অনুরাগ
হাতে বেশি টাকা না থাকায় সাধারণ মানুষের এখন নিত্য ভোগান্তি। কিন্তু নগদ টাকা দিতে না পারায় দুর্ঘটনায় মরণাপন্ন একটি শিশুকে ভর্তি না করে ফিরিয়ে দিয়ে বুধবার অমানবিকতার বড় নজির গড়ল মধ্য কলকাতার পার্ক ক্লিনিক। অভিযোগ, শিশুটির বাড়ির লোকজন থেকে শুরু করে পুলিশ আধিকারিকেরা পর্যন্ত সকলেই দফায় দফায় অনুরোধ করলেও অনড় ছিল নার্সিংহোম। তারা সাফ জানিয়ে দেয়, ১০ হাজার টাকা জমা না করলে তাদের পক্ষে শিশুটিকে ভর্তি নেওয়া সম্ভব নয়।
পরে এ প্রসঙ্গে কর্তৃপক্ষের বক্তব্য জানতে চাওয়া হলে নার্সিংহোমের তরফে চিকিৎসক সুদীপ চট্টোপাধ্যায় জানান, তিনি অন্য কাজে ব্যস্ত আছেন। আপাতত এ সম্পর্কে কথা বলার সময় নেই তাঁর। বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার পরে কথা বলবেন।
এ দিন সকালে চার বছরের অনুরাগ যাদবকে যখন নার্সিংহোমে আনা হয় তখন তার মাথা, নাক, মুখ দিয়ে গলগল করে রক্ত বেরোচ্ছে। সারা শরীরে ক্ষত। তার ভাই ও বোনের ততক্ষণে মৃত্যু হয়েছে। মোটরবাইক দুর্ঘটনায় গুরুতর
আহত আড়িয়াদহের অনুরাগকে বেলঘরিয়া রথতলার হাসপাতাল থেকে রেফার করা হয়েছিল কলকাতার বড় কোনও হাসপাতালে। অফিসের ব্যস্ত সময়ে রাস্তায় যাতে সময় নষ্ট না হয়, সে জন্য এগিয়ে এসেছিল বরাহনগর থানার পুলিশ। পাইলট কার-এর ব্যবস্থা করে আধ ঘণ্টার মধ্যে অনুরাগকে নিয়ে তাঁরা পৌঁছে যান পার্ক ক্লিনিকে। কিন্তু ভর্তি করাতে পারেননি। কারণ, নার্সিংহোমের তরফে বলা হয়েছিল— তাদের নিয়ম অনুযায়ী ভর্তির সময়ে নগদ ১০ হাজার টাকা জমা দিতে হবে। তা না হলে ভর্তি নেওয়া যাবে না। শেষ পর্যন্ত স্থানীয় বিধায়কের উদ্যোগে শিশুটিকে ভর্তি করা হয় এসএসকেএম হাসপাতালে।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন পৌনে ৯টা নাগাদ ওই দুর্ঘটনার পরে অনুরাগ, তার দাদা অনিকেত, দিদি সঞ্জনা ও বাবা বিশ্বনাথকে বেলঘরিয়ার রথতলার বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যান ডানলপের ট্রাফিক পুলিশকর্মী এবং এলাকাবাসীরা। সেখানে অনিকেত ও সঞ্জনাকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসকেরা। আর অনুরাগের শারীরিক অবস্থা দেখে তাকে কলকাতার কোনও বড় হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলেন চিকিৎসকেরা। বাড়ির লোকের ইচ্ছে মতোই অনুরাগকে পার্ক ক্লিনিকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল।
কিন্তু ওই নার্সিংহোমের আচরণে হতবাক পুলিশও। বরাহনগর থানার ওসি রাম মণ্ডল জানিয়েছেন, তিনি নিজে ফোনে বারবার অনুরোধ করলেও কাজ হয়নি। ব্যারাকপুরের পুলিশ কমিশনার তন্ময় রায়চৌধুরী বলেন, ‘‘পাইলট কারের অফিসার এবং ওসি দুজনেই বারবার অনুরোধ করেছিলেন। তা-ও হাসপাতাল নগদ টাকা ছাড়া শিশুটিকে ভর্তি নেয়নি। বিষয়টি খুবই অমানবিক।’’
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন সকাল ১০টা নাগাদ বরাহনগর থানার একটি জিপ অনুরাগের অ্যাম্বুল্যান্সটিকে পাইলট করে সাড়ে ১০টা নাগাদ পার্ক ক্লিনিকে পৌঁছে দেয়। পাইলট কারে ছিলেন বরাহনগর থানার এক সাব ইনস্পেক্টর শঙ্কর মুখোপাধ্যায়। তাঁকেও নার্সিংহোমের তরফে সরাসরি ‘না’ বলে দেওয়া হয়। এর পরে ওসি রাম মণ্ডল ফোনে ওই নার্সিংহোমের কর্তাদের সঙ্গে কথা বলেন। তাঁর অনুরোধেও কাজ না হওয়ায় শেষমেষ তিনি বলেন, ‘‘বাচ্চাটির কিছু হলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে নার্সিংহোমের বিরুদ্ধে।’ তাতেও লাভ হয়নি। রক্তাক্ত অবস্থায় প্রায় এক ঘণ্টা নার্সিংহোমের রিসেপশনেই পড়ে থাকে অনুরাগ।
শেষে বরাহনগরের বিধায়ক তাপস রায়কে পুরো বিষয়টি জানান রামবাবু। তাপসবাবুই এসএসকেএমে অনুরাগকে ভর্তির ব্যবস্থা করেন। সেই মতো বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ ফের পাইলট কার-এর ব্যবস্থা করেই অনুরাগকে এসএসকেএমে নিয়ে যাওয়া হয়। রাতে হাসপাতাল সূত্রে জানানো হয়েছে, অনুরাগের অবস্থা খুবই আশঙ্কাজনক।
তাপসবাবু বলেন, ‘‘ওসি-র কাছে ব্যাপারটা শুনে অবাক হয়েছিলাম। বেসরকারি হাসপাতাল ব্যবসা করছে বলে তাদের মানবিক দিক থাকবে না? তা কী করে হয়!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy