Advertisement
E-Paper

প্রশিক্ষণের পাঠ ভুলছেন চালক, ভুগছে জনতা

কলকাতার মোটর ট্রেনিং স্কুলগুলি জানাচ্ছে, গাড়ি চালানো শেখার প্রশিক্ষণের গোড়াতেই হর্ন বাজানোর নিয়মকানুন নতুন চালককে শেখানো হয়। গাড়ি চালানো শেখার ‘থিওরি কোর্স’-এর মধ্যেই পড়ে সে সব।

কুন্তক চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৮ ডিসেম্বর ২০১৮ ০৩:৪৩
—প্রতীকী ছবি।

—প্রতীকী ছবি।

গাড়ির লাইসেন্স পাওয়ার প্রশিক্ষণের মধ্যেই রয়েছে হর্ন বাজানো নিয়ে বিধিনিষেধ। অভিযোগ, সে সব মানেন না সিংহভাগ গাড়ির চালকই। ফলে হর্নের দাপটেও দেখা দিচ্ছে নানা ধরনের শারীরিক ব্যাধি।

কলকাতার মোটর ট্রেনিং স্কুলগুলি জানাচ্ছে, গাড়ি চালানো শেখার প্রশিক্ষণের গোড়াতেই হর্ন বাজানোর নিয়মকানুন নতুন চালককে শেখানো হয়। গাড়ি চালানো শেখার ‘থিওরি কোর্স’-এর মধ্যেই পড়ে সে সব। এমনকি, লাইসেন্স পাওয়ার পরীক্ষাতেও মোটর ভেহিক্‌লস ওই সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর জানতে চায় নতুন চালকের থেকে। কিন্তু হাতে লাইসেন্স পেলে আর সে সব নিয়ে মাথা ঘামান না সিংহভাগ গাড়ি চালকই।

কলকাতার একটি মোটর ট্রেনিং স্কুলের কর্ণধার অজয় খন্নার কথায়, ‘‘প্রশিক্ষণে সবটাই শেখানো হয়। কিন্তু যানজটে আটকালেই চালকেরা অস্থির হয়ে বারবার হর্ন বাজান।’’

মোটর ট্রেনিং স্কুলগুলির সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক বিমল গুহর কথায়, ‘‘প্রশিক্ষণের শুরুতেই হর্ন বাজানোর বিধিনিষেধ সম্পর্কে শেখানো হয়। চালক সচেতন না হলে কী করব।’’

প্রশাসনের আধিকারিকদের একাংশের মতে, হর্নের তীব্র শব্দের অপকারিতা বোঝার মতো সচেতনতা যাঁদের রয়েছে, তাঁদের চেয়ে শুধুমাত্র রুটি-রুজির জন্য গাড়ি চালানো লোকজনের সংখ্যাই বেশি। তাঁরা অনেকেই এ সব নিয়ে ভাবেন না বলেই মনে করেন প্রশাসনের ওই আধিকারিকেরা। পুলিশ এয়ার হর্ন নিষিদ্ধ করলেও পণ্যবাহী গাড়িতে এয়ার হর্ন বাজান অনেক চালকই।

আর এ সবের কুফল ভুগতে হয় শহরবাসীকেও।

কলকাতা পুলিশ সূত্রে খবর, থানা থেকে ট্র্যাফিকে বদলি হওয়ার কিছু দিনের মধ্যেই এক তরুণ পুলিশ অফিসার কিছু শারীরিক সমস্যায় ভুগতে থাকেন। রাতের ঘুম উড়ে যায়। মেজাজ খিটখিটে হয়ে যাচ্ছিল তাঁর। হর্নের দাপট ও গাড়ির আওয়াজের সমস্যার জেরে তাঁর ওই শারীরিক সমস্যা দেখা দেয় বলে জানান চিকিৎসক ও শারীর বিজ্ঞানীরা।

ইএনটি চিকিৎসক অর্জুন দাশগুপ্তের মতে, লাগাতার শব্দের মধ্যে থাকলে বধিরতার থেকেও বেশি ক্ষতি হয় স্নায়ু, হৎপিণ্ড এবং রক্তচাপের। বহু ক্ষেত্রেই মেজাজ খিটখিটে এবং অবসাদ দেখা দেয়।

স্পেনের বার্সেলোনা ইনস্টিটিউট অব গ্লোবাল হেল্‌থের গবেষণা বলছে, গড় শব্দমাত্রা ১০ ডেসিবেল বা়ড়লে মোটা হওয়ার আশঙ্কা ১৭ গুণ বেড়ে যায়। ঘুমের ব্যাঘাত হলে খিদে কমে যেতে পারে। এসএসকেএম হাসপাতালের এন্ডোক্রিনোলজি বিভাগের শিক্ষক-চিকিৎসক সুজয় ঘোষের মতে, শব্দ দূষণের ফলে হৃদ্‌রোগ, রক্তচাপ বৃদ্ধির মতো অসুস্থতা দেখা দিতে পারে।

মনোরোগ চিকিৎসক সুজিত সরখেলের মতে, গাড়ির হর্নের মধ্যে থাকলে শরীরে ‘স্ট্রেস’ বাড়ে এবং ক্রমাগত ‘স্ট্রেস’ বাড়তে থাকলে খিটখিটে মেজাজ, উদ্বেগ বা়ড়তে পারে।

জাতীয় পরিবেশ আদালতের নির্দেশে দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ সমীক্ষা করে দেখেছিল, কলকাতার বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজের সামনেই শব্দমাত্রা অনেক বেশি। ফলে রোগীদের ক্ষতি তো হবেই, হাসপাতাল চত্বরে অপেক্ষারত রোগীর আত্মীয়েরাও যে অসুস্থ হয়ে প়়ড়তে পারেন, সে কথা বলছেন পরিবেশকর্মীদের অনেকেই।

Horn Driver Motor Training
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy