Advertisement
E-Paper

যানশাসনে পুলিশি ‘তুকতাক’ বাড়াল গতি

ষষ্ঠীর সকালে মল্লিকঘাটে ফুল কিনতে গিয়ে কোনওমতে প্রাণে বেঁচেছিলেন উত্তর কলকাতার এক পুজো কমিটির সদস্য। ফুল-মালার দোকান প্রায় রাস্তায় উঠে এসেছিল। স্ট্র্যান্ড রোডে দাঁড়িয়ে কেনাকাটার সময়ে একটি বাস প্রায় গায়ের উপরে উঠে এসেছিল তাঁর।

শিবাজী দে সরকার

শেষ আপডেট: ৩০ অক্টোবর ২০১৬ ০০:২৭
মল্লিকঘাট ফুলবাজারের ভিড়। শনিবার। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার

মল্লিকঘাট ফুলবাজারের ভিড়। শনিবার। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার

ষষ্ঠীর সকালে মল্লিকঘাটে ফুল কিনতে গিয়ে কোনওমতে প্রাণে বেঁচেছিলেন উত্তর কলকাতার এক পুজো কমিটির সদস্য। ফুল-মালার দোকান প্রায় রাস্তায় উঠে এসেছিল। স্ট্র্যান্ড রোডে দাঁড়িয়ে কেনাকাটার সময়ে একটি বাস প্রায় গায়ের উপরে উঠে এসেছিল তাঁর।

কালীপুজোর দুপুরে মল্লিকঘাটে গিয়ে কার্যত উল্টো অভিজ্ঞতা ওই যুবকের। কোথায় ফুটপাথে বিকিকিনি, রাস্তার উপরে নেমে আসা লোকজন? মল্লিকঘাটে শনিবারের ফুলবাজার যেন আগাগোড়া শৃঙ্খলায় বাঁধা।

এমনিতে দীপাবলি-কালীপুজোয় বড়বাজার এলাকায় পা ফেলাই দায়। কিন্তু এ দিনের ছবিটা যেন সেই অভিজ্ঞতা ভুলিয়ে দিয়েছে। মল্লিকঘাটে কেনাকাটা করতে আসা লোকজন, হাওড়া স্টেশনগামী যাত্রী বা বড়বাজার দিয়ে শহরে আসা লোকেদের প্রশ্ন, কোন জাদুতে চেনা ছবিটা বদলে দিল পুলিশ?

পুলিশ জানায়, কালীপুজো বা লক্ষ্মীপুজো যা-ই থাকুক, ওই সব দিনে মল্লিকঘাট ফুল বাজারে বিক্রেতাদের উপস্থিতি বহুগুণ বেড়ে যায়। তাঁরা বাজারের নির্দিষ্ট জায়গা থেকে রাস্তার উপরে চলে আসায় ব্যাহত হতো বড়বাজার লাগোয়া স্ট্র্যান্ড রোডের যান চলাচল। একটি-একটি করে গাড়ি যাওয়ার ফলে বড়বাজার থেকে গাড়ির সারি পৌঁছে যেত বাবুঘাট পর্যন্ত। এমনিতেই বড়বাজারে ভিড় থাকত। সঙ্গে এই জটের ফলে মহাত্মা গাঁধী রোডে যানবাহনও কার্যত স্তব্ধ হয়ে পড়ত। সেই জট বাড়তে বাড়তে গিলে ফেলত আশপাশের এলাকা এবং চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ, রবীন্দ্র সরণিকে। থমকে যেত হাওড়া ব্রিজও। ভিড় এবং যানজটের যুগলবন্দিতে ঘটত ছোট-বড় দুর্ঘটনাও।

এই ছবিটা বদলে দেওয়ার জন্যই এ বার লক্ষ্মীপুজোর পর থেকে পরিকল্পনা শুরু করেছিলেন ওই এলাকার ট্র্যাফিক পুলিশের অফিসারেরা। পরিকল্পনার জন্য ডেকে নেওয়া হয় মল্লিকঘাট ফুল বাজার সমিতির সদস্যদেরও। তাঁদের সঙ্গে বসে কালীপুজের দিন ওই এলাকার যানচলাচল স্বাভাবিক রাখতে পরিকল্পনা করেন ট্র্যাফিক পুলিশের কর্তারা।

