পোস্তার গণেশ টকিজের কাছে বিবেকানন্দ উড়ালপুলের ৪০ নম্বর স্তম্ভের ইস্পাতের পাতগুলি নিম্নমানের ছিল। এমনকী, ওই স্তম্ভের নকশাও ছিল ত্রুটিপূর্ণ। নবান্ন সূত্রের খবর, খড়্গপুর আইআইটি-র বিশেষজ্ঞেরা এ ব্যাপারে তাঁদের প্রাথমিক রিপোর্ট দিয়েছেন। বিশেষজ্ঞদের চূড়ান্ত রিপোর্ট জমা পড়লেই রাজ্য সরকার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। নবান্নের এক কর্তা মঙ্গলবার বলেন, ‘‘বিশেষজ্ঞ কমিটি যে সমস্ত সুপারিশ করবে, আমরা তার ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেব।’’
গত ৩১ মার্চ নির্মীয়মাণ ওই উড়ালপুল ভেঙে পড়ে ২৭ জনের মৃত্যু হয়েছিল। কী ভাবে উড়ালপুলটি ভেঙে পড়ল, তা খতিয়ে দেখতে মুখ্যসচিব বাসুদেব বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে উচ্চ পর্যায়ের এক তদন্ত কমিটি গঠন করে রাজ্য সরকার। ওই কমিটিতে রাজ্যের স্বরাষ্ট্রসচিব মলয় দে ছাড়াও রয়েছেন পূর্ত সচিব ইন্দিবর পাণ্ডে, দফতরের চিফ ইঞ্জিনিয়ার এবং আইআইটি খড়্গপুরের তিন ইঞ্জিনিয়ার। তদন্ত কমিটির তরফে ওই তিন বিশেষজ্ঞ ইঞ্জিনিয়ার ঘটনাস্থল ঘুরে দেখে উড়ালপুলের বিভিন্ন স্তম্ভ এবং গার্ডারের ভার বহনের ক্ষমতা সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করেন। দেরিতে হলেও উড়ালপুলের নকশা তাঁদের হাতে আসে গত সপ্তাহে। ঘটনাস্থল পর্যবেক্ষণ এবং তার সঙ্গে নকশা মিলিয়ে দেখেই ওই তিন ইঞ্জিনিয়ার নবান্নে তাঁদের প্রাথমিক রিপোর্ট পেশ করেছেন।
নবান্নের এক কর্তা জানান, উড়ালপুলের নকশা এবং তার সঙ্গে থাকা সামগ্রিক ড্রয়িং দেখে সেটি ভেঙে পড়ার প্রাথমিক একটি কারণ নির্ধারণ করা সম্ভব বলে আইআইটি-র বিশেষজ্ঞ ইঞ্জিনিয়ারেরা সেগুলি দেখতে চেয়েছিলেন। ওই নকশা এবং ড্রয়িং পাওয়ার পরেই তাঁরা নির্মীয়মাণ উড়ালপুলটির বিভিন্ন অংশ আরও খুঁটিয়ে দেখেছেন। পাশাপাশি, উড়ালপুলের ভেঙে পড়া অংশের আশপাশে দু’একটি জায়গা আরও ভাল করে দেখতে হবে বলে রাজ্য সরকারের কাছ থেকে কিছুটা সময় চেয়ে নিয়েছেন বিশেষজ্ঞ ইঞ্জিনিয়ারেরা।
নবান্নের এক কর্তা আরও জানান, রাজীব কুমার পুলিশ কমিশনার থাকার সময়েই বিশেষজ্ঞ কমিটি নির্মাণ সংস্থার কাছ থেকে সমস্ত কাগজপত্র নেন। ইস্পাতের নমুনা সংগ্রহ করে তা ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষাও করানো হয়। তখনই দেখা যায়, স্তম্ভের ইস্পাতের মান যথাযথ ছিল না। ওই কর্তার কথায়, জেএনএনইউআরএম প্রকল্পে ২০০৯ সালে বিবেকানন্দ উড়ালপুল তৈরির কাজ শুরু হয়। কেএমডিএ-র তত্ত্বাবধানে এই কাজ পায় হায়দরাবাদের একটি সংস্থা। দু’কিলোমিটারের কিছু বেশি লম্বা এই সেতুর জন্য খরচ ধরা হয়েছিল ১৬৪ কোটি টাকা। বেশ কিছু দিন কাজ চলার পরে তা বন্ধ হয়ে যায়। ঠিকাদার সংস্থাকে কালো তালিকাভুক্ত করা হয়। ২০১১ সালে নতুন সরকার ক্ষমতায় আসার পরে সেই সংস্থাকেই আবার ফিরিয়ে আনে। তদন্ত কমিটি সূত্রে জানা গিয়েছে, পুরনো দরেই কী ভাবে নির্মাণ সংস্থা কাজ হাতে নিল, তা-ও তদন্তে খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy