শহর জুড়ে এ ভাবেই হোর্ডিংয়ে ঢেকেছে বাড়ি। নিজস্ব চিত্র
গত এক দশকের বেশি শহরের একাধিক বড় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় বারবার বিব্রত হতে হয়েছে প্রশাসন ও পুলিশকে। বিভিন্ন সময়ে অভিযোগ উঠেছে অগ্নি-নির্বাপণ ব্যবস্থার গলদ নিয়েও। সম্প্রতি এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে আগুনের গ্রাসে চলে যাওয়া ভবনকে ঘিরে থাকা হোর্ডিংয়ের বাধা। গত মাসের শেষে গড়িয়াহাট মোড়ের বহুতলের অগ্নিযুদ্ধের সেই বাধাই ফের প্রশ্ন তুলে দিল, হোর্ডিং নিয়ে পুরসভার নজর কতদূর!
দাউ দাউ করে বহুতলে জ্বলছে আগুন। তা নেভানোর জন্য হাজির দমকলের ইঞ্জিনও। জল দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করা হলেও তা কিন্তু ঠিক জায়গায় পৌঁছচ্ছিল না। যার প্রধান বাধা ওই হোর্ডিং। প্রায় পুরো বহুতলই হোর্ডিংয়ের ঘেরাটোপে। সময়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে গেলেও পাইপের সাহায্যে জল দিতে দিয়ে হোর্ডিংয়ের বাধায় পড়তে হয় দমকলকর্মীদের। দমকলের এক অফিসারের কথায়, ‘‘আগুন বাড়ানোর সব উপাদন গড়িয়াহাট মোড়ের ওই বহুতলে মজুত ছিল। তাই দ্রুত কাপড়ের বান্ডিলে জল দিতে পারলে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে আরও সুবিধা হত। কিন্তু সামনে হোর্ডিং থাকায় জল সেখানে সরাসরি পৌঁছতে পারেনি।’’ অগত্যা হোর্ডিং কেটে জল দিতে সময় লেগেছিল। তাতে কিছু সময় নষ্ট হয়েছিল। তাঁর কথায়, ‘‘এমন অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় প্রতিটি মিনিট খুব জরুরি।’’
শুধু ওই বহুতলই নয়, শহরের সর্বত্র ছেয়ে গিয়েছে হোর্ডিংয়ে। গোলপার্কের একটি প্রসিদ্ধ মিষ্টির দোকান রয়েছে পাঁচতলা বহুতলে। সেই বহুতলের পুরোটা ঘেরা হোর্ডিংয়ে। এ সবই কিন্তু পুরসভার লাইসেন্স পাওয়া হোর্ডিং। অর্থাৎ বৈধ। মধ্য কলকাতার চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউয়ের উপরেও হোর্ডিংয়ে ঘেরা এমন কয়েকটি বহুতল রয়েছে। একই অবস্থা শিয়ালদহ এলাকাতেও।
প্রশ্ন উঠছে, ওই সব হোর্ডিংয়ের অনুমোদন দেওয়ার আগে পুর অফিসারেরা কি ভাবেন না, আগুন লাগলে দমকলের জল পৌঁছবার পথে তা যে বাধা পাবে! গড়িয়াহাটের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় সেখানে কর্মরত এক দমকলকর্মীর কথায়, ‘‘এক দিকে হোর্ডিং কাটতে হচ্ছে। তার ফাঁক দিয়ে জলের পাইপ ঢোকানো হচ্ছে। রীতিমতো ঘাম ছুটে গিয়েছে ওই পরিস্থিতি সামলাতে।’’ এ বার সে দিকেই নজর টানা হয়েছে দমকলমন্ত্রীরও। তিনি নিজেও বলেছেন, ‘‘হোর্ডিংয়ের অনুমোদন দেওয়ার ক্ষেত্রে আগুনের কথা মাথায় রাখা দরকার।’’
সে দিন ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন কলকাতা পুরসভার মেয়র পারিষদ এবং স্থানীয় বাসিন্দা দেবাশিস কুমারও। পুরসভার বিজ্ঞাপন দফতরের দায়িত্বে রয়েছেন তিনি। সম্প্রতি এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে, সমস্যার কথা তিনি স্বীকার করে নেন। তাঁর কথায়, ‘‘হোর্ডিং লাগানোর অনুমতি দেয় পুরসভা। তাই বিল্ডিংয়ের উপরে তা লাগানো নিয়ে শর্ত আরোপ করা খুব কঠিন কাজ নয়। মানুষের স্বার্থে অগ্নি-সুরক্ষার কথা ভেবে তা পুর প্রশাসন করবে। তবে দমকল দফতরও পরামর্শ দিতে পারে। তাঁরা কী সুপারিশ করছে, তা দেখেই পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy