Advertisement
E-Paper

অন্যায় বুঝেও সমর্থন করছে হতাশ কামদুনি

হায়দরাবাদের কাছে এক তরুণী পশু চিকিৎসককে গণধর্ষণ করে পুড়িয়ে মারার ঘটনার চেয়ে কম নৃশ‌ংস ছিল না কামদুনির ঘটনাও।

অরুণাক্ষ ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ০৭ ডিসেম্বর ২০১৯ ০৪:২৮
আনন্দ: হায়দরাবাদে পুলিশের গুলিতে ধর্ষণে অভিযুক্তদের মৃত্যুর খবরে উৎসবের আমেজ। শুক্রবার, অজমেরে। ছবি: পিটিআই

আনন্দ: হায়দরাবাদে পুলিশের গুলিতে ধর্ষণে অভিযুক্তদের মৃত্যুর খবরে উৎসবের আমেজ। শুক্রবার, অজমেরে। ছবি: পিটিআই

এক জন মানুষ আর এক জনকে গুলি করে মেরে ফেলবে, এটা কখনওই মেনে নেওয়া যায় না। কিন্তু যখন ধৈর্যের বাঁধ ভাঙে, তখনই এই ধরনের ঘটনা ঘটে। এমনটাই মনে করছে কামদুনি। দিনের পর দিন চলতে থাকা প্রলম্বিত বিচার প্রক্রিয়াকেও এর জন্য কাঠগড়ায় তুলছে কামদুনির নির্যাতিতার পরিবার।

হায়দরাবাদের কাছে এক তরুণী পশু চিকিৎসককে গণধর্ষণ করে পুড়িয়ে মারার ঘটনার চেয়ে কম নৃশ‌ংস ছিল না কামদুনির ঘটনাও। ২০১৩ সালের ৭ জুন কলেজ থেকে বাড়ি ফেরার পথে এক তরুণীকে টেনে নিয়ে গিয়ে গণধর্ষণ করা হয়। তার পরে তাঁকে খুন করে দেহ ছিন্নভিন্ন করার পরে সেই দেহাংশ জলা জমিতে ফেলে আসে দুষ্কৃতীরা। ওই ঘটনার প্রতিবাদে পথে নামে কামদুনি। মাসের পর মাস ধরে চলা সেই আন্দোলনে তোলপাড় পড়ে যায় গোটা দেশে। ধরা পড়ে দুষ্কৃতীরা। ২০১৬ সালে তিন জনকে ফাঁসি ও বাকি তিন জনকে যাবজ্জীবনের রায় শোনায় নগর দায়রা আদালত। সেই মামলা এখন চলছে হাইকোর্টে। হায়দরাবাদের অদূরে গণধর্ষণ ও খুনের ঘটনার পরে চার অভিযুক্তকে গুলি করে মারার খবর শুনে কামদুনির প্রশ্ন, সেখানকার নির্যাতিতা সুবিচার কবে পাবেন?

ঘটনার ছ’বছর পরেও রাতে ঘুমোতে পারে না নির্যাতিতার পরিবার। ধর্ষণের খবর শুনলেই কেঁদে ফেলেন মৃতার মা। শুক্রবার তিনি বললেন, ‘‘এ নিয়ে আর কত বক্তব্য দিতে হবে, কে জানে! দিনরাত ঠাকুরকে শুধু বলি, বিনা অপরাধে মেয়েটাকে যারা মেরে ফেলল, সেই অপরাধীরা তো দিব্যি বেঁচে আছে! হায়দরাবাদের মেয়েটির মা-বাবাকে অন্তত এই যন্ত্রণাটা সহ্য করতে হবে না।’’

কামদুনির ঘটনায় ওই তরুণীর গোটা পরিবারই যেন বেঁচে থাকার অবলম্বন হারিয়ে ফেলেছে। সুবিচার চাইতে পুলিশ, আদালত, প্রশাসন আর রাষ্ট্রপতির দরজায় ঘুরতে ঘুরতে ক্লান্ত নির্যাতিতার দাদা। এ দিন চোয়াল শক্ত করে তিনি বললেন, ‘‘হায়দরাবাদে যা হয়েছে, বেশ হয়েছে! আমাদের মামলা তো বারাসত আদালত থেকে গেল নগর দায়রা আদালতে। সেখানে সাজা ঘোষণার পরে ফের হাইকোর্টে। সেখানে এখনও শুনানিই হল না। আজ বিচারক নেই, তো কাল বদলি হয়ে গিয়েছেন। এক এজলাস থেকে আর এক এজলাসে...। জানি না, কত দিন এ ভাবে চলবে। তিল তিল করে এমন যন্ত্রণা পাওয়ার চেয়ে এটাই ভাল।’’ ধর্ষণের ঘটনার বিচারের জন্য বিশেষ আদালত গড়ার দাবিও জানান ওই যুবক।

যাঁরা কখনও ‘অমানবিক’ কথা বলেননি বা আইন হাতে তুলে নেওয়ার চিন্তা করেননি, কামদুনি আন্দোলনের সেই ‘মুখ’দের গলায় আজ ভিন্ন সুর। মৌসুমি কয়াল বললেন, ‘‘সেই সিনেমার মতো তারিখের পরে তারিখ। এই কারণেই ধৈর্য হারিয়ে আজ হায়দরাবাদ পুলিশকে সেলাম জানাচ্ছি। জানি এটা অন্যায়, কিন্তু এত আন্দোলন, পথ হাঁটা, মোমবাতি মিছিলের পরেও কি ধর্ষণ করে খুনের মতো ঘটনা বন্ধ হয়েছে?’’ মৌসুমির প্রশ্ন, ‘‘এর পরেও ন্যায়-অন্যায় বিচারবোধ ধরে রাখা কি খুব জরুরি?’’

‘‘দেখবেন, এরা এ বার ভয় পাবে। অন্তত কিছু করার আগে দু’বার ভাববে,’’ বলছিলেন কামদুনির আর এক ‘মুখ’ টুম্পা কয়াল। দৃঢ় কণ্ঠে টুম্পা বলেন, ‘‘কামদুনির পরে রাজ্যের অন্তত ১০০টা জায়গায় ধর্ষণের খবর পেয়ে ছুটে গিয়েছি। এই অপরাধ বন্ধ তো হয়ইনি। সাজাও পায়নি কেউ। তা হলে হায়দরাবাদের ঘটনা নিয়ে এত আলোচনার কী আছে?’’

Crime Rape Kamduni Hyderabad Police Encounter
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy