Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
Durga Puja 2020

আগমনি দূর অস্ত্, মহালয়াতেও প্রতিমা রংহীন

আজ, মহালয়ার সকালে বিদায় নয়, বরং নতুন করে বায়না আসতে পারে বলেও মনে করছেন শিল্পীদের একাংশ।

মৃণ্ময়ী: প্রতিমায় রঙের পোঁচ পড়েনি, কুমোরটুলিতে এখনও চলছে খড় বাঁধার কাজ। ছবি: দেশকল্যাণ চৌধুরী

মৃণ্ময়ী: প্রতিমায় রঙের পোঁচ পড়েনি, কুমোরটুলিতে এখনও চলছে খড় বাঁধার কাজ। ছবি: দেশকল্যাণ চৌধুরী

স্বাতী মল্লিক
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২০ ০৪:১৬
Share: Save:

‘জাগো দুর্গা, জাগো দশপ্রহরণধারিণী...’।

প্রতি বছর মহালয়ার ভোরে এ ভাবেই উমার আবাহনে ঘুম ভাঙে বাঙালির। গঙ্গায় তর্পণের সঙ্গে মিশে যায় আগমনির সুর। তবে কুমোরটুলির কাছে মহালয়া মানেই মেয়েকে বিদায়ের পালা। স্টুডিয়ো ছেড়ে একে একে প্রতিমা পাড়ি দেয় বিভিন্ন গন্তব্যে। কিন্তু এ বছর? কুমোরটুলির মৃৎশিল্পী চায়না পালের কথায়, ‘‘প্রতিমার গায়ে তো এখনও রংই হয়নি। কুমোরটুলিতে এ বার মাটি-খড়ের প্রতিমাতেই হবে মহালয়া।’’ আজ, মহালয়ার সকালে বিদায় নয়, বরং নতুন করে বায়না আসতে পারে বলেও মনে করছেন শিল্পীদের একাংশ।

কোভিড সংক্রমণের জেরে এ বছর প্রতিমা তৈরির কাজই শুরু হয়েছে দেরিতে। সংক্রমণের রেখচিত্র পুজোর সময়ে কেমন থাকবে, পুজোর অনুমতি মিলবে কি না— সেই নিয়ে সংশয়ে বহু পুজো কমিটিই বায়না দিতে গড়িমসি করেছে। আর বাকিরা জানিয়েছে, কম বাজেটে, কম উচ্চতার দুর্গা গড়ে দিতে হবে তাদের। সেই সঙ্গে পাঁজির নিয়মে পুজো পিছিয়ে গিয়েছে পাক্কা এক মাস। তাই এই দুয়ের ধাক্কায় মহালয়ার আগে প্রতিমা তৈরির কাজ শেষ হওয়া তো দূর অস্ত্, গায়ে রঙের পোঁচই পড়েনি।

কোভিডের ভয়কে দূরে সরিয়ে প্রতিমা তৈরিতে আস্তে আস্তে কোমর বেঁধেছে কুমোরটুলি। কোথাও প্রতিমার গায়ে পড়েছে মাটির প্রলেপ, কোনও স্টুডিয়োর সামনে আবার কাঠামো তৈরির কাজ চলছে। কুমোরটুলি মৃৎশিল্পী সংস্কৃতি সমিতির যুগ্ম সম্পাদক রণজিৎ সরকার জানাচ্ছেন, এ বার প্রতিমার সংখ্যা অনেকটাই কম, কমেছে প্রতিমার দামও। সেই সঙ্গে রয়েছে এক মাস সময়। তাই এ বারের মহালয়ায় প্রতিমা নিয়ে যাওয়ার সেই চেনা ছবি দেখা যাবে না কুমোরটুলিতে। বরং আজ সকালে কোনও পুজো কমিটি প্রতিমা গড়ে দেওয়ার বায়না নিয়ে হাজির হতেই পারে বলে মনে করছেন কুমোরটুলি মৃৎশিল্প সমিতির সম্পাদক কার্তিক পাল। তাঁর কথায়, ‘‘অনেক পুজো কমিটি হয়তো এত দিনে পুজো করার ব্যাপারে মনস্থির করেছে। তাই মহালয়ায় বায়না আসতেই পারে। তবে এক মাসের মধ্যে নতুন করে প্রতিমা তৈরি করে দেওয়া সম্ভব কি না, তা শিল্পীর উপরে নির্ভর করছে।’’

আর বাড়ির প্রতিমা? শিল্পী চায়নার কাছে ১০-১২টি বাড়ির প্রতিমার বরাত এসেছে। কিন্তু তাঁদের কেউ-ই এই মহালয়ায় প্রতিমা ঘরে নিয়ে যাচ্ছেন না। ছাঁচে প্রতিমার মুখ গড়তে গড়তে চায়না বলছেন, ‘‘মা-কে বাড়ি নিয়ে গেলে তো এক মাস ধরে পুজো চালিয়ে যেতে হবে। সেটা অনেকেই এড়াতে চাইছেন। তাই পুজোর আগেই প্রতিমা নিয়ে যাবেন বলে বাড়ির লোকেরা জানিয়েছেন।’’

জোড়াসাঁকোর শিবকৃষ্ণ দাঁয়ের বাড়িতে মহালয়ায় পুজোর বিশেষ কোনও আচার-অনুষ্ঠানের পাট নেই। তবে এ বার সেই ঠাকুরদালানেও এখনও প্রতিমার গায়ে রং লাগেনি। প্রতিমার উচ্চতা ১৪ ফুট থেকে কমে দাঁড়িয়েছে ১০-১২ ফুটে। ওই বাড়ির তরফে প্রিয়ব্রত দাঁ বলছেন, ‘‘মহালয়ার পরে প্রতিপদের প্রথম দিন থেকে ঘটপুজো শুরু হয় বাড়িতে। এ বার এক মাস পরের প্রতিপদ থেকে তা শুরু হবে।’’ তবে প্রতি বারের মতোই কৃষ্ণপক্ষের নবমী তিথিতে দেবীর বোধন হয়ে গিয়েছে শোভাবাজার রাজবাড়িতে। এ বছর টানা ৪২ দিন ধরে চলবে সেই বোধনপুজো। রাজবাড়ির তরফে তীর্থঙ্করকৃষ্ণ দেব এবং দেবাশিসকৃষ্ণ দেব জানাচ্ছেন, বাড়ির বয়োজ্যেষ্ঠরাও মনে করতে পারছেন না শেষ কবে এত দিন ধরে বোধনপুজো চলেছে। তাই কাঠামো পুজো, দেবীর বোধন সবই তিথি মেনে হলেও মহালয়ার পরের দিন প্রতিমার চক্ষুদান হচ্ছে না। তা হবে আগামী মাসের প্রতিপদে। তবে কোভিডের কারণে অধিকাংশ বনেদি বাড়িতেই এ বার জনসমাগমে কড়াকড়ি থাকছে। অনলাইনে পুজো দেখানোর ব্যবস্থা করা যায় কি না, সেই চিন্তাভাবনা চলছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Durga Puja 2020 Kumortuli
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE