনি।

দেবাশিস দাস

শেষ আপডেট: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০০:১৫
ধ্বংসস্তূপ থেকে বার করা হচ্ছে দেহ। মঙ্গলবার রাতে। ছবি: সুমন বল্লভ।

ধ্বংসস্তূপ থেকে বার করা হচ্ছে দেহ। মঙ্গলবার রাতে। ছবি: সুমন বল্লভ।

বেঁচে আছেন। সেটাই বিশ্বাস হচ্ছে না পাথুরিয়াঘাটা স্ট্রিটের বাসিন্দা দীপক সিংহের।

দুঃস্বপ্ন কাটাতে মঙ্গলবার সারা রাত ঘুমন্ত ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে গিয়েছেন বাবা অজয় সিংহ। বুধবার দিনভরও ঘরবন্দিই ছিলেন দীপক। এ দিন ৪২ নম্বর পাথুরিয়াঘাটা স্ট্রিটের ধ্বংসস্তূপ সরানোর কাজ দেখতে পাড়ার অন্য বাসিন্দারা গলির মোড়ে ভিড় করলেও ধারেকাছে যাননি তিনি।

প্রিন্টিংয়ের কাজ করেন দীপক। সেই কাজের জন্যই মঙ্গলবার রাত আটটা নাগাদ ৪২ নম্বর পাথুরিয়াঘাটা স্ট্রিটের বাইন্ডিং কারখানায় গিয়েছিলেন। দীপক বলেন, ‘‘বাইন্ডিং করানোর জন্য আমি মাঝেমধ্যেই ওই বাড়ির কারখানাটায় যাই। মঙ্গলবার রাতেও সেই কাজেই গিয়েছিলাম। কাজ শেষ হওয়ার পরে কারখানার কর্মীরা চা খাওয়ান। বেশ কিছুক্ষণ গল্পও হয়। তার পরে কারখানার গেট থেকে রাস্তায় পা রাখতেই বিকট একটা শব্দ। চমকে ঘুরে দেখি যে বাড়িটার মধ্যে বসেছিলাম, সেই আস্ত বাড়িটাই আর নেই। কোনও রকমে কাঁপতে কাঁপতে বাবাকে ফোন করি।’’

দীপকের বাবা অজয়বাবু জানান, ছেলে যে বাইন্ডিংয়ের কাজে মাঝেমধ্যেই ওই বাড়িতে যেত, তা তিনি জানতেন। বাড়ি ভেঙে পড়ার সময়ে কলকাতা হাইকোর্টের কাছে ছিলেন অজয়বাবু। সেখানেই পাড়ার বাইন্ডিং কারখানার বাড়িটি ভেঙে পড়ার খবর পান। তাঁর বক্তব্য, ‘‘বাড়ি ভাঙার খবর পেয়ে ছেলেকে ফোন করতে যেতেই ছেলের ফোন আসে। শুধু বলে, বাবা আমি বেঁচে গিয়েছি। বাড়ি ফিরে দেখি ছেলে কাঁদছে।’’

ছেলের বরাতজোরে অজয়বাবু যখন স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছেন, তখন ভিটে হারানোর আশঙ্কায় রয়েছেন অরিন্দম মণ্ডল, অশোক মণ্ডল, দীপক সহানি, জ্যোৎস্না মণ্ডল, বিপ্লব সরকার-সহ আরও অনেকে। তাঁদের দাবি, তাঁরা সকলেই ৪২ নম্বর পাথুরিয়াঘাটা স্ট্রিটের বাড়িতে ভাড়া থাকেন। মঙ্গলবার রাত থেকেই বাড়িওয়ালা কমলাপ্রসাদ রাইয়ের পরিবারের সঙ্গে ভাড়াটেরাও আশ্রয় নিয়েছেন ভেঙে পড়া বাড়ির পিছনেই একটি ধর্মশালায়। স্থানীয় কাউন্সিলর ইলোরা সাহাই এই অস্থায়ী ভাবে থাকার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন বলে জানান তাঁরা। এক ভাড়াটে অরিন্দম মণ্ডলের কথায়, ‘‘বছর ষাটের উপরে এই বাড়িতে ভাড়া আছি। কাউন্সিলর আমাদের অনেক বার ডেকে সতর্ক করেছেন। ভিটেছাড়া হওয়ার আশঙ্কায় সেই ডাকে সাড়া দিইনি। এখন আমাদের কী হবে কিছুই জানি না।’’

পাওয়া না-পাওয়ার এই টানাপড়েনের মধ্যেই বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ভাঙা বাড়ির সামনে ঠায় দাঁড়িয়ে কাটিয়েছেন বাড়ির আর এক বাসিন্দা অশোক তিওয়ারি। ধ্বংসস্তূপ থেকে যদি তাঁর কোনও বাক্স বা আলমারি বেরোয়!

pathuriaghata dilapidated building
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy