Advertisement
E-Paper

গণেশ পুজোর বাজি, তারই মহড়া পাড়ায়

দীপাবলির এখনও দু’মাস দেরি। রবিবার ভারত-পাকিস্তান ক্রিকেট ম্যাচ ছিল না। ছিল না অলিম্পিকসে পদক জয়ের দিন। কলকাতা ফুটবল ময়দানের দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ইস্টবেঙ্গল আর মোহনবাগানেরও কোনও খেলা ছিল না।

দেবাশিস দাস

শেষ আপডেট: ৩০ অগস্ট ২০১৬ ০১:৪৩

দীপাবলির এখনও দু’মাস দেরি। রবিবার ভারত-পাকিস্তান ক্রিকেট ম্যাচ ছিল না। ছিল না অলিম্পিকসে পদক জয়ের দিন। কলকাতা ফুটবল ময়দানের দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ইস্টবেঙ্গল আর মোহনবাগানেরও কোনও খেলা ছিল না। এমনকী, পাড়ার কোনও ক্লাব অন্য পাড়ায় ট্যুর্নামেন্টেও জিতে আসেনি। ভাদ্র মাসে বিয়ে হওয়ার তো প্রশ্নই নেই। তা হলে হঠাৎ রবিবার বিকেলে বিজয়গড় ১১ নম্বর ওয়ার্ডে পূর্ণিমা মৈত্রের বাড়ির সামনে মুহুর্মুহু শব্দবাজি ফাটছিল কেন? হৃদ্‌রোগে পূর্ণিমাদেবীর মৃত্যুর পরে এই প্রশ্ন সামনে এসেছে।

পূর্ণিমাদেবীর মেয়ে পুবালিশিখা মৈত্রের অভিযোগ, তাঁদের বাড়ির সামনে বিকট শব্দে চকোলেট বোমা ফাটাচ্ছিল স্থানীয় কয়েক জন যুবক। তাঁর রোগাক্রান্ত মা শয্যাশায়ী, এ কথা জানিয়ে ওই যুবকদের বাজি ফাটাতে বারণ করলেও তারা কথা শোনেনি এবং শেষমেশ বাজির শব্দেই হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয়ে ওই বৃদ্ধা মারা যান বলে তাঁর মেয়ে অভিযোগ করেছেন।

স্থানীয় একটি সূত্রে খবর, বিজয়গড়ের ১১ নম্বর ওয়ার্ডে যেখানে পূর্ণিমাদেবীর বাড়ি, তার সামনেই বারোয়ারি গণেশ পুজোর আয়োজন করেছেন স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ। এ দিন ওই তল্লাটে গিয়ে দেখা গেল, পুজো মণ্ডপ তৈরি হয়ে গিয়েছে। টাঙানো হয়েছে ব্যানারও।

সাত দিন পরে, ৫ সেপ্টেম্বর গণেশ চতুর্থী। ওই পার্বণে বাজি ফাটানো হবে বলে, রবিবার তার মহড়া দিচ্ছিল কয়েক জন যুবক। সেখান থেকেই যত বিপত্তি বলে জানা গিয়েছে।

এলাকাবাসীদের একাংশ জানাচ্ছেন, দিন কয়েক আগে পাড়ার দুই যুবক দক্ষিণ ২৪ পরগনার চম্পাহাটি থেকে প্রচুর পরিমাণে চকোলেট বোমা কিনে এনেছে গণেশ পুজোয় ফাটাবে বলে। বাসিন্দাদের কেউ কেউ জানাচ্ছেন, সেই বাজির তেজ কতটা, আওয়াজ কতটা বেশি, তার জন্য পরীক্ষামূলক ভাবে পাড়ার গলিতে শব্দবাজি ফাটানো হচ্ছিল সে দিন। পূর্ণিমাদেবীর বাড়ির ঠিক সামনে। কয়েক জন এলাকাবাসী জানান, যেখানে চকোলেট বোমা ফাটছিল, তার আশপাশের বাড়িগুলিতে পূর্ণিমাদেবী ছাড়া আরও কয়েক জন রোগী আছেন। কেউ স্নায়ুরোগে ভুগছেন, কেউ বা হৃদ্‌রোগী। সকলেই বয়স্ক।
সে দিন শব্দদৈত্যের তাণ্ডবে তাঁরাও কষ্ট পেয়েছেন।

সেখানকার আর এক বাসিন্দা জানান, চকোলেট বোমা কিনতে যাওয়া নিয়ে দিন কয়েক আগে ওই দুই যুবকের পরিবারের মধ্যে ঝগড়াও হয়। এক যুবকের পরিজনেরা ঘটনার কথা জেনে অসন্তুষ্ট হন। কেন তাঁদের ছেলেকে নিয়ে শব্দবাজি কিনতে যাওয়া হল, প্রশ্ন তুলেছিলেন তাঁরা। শব্দবাজি নিষিদ্ধ, পুলিশের হাতে ধরা পড়ার আশঙ্কা থাকেই, তাঁরা তা নিয়েও সরব হন।

স্থানীয়েরাই জানান, ওই দিন পূর্ণিমাদেবীর মৃত্যুর পরে এলাকার এক যুবককে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডেকেছিল যাদবপুর থানার পুলিশ। যদিও সোমবার যাদবপুর থানার আধিকারিকেরা এই খবরের সত্যতা স্বীকার করেননি। বাসিন্দাদের একাংশই জানান, ঘটনার রাতে পুলিশ যে যুবককে ডেকে নিয়ে গিয়েছিল, তার নাম গদাই দেব।

সোমবার সকালে গদাইয়ের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, তার মা মীরাদেবী অসুস্থ। তিনি বলেন, ‘‘রবিবার দুপুরে গদাই বাড়িতে ঘুমোচ্ছিল। তখন বাপ্পা নামে একটি ছেলে ওকে ডেকে নিয়ে যায়। এর পরে বিকেলে বাড়ি ফিরলে ফের সন্ধ্যা নাগাদ তিন জন অপরিচিত লোক বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে যায় গদাইকে। পরিচয় জানতে চাইলে তাঁদেরই এক জন বলেন, আমরা পুলিশের লোক। এর পরে আর গদাই বাড়ি ফেরেনি।’’ পুলিশের একটি সূত্রের খবর, এক জন নয়, পাড়ার বেশ কয়েক জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাকা হয়েছিল, পরে ছেড়েও দেওয়া হয়েছে।

Fire crackers
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy