দীর্ঘ দিনের জমা জলের সমস্যা থেকে মুক্তি দিতে ভূগর্ভস্থ নিকাশির প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল প্রশাসন। কিন্তু পাঁচ বছর পেরিয়ে গেলেও সেই প্রকল্পের কাজ আজও শুরু করা যায়নি। বিধাননগর পুরসভার রাজারহাট-গোপালপুর অংশের ২৭টি ওয়ার্ড এলাকায় ওই প্রকল্পের কাজ আদৌ কবে শুরু হবে, তার কোনও স্পষ্ট উত্তর নেই কারও কাছেই।
বর্তমান বিধাননগর পুরসভার সঙ্গে সাবেক রাজারহাট-গোপালপুর পুর এলাকাকে মেশানো হয়েছে। রাজারহাট-গোপালপুর অংশে বাগুইআটি, কেষ্টপুর-সহ বিভিন্ন জায়গায় অল্প বৃষ্টিতেই জল জমা এবং দীর্ঘদিন ধরে সেই জল জমে থাকার সমস্যা বহু দশক ধরেই চলে আসছে। তৃণমূল পরিচালিত প্রাক্তন বিধাননগর পুর বোর্ড জানিয়েছিল, রাজারহাট-গোপালপুর অংশে ২৭টি ওয়ার্ড এলাকায় ভূগর্ভস্থ নিকাশি ব্যবস্থা গড়ে তুলে ওই সমস্যা মেটানো হবে। ইতিমধ্যে সেই পুর বোর্ডের মেয়াদ শেষ হয়েছে, কিন্তু আজও সেই প্রকল্প কাজ শুরু হয়নি।
রাজারহাট-গোপালপুরের বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ, বিধাননগর পুরসভার সঙ্গে রাজারহাট-গোপালপুরের সাবেক পুরসভার সংযুক্তির পরে জমা জলের সমস্যা মেটাতে কিছু কিছু কাজ করা হয়েছে ঠিকই, কিন্তু তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। ফলে কয়েকটি ওয়ার্ডে নিকাশি ব্যবস্থা আগের চেয়ে কিছুটা উন্নত হলেও জমা জলের যন্ত্রণা পুরোপুরি কমেনি। বাগুইআটির এক বাসিন্দার কথায়, ‘‘শুধু নিকাশি প্রকল্প নয়, বিভিন্ন ভাবে রাজারহাট-গোপালপুরের মানুষ পরিষেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।’’ গৌতম সাহা নামে কেষ্টপুরের এক বাসিন্দার প্রশ্ন, ‘‘আগের তুলনায় জল জমার সমস্যা কিছুটা হলেও মিটেছে। কিন্তু স্থায়ী সমাধানের জন্য নতুন এই প্রকল্প কবে হবে?’’
পুরসভার দাবি, জমা জলের সমস্যা মেটাতে অতিরিক্ত পাম্প বসানো, খাল সংস্কার, কিছু ওয়ার্ডে নিকাশি ব্যবস্থার সংস্কার করা হয়েছে। কিছু ওয়ার্ডে জল জমলেও আগের তুলনায় অনেক দ্রুততার সঙ্গে সেই জল বার করা সম্ভব হচ্ছে। বিধাননগর পুর প্রশাসকমণ্ডলীর সদস্য তাপস চট্টোপাধ্যায় অবশ্য বলছেন, ‘‘এই সমস্যার স্থায়ী সমাধানের জন্য একটি বড় প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। সেই কাজ অনেক দূর এগিয়েছে। তবে প্রক্রিয়াগত কারণে এত বড় প্রকল্পের কাজ শুরু করতে কিছুটা সময় লাগবে। এ ছাড়া করোনা পরিস্থিতির কথাও বিবেচনায় রাখা প্রয়োজন। এই প্রকল্পের জন্য কয়েকশো কোটি টাকার সংস্থান করাও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তাই কিছুটা সময় লাগছে।’’
স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের মতে, এই পরিস্থিতির জন্য শুধু পুরসভা নয়, রাজারহাট-গোপালপুর অংশের অপরিকল্পিত উন্নয়নও অনেকাংশে দায়ী। সরু রাস্তার পাশে একের পর এক বহুতল তৈরি হলেও কোনও নিকাশি ব্যবস্থা তৈরি হয়নি। আবার নিচু এলাকায় দখলদারির কারণেও সমস্যা বেড়েছে।
বিধাননগর পুর প্রশাসকমণ্ডলীর সদস্য দেবাশিস জানা জানাচ্ছেন, নতুন প্রকল্পের জন্য এক বছর ধরে সমীক্ষা চালিয়ে একটি প্রস্তাব তৈরি করা হয়েছে। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞেরা কারিগরি এবং বিভিন্ন দিক খতিয়ে দেখে সেই প্রস্তাব অনুমোদন করে পাঠিয়েছেন। এ বার রাজ্য সরকারের আর্থিক অনুমোদন পেলেই ওই প্রকল্পের কাজ শুরু হবে।