প্রতীকী ছবি।
‘হাইজ্যাক’ নিয়ে চিন্তিত ‘যোদ্ধারা’।
সীমান্তবর্তী কোনও এলাকা কিংবা বিমানবন্দর নয়। ‘হাইজ্যাক’ হতে পারে আন্দোলন। তাই সতর্ক থাকছেন আন্দোলনকারীরা।
সম্প্রতি একাধিক বার হেনস্থার শিকার হয়েছেন চিকিৎসকেরা। গত সাত মাসে এ রাজ্যে চিকিৎসক ও হাসপাতালের কর্মী নিগ্রহের ৩৬টি ঘটনা ঘটেছে। তার পরেই তৈরি হয়েছে বিভিন্ন চিকিৎসক সংগঠন। কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা ও অভিযুক্তদের দ্রুত শাস্তি দেওয়াই ওই সংগঠনগুলির মূল দাবি।
ওই দাবিতে একাধিক বার পথেও নেমেছেন সংগঠনের সদস্য-চিকিৎসকেরা। সমাবেশ, অবস্থান-বিক্ষোভ ও ধর্মঘট করলেও বারবার তাঁদের তরফে জানানো হয়েছে, এই কর্মকাণ্ড পুরোপুরি ‘অরাজনৈতিক’। কোনও দলীয় রাজনীতির অংশ তাঁরা হতে চান না। শুধু পেশার তাগিদে পথে নেমেছেন। কারণ, বারবার নিরাপত্তা বিঘ্নিত হলে চিকিৎসা পরিষেবাও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। গত সপ্তাহে এই দাবি নিয়ে প্রায় ন’টি ‘অরাজনৈতিক’ চিকিৎসক সংগঠন সুবোধ মল্লিক স্কোয়ারে অবস্থান-বিক্ষোভ করেছিল। নেতৃত্বে ছিল ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল ডক্টর্স ফোরাম’ নামে একটি সংগঠন, যা মূলত গড়ে ওঠে সোশ্যাল মিডিয়ায়। বর্তমানে সদস্য প্রায় সতেরো হাজার।
কিন্তু রাজ্যের শাসক দল সমর্থিত চিকিৎসক সংগঠন ‘প্রোগ্রেসিভ ডক্টর্স অ্যাসোসিয়েশন’ (পিডিএ) ওই ‘অরাজনৈতিক’ আন্দোলনেই ঢোকার চেষ্টা চালাচ্ছে বলে অভিযোগ। সেই নিয়েই সতর্ক একাধিক সংগঠন।
ডেবরায় চিকিৎসক ও নার্স নিগ্রহের প্রতিবাদে এবং অভিযুক্তদের গ্রেফতারের দাবিতে গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় কলকাতা মেডিক্যালে কলেজ হাসপাতালে অনশনে বসেন মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসক অনির্বাণ দলুই। অভিযোগ, তৃণমূলের কর্মীরা ফতোয়া জারি করেন, হাসপাতালে অনশনে বসা চলবে না। পিডিএ-র কিছু চিকিৎসকের সমর্থনে রাত দশটা নাগাদ হাসপাতালে বাইক নিয়ে তৃণমূল কর্মীরা ঢুকে তাঁকে হেনস্থা করেন বলেও অভিযোগ। সে সময়ে আক্রান্তকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসেন আর এক তৃণমূলপন্থী চিকিৎসক-নেতার গোষ্ঠী। এমনটাই জানা গিয়েছে ওই হাসপাতাল সূত্রে।
কখনও ‘ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন’-এর নির্বাচন কেন্দ্র করে, কখনও সরকারি হাসপাতালে অনুষ্ঠানের আয়োজন নিয়ে পিডিএ-র দুই চিকিৎসক-নেতার গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব বারবারই প্রকাশ্যে এসেছে। এ বার তাঁদের এক জন এই আন্দোলনকে ‘সাহায্য’ করে বাজিমাত করতে চাইছেন বলে মত চিকিৎসকদের একাংশের। অনেকেই মনে করছেন, বিবদমান দুই গোষ্ঠীর মধ্যে এক গোষ্ঠীর নেতার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে প্রভাব রয়েছে। তাই পিডিএ-র এক নেতা পরিকল্পনা করছেন, মেডিক্যাল কলেজে সরকারি নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে আন্দোলন উস্কে দিয়ে নিজে নিরাপদ দূরত্বে থাকতে পারলে পুরো দায়টাই পড়বে অপর গোষ্ঠীর ‘প্রতিদ্বন্দ্বী’ চিকিৎসক-নেতার উপরে। তাই ‘অরাজনৈতিক’ আন্দোলনে নিজের গোষ্ঠীর লোক ঢুকিয়ে আন্দোলনের রাশ নিজের হাতে রাখতে চাইছেন তিনি।
যদিও এই আন্দোলনের অন্যতম সংগঠন ‘ডক্টর্স ফর পেশেন্ট’-এর তরফে চিকিৎসক কৃষ্ণেন্দু মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘যে কোনও চিকিৎসক আন্দোলনে যোগ দিতে পারেন। কিন্তু রাজনৈতিক পছন্দটা তাঁর ব্যক্তিগত পরিসরে থাকবে। এই আন্দোলন শুধু চিকিৎসকদের নিরাপত্তার দাবিতে।’’ ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল ডক্টর্স ফোরাম’-এর তরফে চিকিৎসক রেজাউল করিম বলেন, ‘‘কোন রাজনৈতিক দল কী করতে চাইছে, সে ব্যাপারে কোনও প্রতিক্রিয়া জানাতে চাই না। কারণ, আমাদের সংগঠনের নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি এবং কর্মসূচি রয়েছে। এবং সে সম্পর্কে সংগঠনের সদস্যেরা যথেষ্ট সচেতন।’’
এ নিয়ে পিডিএ-র নেতা, চিকিৎসক শান্তনু সেন ও চিকিৎসক নির্মল মাজি মন্তব্য করতে চাননি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy