E-Paper

মমতার ছবি নিয়েই জিতি, নেত্রীতে ‘আস্থা’ ফিরহাদের

রাজনৈতিক শিবিরের একাংশের মতে, হুমায়ুনকে সামনে রেখে ফিরহাদ এক ঢিলে দুই পাখি মারার চেষ্টা করলেন। তিনি যে তৃণমূল নেত্রীর প্রতি ‘বিশ্বস্ত’, সেই বার্তাই স্পষ্ট করে দিলেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২০ নভেম্বর ২০২৪ ০৫:৩৫
(বাঁ দিকে) মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং ফিরহাদ হাকিম (ডান দিকে)।

(বাঁ দিকে) মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং ফিরহাদ হাকিম (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।

পুলিশের ভূমিকা নিয়ে অসন্তোষ শুরু হয়েছে শাসক শিবিরে। দিন কয়েক আগেই পুলিশকে কাঠগড়ায় তুলে সরব হয়েছিলেন কলকাতার মেয়র তথা পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। তার জের চলতে চলতেই তৃণমূল কংগ্রেসের বিধায়ক হুমায়ুন কবীর মন্তব্য করেছিলেন বর্তমান পরিস্থিতি মাথায় রেখে উপ-মুখ্যমন্ত্রী ও পুলিশমন্ত্রী করা উচিত দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে। এ বার নাম না-করে হুমায়ুনকে বিঁধে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতি আস্থা প্রকাশ করলেন ফিরহাদ। পুলিশ সংক্রান্ত তাঁর আগের মন্তব্যে কার্যত মুখ্যমন্ত্রী তথা পুলিশমন্ত্রী মমতার প্রতি ‘অনাস্থা’ প্রকাশ পেয়েছিল বলে দাবি করেছিল বিরোধীরা। রাজনৈতিক শিবিরের একাংশের মতে, হুমায়ুনকে সামনে রেখে ফিরহাদ এক ঢিলে দুই পাখি মারার চেষ্টা করলেন। তিনি যে তৃণমূল নেত্রীর প্রতি ‘বিশ্বস্ত’, সেই বার্তাই স্পষ্ট করে দিলেন।

কলকাতায় পুর-প্রতিনিধির উপরে সশস্ত্র হামলা, জগদ্দলে প্রাক্তন ওয়ার্ড সভাপতিকে গুলি করে খুনের মতো নানা ঘটনার প্রেক্ষিতে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন ফিরহাদ, তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায়েরা। এক ধাপ এগিয়ে অভিষেককে রাজ্য প্রশাসনের নিয়ে আসার দাবি জানিয়েছিলেন ভরতপুরের তৃণমূল বিধায়ক হুমায়ুন। এই সূত্রেই ফিরহাদ মঙ্গলবার দাবি করেছেন, “মমতা বলিষ্ঠ নেতৃত্ব দিতে সক্ষম। বলিষ্ঠ নেতৃত্বই দিচ্ছেন উনি। এক-আধটা অপরাধমূলক ঘটনা সারা জীবন— বুদ্ধবাবু, জ্যোতিবাবু, সিদ্ধার্থ রায়ের আমলেও ছিল। কিন্তু মমতার আমলেই কেন্দ্রের রিপোর্টে নিরাপদতম শহর হয়েছে কলকাতা। উনি সব কিছু করতে সক্ষম। কাউকে এটা নিয়ে মাথা ঘামাতে হবে না!” এর পরেই ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ প্রসঙ্গে তাঁর বক্তব্য, “অভিষেক আমাদের সন্তান। ঠিক সময়ে আসবে!” পাশাপাশি, নাম না-করে হুমায়ুনকে কটাক্ষও করেছেন ফিরহাদ। তিনি বলেছেন, “আমরা মমতার ছবি লাগিয়ে জিতি। যাঁরা বড় বড় কথা বলেন, তাঁরা মমতার ছবি সরিয়ে একটা নির্বাচন জিতে দেখান।”

কার্যত ফিরহাদের সুরেই এ দিন এই প্রসঙ্গে মুখ খুলেছেন বিধানসভার স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়, রাজ্যের মন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়েরাও। তৃণমূলের বর্ষীয়ান নেতা শোভনদেব বলেছেন, “অভিষেকের যোগ্যতার প্রশংসা করি। কিন্তু কাকে কোথায় বসানো হবে, তা ঠিক করার লোক রয়েছে।”

এই আবহে মমতা-অভিষেককে এক পঙ্‌ক্তিতে বসিয়ে সরব হয়েছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তাঁর মন্তব্য, “মুখ্যমন্ত্রীর ছবি নিয়েও হুমায়ুন হেরেছিলেন। মমতার মতোই কিংবা তার থেকে কিছুটা বেশি পুলিশি নিরাপত্তা পান অভিষেক। পুলিশ দফতর অভিষেক নিয়ন্ত্রণ করেন। আর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ১৩ বছর ধরে পুলিশমন্ত্রী। ফলে, বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবার দ্বারাই পুরো পুলিশি ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রিত। এই পরিবারকে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে বিসর্জন দিতে হবে।” তৃণমূল ছেড়ে বেরিয়ে তিনি যে মমতার ছবি ছাড়াই মুখ্যমন্ত্রী মমতাকে নন্দীগ্রামে হারিয়ে দেখিয়েছেন, সেই কথাও মনে করিয়ে দিয়েছেন শুভেন্দু। অন্য দিকে, সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীর মতে, ‘‘তৃণমূলে তাঁর ছবি নিয়েই যে জিততে হয়, মমতা নিজেই তা একাধিক বার বুঝিয়ে দিয়েছেন। ভোটের সময়ে বারবার বলেছেন, রাজ্যের ২৯৪ আসনেই তিনি প্রার্থী। কিন্তু পুলিশকে কাঠগড়ায় তুলে পুলিশমন্ত্রীর প্রতি অনাস্থা দেখানোর দু’দিনের মধ্যেই ফিরহাদকে এ সব বলতে হচ্ছে কেন? মেয়র-পদ হারানোর ভয়ে!’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘ফিরহাদেরা বুঝিয়ে দিচ্ছেন, পুলিশমন্ত্রীর ছবি এবং পুলিশকে সঙ্গে নিয়েই তৃণমূলকে জিততে হয়।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Mamata Banerjee Abhishek Banerjee TMC Humayun Kabir Kolkata FirhadHakim

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy