বিদেশি মদের বোতলে ভরা দেশি মদ!
ভবানীপুরে একটি গুদাম ঘর থেকে শুক্রবার রাতে ৩৫০ বোতল বিদেশি মদ বাজেয়াপ্ত করেছে রাজ্য আবগারি দফতর। আর সেই বোতল খুলেই পাওয়া গিয়েছে এমন চমকপ্রদ তথ্য। আবগারি দফতরের কলকাতার কালেক্টর সুব্রত বিশ্বাস জানিয়েছেন, বোতলগুলি সিল করা অবস্থাতেই পাওয়া গিয়েছে। বিষয়টি নিয়ে বিশদে তদন্ত শুরু হয়েছে।
বিদেশি বেশ কিছু মদের বোতলে তিনটি ধাপে সিল থাকে। প্রথম সিলটি ছিপির উপরের ঢাকা হিসেবে থাকে। সেটি খোলার পরে ছিপি ঘুরিয়ে সিল ভাঙতে হয়। তার পরেও তৃতীয় ধাপ হিসেবে এই ধরনের বোতলের মুখে এক রকম সিল থাকে, যাতে বোতল উপুড় করলে ভিতরের পানীয় বাইরে আসবে, কিন্তু, বাইরে থেকে কোনও পানীয় ভিতরে ঢালা যাবে না। তা হলে কী করে এই ধরনের বিদেশি মদের বোতলে দেশি মদ ভরা হচ্ছে?
সুব্রতবাবু জানিয়েছেন, তৃতীয় এই সিলগুলিকে ‘গুয়ালা ক্যাপ’ বলা হয়। এক শ্রেণির লোক এখন বোতল না ভেঙে এই সিল খুলে আবার লাগিয়ে দেওয়ার কাজে হাত পাকিয়েছেন। খুব খুঁটিয়ে দেখলে তফাত বোঝা যায়। বাকি প্রথম দু’ধাপের সিল নকল করা এদের কাছে জলভাত বলেও কালেক্টর জানিয়েছেন। সূত্রের খবর, ইদানীং এ কারণে বিদেশি মদের খালি বোতল বেশি দামে বিকোচ্ছে।
রাজ্য সরকারই নিগম তৈরি করে মদের পাইকারি ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করবে, সাম্প্রতিক এমন একটি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তা কার্যকর করার কাজও শুরু হয়েছে। এত দিন যাঁরা বিদেশি মদ ডিস্ট্রিবিউটরের কাজ করতেন, তাঁরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। তাঁরা বাজার থেকে বিদেশি মদ তোলা বন্ধ করে দিয়েছেন। এর ফলে গ্লেনফিডিশ, গ্লেনমরেঞ্জি, শিভাস রিগ্যাল-এর মতো বিদেশি মদের জোগান কমে গিয়েছে।
সুব্রতবাবুর কথায়, ‘‘বিমানবন্দর বা অন্য ডিউটি ফ্রি দোকান থেকে এক দল লোক ঘুর পথে সস্তায় এই বিদেশি মদ জোগাড় করেন। ধরুন, আপনি বাজার থেকে একটি ব্র্যান্ডের বিদেশি মদ ৪ হাজার টাকায় কেনেন। এই লোকেদের যোগাযোগ করলে সেই মদই আপনি সাড়ে তিন হাজার টাকায় পেয়ে যাবেন। অনেক দিন ধরেই এই বেচাকেনা চলছে।’’
সম্প্রতি বাজারে বিদেশি মদের জোগান কমে যাওয়ায় এই চক্রটি আরও সক্রিয় হয়ে উঠেছে। গত তিন-চার মাস ধরে তারা প্রচুর বিদেশি মদ সরবরাহ করেছেন। সুব্রতবাবু বলেন, ‘‘চাহিদা এতটাই বেশি যে নামী বিদেশি ব্যান্ডের খালি বোতলে সস্তার দেশি মদ ভরেও বিক্রি করা হচ্ছে বলে আমাদের সন্দেহ।’’