আগুন নেভাতে ব্যস্ত দমকল কর্মীরা। নিজস্ব চিত্র।
অন্য দিনের মতোই সকাল সকাল অফিসে পৌঁছেছিলেন গণেশ রাউত। বিবাদী বাগের একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের সদর দফতরের সাফাইকর্মী। সকাল সা়ড়ে আটটা নাগাদ দোতলার সার্ভার রুমে হঠাৎই একটি শব্দ শুনে গিয়ে দেখেন, ধোঁয়ায় ভরেছে ঘর। সঙ্গে সঙ্গে নীচে এসে জানান নিরাপত্তরক্ষীদের। দু’-এক জন কর্মচারীও তখন তখন আসতে শুরু করেছেন। তাঁদের মধ্যেই ছিলেন তুষার চক্রবর্তী নামের এক কর্মী। গণেশের কথা শুনে উপরে গিয়ে দেখেন, আগুন লেগেছে সার্ভার রুমে। তাঁরই তৎপরতায় সঙ্গে সঙ্গে খবর যায় দমকলে। কিছু ক্ষণ পরে দশটা ইঞ্জিন এসে পৌঁছয় ঘটনাস্থলে। ঘণ্টা তিনেকের চেষ্টায় নিয়ন্ত্রণে আসে আগুন।
মঙ্গলবার সকালের ব্যস্ত সময়ে অফিস পাড়ার এই অগ্নিকাণ্ডে কোনও হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। দমকলকর্মীরা পৌঁছনোর পর ইট ছুড়ে জানলার কাচ ভেঙে দোতলার ঘরটিতে ঢোকার চেষ্টা করেন। এসি ঘরটিতে কোনও ভেন্টিলেশনের ব্যবস্থা ছিল না। এক জন কর্মী জানালেন, প্রচণ্ড ধোঁয়ায় ভিতরে ঢোকাই মুশকিল হচ্ছিল। জানলা ভাঙার পর কিছুটা ধোঁয়া বেরিয়ে গেলে ঘরে ঢুকতে পারেন কর্মীরা। নেভান আগুন। বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীও এসে পৌঁছয় কিছু ক্ষণের মধ্যে।
ঘটনাস্থলে পৌঁছে দেখা গেল, দমকলকর্মীরা উপস্থিত হলেও, সার্ভার রুমের ভেতরটা সম্পূর্ণ পুড়ে গিয়েছে। নষ্ট হয়েছে একাধিক কম্পিউটার, ফাইল, কাগজপত্র। ছত্রাখান হয়ে পড়ে রয়েছে পোড়া চেয়ার, টেবিল, আলমারি। ঝাঁঝরা হয়ে গিয়েছে ওই ঘরের কাঠের মেঝে। ছাইয়ের স্তূপ থেকে তখনও ধোঁয়া উঠছে। সূত্রের খবর, ওই ঘরটি থেকেই ব্যাঙ্কের ওই শাখার চেক ক্লিয়ারেন্স হতো। সেই নিরিখে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ঠিক কতটা, তা নিয়ে এখনই মুখ খুলতে চাননি ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ। তবে ব্যাঙ্কের চেয়ারম্যান রাকেশ শেট্টি জানিয়েছেন, ব্যাঙ্কের সমস্ত নথিরই ব্যাক আপ রাখা হয় নিয়ম মেনে। ওই শাখার উপভোক্তারা কাছাকাছি যে কোনও শাখা থেকে কোর ব্যাঙ্কিংয়ের মাধ্যমে কাজ করতে পারবেন বলেও জানিয়েছেন তিনি।
ঠিক কী থেকে আগুন লাগল, এখনও পরিষ্কার জানা যায়নি। তবে প্রাথমিক ভাবে অনুমান, এসি যন্ত্রে শর্ট সার্কিট হওয়াতেই এই বিপত্তি। ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন দমকলের ডি়জি সঞ্জয় মুখোপাধ্যায়। তাঁর দাবি, দমকলকর্মীরা অত্যন্ত তৎপরতার সঙ্গে কাজ করেছেন। এক জন ডিভিশনাল অফিসার কমলকুমার নন্দী আহত হয়েছে বলেও জানান তিনি। প্রচণ্ড তাপে দু’টি হাতই ঝলসে গিয়েছে তাঁর।
আরও পড়ুন: নবান্নে বোমাতঙ্ক ছড়িয়ে ধৃত প্রৌঢ়
যিনি প্রথম আগুন লাগার খবর দিয়েছিলেন, সেই ব্যাঙ্ককর্মী তুষার চক্রবর্তী অবশ্য দাবি করেছেন, ‘‘আগুন দেখেই ১০১ নম্বরে ডায়াল করি। কিন্তু বেশ কয়েক বার ফোন করার পরেও কেউ তোলেননি। তার পরে ১০০ নম্বরে করি। সেখানে প্রথমেই ফোন তোলেন। পুরো বিষয়টি জানাই।’’ তিনি জানান, প্রথম ফোনটি করেছিলেন পৌনে ন’টা নাগাদ। কিন্তু ন’টার পরেও দমকলের কোনও গাড়ি পৌছয়নি। এর পরে তিনিই ফের লালবাজারের কাছে থাকা দমকলের অফিসে যান। তবে তার আগেই দমকলের সাতটি ইঞ্জিন ঘটনাস্থলে পৌঁছয়।
কিন্তু তুষারবাবুর অভিযোগের পরে প্রশ্ন উঠেছে দমকলের ১০১ নম্বরে ফোন করলেও কেউ ফোন তোলেননি কেন?
ডিজি সঞ্জয় মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘দমকলের সমস্ত ফোনই সব সময় তোলা হয়। এমনকী এ দিনের আগুন লাগার ঘটনাও ১০১ নম্বর থেকেই জানা গিয়েছে বলে জানান তিনি। তাঁর দাবি, ‘‘যিনি অভিযোগ করেছেন তার ফোন হয়ত কোনও কারণে পৌছয়নি। ‘ফলস রিং’ হয়ে থাকতে পারে। বিষয়টি দেখে নিচ্ছি।’’
কিছু পরে ঘটনাস্থলে পৌঁছন শহরের মেয়র ও দমকলমন্ত্রী শোভন চট্টোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘সঙ্গে সঙ্গে এসে আগুন নেভানোর কাজ শুরু করেছে দমকল। এত ধোঁয়া সামলে ভিতরে ঢোকা মুশকিল ছিল। তা সত্ত্বেও বড় কোনও ক্ষতি হওয়ার আগেই অনেক তাড়াতাড়ি সামলানো গিয়েছে বিপর্যয়।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy