দেশবিদেশের সিনেমার সম্ভার নিয়ে ফের আসছে ‘ফেস্ট৫ আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব ২০২৫’। এ বার দ্বিতীয় সংস্করণ। কলকাতায় ভারতীয় নৃতত্ত্ব সর্বেক্ষণের প্রেক্ষাগৃহে আয়োজিত হচ্ছে এই চলচ্চিত্র উৎসব। চলবে চার দিন ধরে, আগামী ৫-৮ সেপ্টেম্বর। ভারত-সহ ১১টি দেশের বাছাই করা ৩০টি সিনেমা দেখানো হবে এই চলচ্চিত্র উৎসবে।
‘ফেস্ট৫ আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব ২০২৫’-এর মূল লক্ষ্য পরিবেশ এবং জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত বিভিন্ন উদ্বেগের কথা তুলে ধরা। সাম্প্রতিক সময়ে গোটা বিশ্বেই চলচ্চিত্র জগতে এ নিয়ে বিবিধ কাজ চলছে। এ বছরে চলচ্চিত্র উৎসবের আয়োজকদের কাছে মোট ৬৯টি দেশের ৫৫০টি সিনেমার প্রদর্শনীর জন্য আবেদন জমা পড়েছিল। তার মধ্যে থেকে বাছাই করা ৩০টি সিনেমা প্রদর্শিত হবে। এর মধ্যে ১৫টি থাকছে ভারতীয় সিনেমা। ইতালির তিনটি এবং ফ্রান্স, ইজ়রায়েল ও বাংলাদেশের দু’টি করে সিনেমা দেখানো হবে চলচ্চিত্র উৎসবে। এ ছাড়া থাকছে ইরান, জার্মানি, সুইডেন, পর্তুগাল, মেক্সিকো এবং কাজ়াখস্তানের সিনেমাও।
‘ফেস্ট৫ আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব ২০২৫’-এর সঙ্গে ওতপ্রোত ভাবে জড়িত রয়েছেন অভিনেত্রী তথা নৃত্যশিল্পী মমতা শঙ্কর। তাঁর কথায়, “সিনেমাকে সবসময় সমাজের আয়না হিসাবে দেখা হয়েছে। এই চলচ্চিত্র উৎসবের মূল ভাবনায় রয়েছে পরিবেশ, জলবায়ু পরিবর্তন এবং মানুষের মর্যাদা— যা আজকের দিনে ভীষণ ভাবে প্রাসঙ্গিক। সিনেমা শুধু বিনোদন নয়, এই বিষয়গুলি নিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং প্রয়োজনীয় বদল আনার ক্ষেত্রেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রকৃতি, সংস্কৃতি এবং মানবতার পক্ষে কথা বলার জন্য পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তের কণ্ঠস্বর এসে মিলিত হয় এই চলচ্চিত্র উৎসবে।”
ভারতীয় নৃতত্ত্ব সর্বেক্ষণের প্রেক্ষাগৃহে এই চলচ্চিত্র উৎসবের আয়োজন হওয়ায় খুশি নৃতত্ত্ব সর্বেক্ষণের অধিকর্তা বিভি শর্মাও। বিশেষ করে চলচ্চিত্র উৎসবের মূল ভাবনার সঙ্গে ভীষণ ভাবে সহমত তিনি। ভারতীয় নৃতত্ত্ব সর্বেক্ষণের লক্ষ্যের সঙ্গে এই ভাবনা অনেকাংশে মিলে যায় বলে মনে করছেন শর্মা। তিনি বলেন, “ফেস্ট৫ আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব ২০২৫ এমন একটি মঞ্চ, যেখানে গোটা বিশ্বের দর্শকের কাছে সংস্কৃতি, বিজ্ঞান এবং টেকসই পদক্ষেপ মিলেমিশে যায়।” ভারতীয় নৃতত্ত্ব সর্বেক্ষণের উপঅধিকর্তা অমিত ঘোষও জানিয়েছেন, এটি শুধু সিনেমার বিষয় নয়— এটি আমাদের বেঁচে থাকা, টেকসই পদক্ষেপ এবং সার্বিক ভাবে পৃথিবীর প্রতি আমাদের সম্মিলিত দায়িত্বের কথা তুলে ধরে।
চলচ্চিত্র উৎসবে অংশগ্রহণের জন্য বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে চলচ্চিত্র নির্মাতারা যোগাযোগ করেছেন আয়োজকদের সঙ্গে। তা দেখে অভিভূত চলচ্চিত্র উৎসবের ডিরেক্টর সৌরভ দে। তিনি বলেন, “আমাদের কাছে ৬৯টি দেশ থেকে ৫৫০টিরও বেশি সিনেমা জমা পড়েছে। ফলে এ বার প্রদর্শনী এবং পুরস্কৃত করার জন্য বাছাই করার কাজ আরও কঠিন হয়ে উঠেছে।”
সিনেমা দেখানোর পাশাপাশি তরুণ প্রজন্মকে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ দিকের বিষয়ে আরও বেশি করে অবহিত করাও এই চলচ্চিত্র উৎসবের লক্ষ্য। পাশাপাশি তরুণদের পরিবেশ রক্ষাতেও ব্রতী করতে চান আয়োজকেরা। ইতিমধ্যে কলকাতার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যৌথ ভাবে কাজ শুরু করেছেন চলচ্চিত্র উৎসবের আয়োজকেরা। এ বছরের সংস্করণে তরুণদের আরও বেশি করে সুযোগ দেওয়া হয়েছে। ‘সত্যজিৎ রায় স্টু়ডেন্ট ফিল্ম অ্যাওয়ার্ড ২০২৫’ চালু করা হয়েছে তরুণ প্রজন্মের জন্য। এ ছাড়া এ বছরের চলচ্চিত্র উৎসবে দু’টি নতুন বিভাগও আনা হয়েছে। একটি বিভাগ থাকছে বই, গ্রন্থাগার, পাঠ সংস্কৃতি এবং সাহিত্য আন্দোলন সংক্রান্ত সিনেমার উপর। অপর একটি বিভাগ থেকে নৃতত্ত্ব সংক্রান্ত সিনেমার উপর।