পুলিশ সূত্রে খবর, পরিকল্পনা মতো, শুক্রবার থেকে ফুল বিক্রেতাদের একাংশকে রাস্তায় বসতে দেওয়া হয়নি। শনিবারও তা বজায় রাখা হয়। তা হলে কি ব্যবসা মার খেয়েছে? এলাকার এক পুলিশকর্তা বলছেন, ‘‘ওঁদের পুনর্বাসন দেওয়া হয়েছে।’’ তিনি জানান, ব্রেবোর্ন রোড ফ্লাইওভারের নীচে গাড়ি রাখার তিনটি জায়গায় প্রায় ২০০০ বিক্রেতাকে জায়গা দেওয়া হয়েছে। সেখানে যাঁরা গাড়ি রাখেন, ছুটির দিনে তাঁদের সংখ্যা কম থাকায় অসুবিধে হয়নি বিক্রেতাদের। এ দিন দুপুরে ওই এলাকায় গিয়ে দেখা গেল, ব্রেবোর্ন রোড উড়ালপুলের তলায় রমরমিয়ে চলছে ফুল-বাজার। ক্রেতাদের ভিড়ও রয়েছে। রানাঘাটের ফুল ব্যবসায়ী প্রশান্ত সর্দার জানান, জায়গা বদল হলেও অন্য বারের মতোই বেচাকেনা হচ্ছে। একই মত পুজোর অন্য সামগ্রী বিক্রি করতে আসা ব্যবসায়ীদেরও।

মল্লিকঘাট ফুলবাজার সমিতির সদস্য গৌতম সমাদ্দারের দাবি, পুলিশের সঙ্গে আলোচনা করে বিক্রেতাদের বিকল্প জায়গার ব্যবস্থা হয়েছে। তিনি জানান, পুজোর মতো বিশেষ দিনেও একই ব্যবস্থা হবে এ বার থেকে। এক পুলিশকর্তা জানান, এই ব্যবস্থা আপাতত বিশেষ দিনগুলির জন্য হলেও চেষ্টা করা হচ্ছে তা অন্য সময়েও চালু রেখে স্ট্র্যান্ড রোডের যানজট কমানোর। তিনি জানান, সে ক্ষেত্রে বড়বাজারে আসা ব্যবসায়ীদের গাড়ি কোথায় থাকবে, চিন্তিত লালবাজার।

পরিকল্পনা করে কালীপুজোর দিন হাওড়া ব্রিজ-সহ বড়বাজারের যান চলাচল মোটের উপরে ট্র্যাফিক পুলিশ স্বাভাবিক রাখতে পারলেও, শহরের অন্য প্রান্তে যানজটে ভুগতে হয়েছে। যদুবাবুর বাজারের সামনে কেনাকাটার জন্য শুক্রবার সকাল থেকেই নাকাল হতে হয়েছে ওই এলাকা দিয়ে যাতায়াত করা মানুষকে। টালিগঞ্জের রানিকুঠির বাসিন্দা সুনীল দাস বলেন, শুক্রবার রাতে এক্সাই়়ড মোড় থেকে হাজরা পৌঁছতে বাসে এক ঘণ্টা লেগেছিল! অথচ শনিবার বড়বাজার পেরিয়ে হাওড়া যেতে তাঁর কোনও সমস্যাই হয়নি!

পুলিশ জানায়, স্ট্র্যান্ড রোডের ওই ব্যবস্থা কালীপুজোর শহরে যান চলাচল স্বাভাবিক রেখেছিল। এ ব্যবস্থাই বহাল রাখার চেষ্টা হচ্ছে বিশেষ দিনগুলিতে। বিভিন্ন ট্র্যাফিক গার্ডের আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠক করা হবে বলে লালবাজারের এক কর্তা শনিবার বিকেলে জানিয়েছেন।

pedestrian
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy