Advertisement
E-Paper

Fire: আফশোস হচ্ছে, বৃদ্ধ মানুষটিকে বাঁচাতে পারলাম না

ম্যানেজারের কথা শুনে আমরা কারখানার আরও একটু ভিতরে ঢুকে যাই। ওই সময়েই রাসায়নিকের ড্রামগুলিতে বিস্ফোরণ শুরু হয়।

রাজু ভুঁইয়া

শেষ আপডেট: ০২ জানুয়ারি ২০২২ ০৭:৫৯
তৎপর: কারখানায় আগুন নেভানোর কাজ চলছে। শনিবার, কৈখালিতে।

তৎপর: কারখানায় আগুন নেভানোর কাজ চলছে। শনিবার, কৈখালিতে। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী

সময়টা বেলা ১১টা থেকে সাড়ে ১১টা হবে। আমি এবং আর কয়েক জন বন্ধু স্নান সেরে বাড়ির বাইরে দাঁড়িয়ে ছিলাম। আচমকাই লোকজনের চিৎকার-চেঁচামেচি শুনে এগিয়ে দেখি, আমার বাড়ির কাছে রঙের কারখানার ভিতরে আগুন লেগেছে। কারখানার সামনে পৌঁছতেই দেখি, দাউদাউ করে আগুন জ্বলছে। আতঙ্কে লোকজন ছোটাছুটি শুরু করেছেন।

নিজেদের বিপদের কথা ভুলে আমিও তখন বন্ধুদের সঙ্গে ওই কারখানায় ঢুকে পড়ি। তবে ঢোকার আগে পাশের অন্য একটি কারখানা থেকে ফোমের সিলিন্ডার নিয়ে সেটি স্প্রে করতে করতে ঢুকেছিলাম। সে ভাবেই ভিতর থেকে কয়েক জন কর্মীকে একে একে বার করে আনি। আগুনে ম্যানেজারের পা জখম হয়েছে। আরও যাঁদের বার করেছিলাম, তাঁরাও কমবেশি জখম হয়েছিলেন। ঠিক ওই সময়ে কারখানার ম্যানেজার আমাদের বলেন, ‘‘ভাই আমাকে ছাড়। আমাদের নিরাপত্তাকর্মীকে বাঁচা। বয়স্ক মানুষ। পুড়ে মারা যাবেন।’’

ম্যানেজারের কথা শুনে আমরা কারখানার আরও একটু ভিতরে ঢুকে যাই। ওই সময়েই রাসায়নিকের ড্রামগুলিতে বিস্ফোরণ শুরু হয়। আগুনের শিখা কয়েক গুণ উঁচুতে পৌঁছে যায়। আমাদের দিকেও আগুন ধেয়ে আসতে শুরু করে। সে এক সাংঘাতিক দৃশ্য। নর্দমা দিয়ে বয়ে যাওয়া রাসায়নিকের সঙ্গে তীব্র বেগে ছুটছে আগুন। গলগল করে কালো ধোঁয়া কারখানার উপরে উঠে যাচ্ছে। চার দিকে শুধুই আগুন আর আগুন।

সেই সময়ে কেউ এক জন ভিতর থেকে ‘বাঁচাও’, ‘বাঁচাও’ করে চিৎকার করছিলেন। তখনই বুঝতে পারি, তিনিই ওই নিরাপত্তাকর্মী। ওঁকে আমরা পাড়ায় অনেক বারই দেখেছি। বয়স্ক মানুষ। আমরা ‘কাকা’ বলে ডাকতাম। কিন্তু ওঁকে ভিতর থেকে বার করতে যাওয়ার সময়ে আগুন আমাদের দিকে ভয়ঙ্কর ভাবে ধেয়ে আসে। প্রাণভয়ে আমরাও কারখানা থেকে ছিটকে বেরিয়ে আসি। না হলে আজ আমরাও পুড়ে মারা যেতাম। আমার অনুমান, যখন ভিতরে রাসায়নিকের ড্রামে বিস্ফোরণ হয়, তখনই উনি হৃদ্রোগে আক্রান্ত হন। তার পরে আর আগুন পেরিয়ে উনি ভিতর থেকে বেরোতে পারেননি।

বছরের প্রথম দিনে আমাদের পিকনিক করার কথা ছিল। আগুনের খবর শোনার আগে সবাই সে সব নিয়েই আলোচনা করছিলাম। কে জানত, সেখানে এমন একটা দুর্ভাগ্যজনক ঘটনার সাক্ষী হতে হবে! শুক্রবার রাতেও ওই কাকার সঙ্গে কথা হয়েছে। কারখানায় যিনি নিরাপত্তাকর্মী ছিলেন, তিনি ছুটিতে যাওয়ার পরে শেষ দু’-তিন মাস ওই বৃদ্ধ কাকা সেই দায়িত্ব পালন করছিলেন বলেই জানতাম। পাড়ায় দমকল, পুলিশ, সংবাদমাধ্যমের কর্মী— যাঁকেই দেখেছি, তাঁকেই বলেছি ওই নিরাপত্তাকর্মী আটকে পড়ে আছেন। ওঁকে বাঁচান।

খুব আফশোস হচ্ছে এই ভেবে যে, বৃদ্ধ মানুষটিকে চেষ্টা করেও আমরা বাঁচাতে পারলাম না। এখনও ওঁর সেই আর্তনাদ কানে বাজছে, ‘বাঁচাও, বাঁচাও’।

(লেখক জলের ব্যবসায়ী)

Fire Accident
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy