তখনও গাছের উপরে বেড়ালছানাটি। ছবি: মাসুম আখতার
টানা তিন রাত গাছে আটকে ছিল সে। যদিও তাকে নামানোর চেষ্টা কিছু কম হয়নি। কিন্তু যত বার ধরতে যাওয়ার চেষ্টা হয়েছে, পিছলে বেরিয়ে গিয়েছে বাছাধন। দিন পনেরোর ওই বেড়ালছানাটি কাউকে ভরসা করতে না পেরে ব্যারাকপুরের আনন্দপুরীর আমগাছেই সেঁধিয়ে ছিল। রাতভর চিৎকার করে গেলেও মগডাল থেকে তাকে নামিয়ে আনার উপায় পাচ্ছিলেন না বাসিন্দারা।
তাই ছানাটিকে বাঁচিয়ে রাখতে ডি রোডের বাসিন্দা অভিজিৎ সাহার বাড়ির পিছনের ওই গাছে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছিল অল্প অল্প করে খাবার। শেষ পর্যন্ত রবিবার দুপুরে খবর দেওয়া হয় দমকলে। এ দিন দমকলকর্মীদেরও কম নাকানি-চোবানি খাওয়ায়নি ওই একরত্তি। উপর থেকে তাড়া খেয়ে অবশেষে নিচু ডাল থেকে ঝাঁপ মেরে নেমে আসে সে। তিন দিনের ঝড় সামলে আর খানিকটা অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করে মায়ের লেজে লেজে ঘুরছে সুস্থ ছানা।
অভিজিৎবাবুর মেয়ে, একাদশ শ্রেণির ছাত্রী অঙ্কনা সাহা জানায়, কিছু দূরের পোড়ো বাড়িতে তিনটি বাচ্চার জন্ম দিয়েছিল একটি বেড়াল। দু’টিকে মেরে ফেলে হুলো। এই তৃতীয়টিকে বাঁচাতেই সম্ভবত গাছে তুলে দিয়েছিল মা-বেড়াল। কারণ, ছানার চিৎকারেও মাকে নির্বিকার ভাবে ঘুরতে দেখা গিয়েছে।
আটকে পড়ার এক দিনের মাথায় ওই বাড়ির ভাড়াটে সুব্রত দাশগুপ্ত গাছে উঠে প্রথম সেটিকে নামানোর চেষ্টা করেছিলেন। পরে এগিয়ে আসেন আরও অনেকেই। কিন্তু মানুষকে গাছে উঠতে দেখলেই ছানাটি চড়ে বসছিল উঁচুতে।
সুব্রতবাবুই গাছে উঠে ওর জন্য দুধ রেখে নেমে আসতেন। বেশ কিছু ক্ষণ পরে ছানাটি নেমে তা খেয়ে নিত। এ দিন এক পড়শিই দমকলে খবর দেন।
দমকলকর্মীরা মই গাছে ঠেকিয়ে উঠতেই সেই এক বিপত্তি। ডাল থেকে ডালে লুকোয় সে। খানিক নাস্তানাবুদ হয়ে শেষ পর্যন্ত দু’দিক থেকে গাছে ওঠেন কর্মীরা। দমকল বিভাগের আধিকারিক দয়াল বর্মণ জানান, কর্মীরা গাছের উপরে চড়ে বসায় নীচের ডালে নেমে আসে ছানাটি। তখন তাকে ধরার চেষ্টা করতেই পাঁচিলে ঝাঁপ মারতে গিয়ে পড়ে যায় সে। তা দেখে যখন কেউ কেউ বড় বিপদের শঙ্কা করছেন, তখনই গা ঝেড়ে উঠে দাঁড়ায় খুদে। যা দেখে সবার মুখে তখন হাসি।
নিমেষে হাজির মা-বেড়াল। সন্তানকে চেটেপুটে দু’টির আহ্লাদ দেখে স্বস্তি তখন সকলের চোখে-মুখে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy