Advertisement
E-Paper

জীবন বিমা পেতেও টার্গেট, ছুটতে হয় জীবন বাজি রেখে

সম্প্রতি এই পরিস্থিতির বদল চেয়ে বিক্ষোভ-আন্দোলনের পথে হেঁটেছেন খাবার সরবরাহকারী একাধিক সংস্থার কর্মীরা। কিন্তু পরিস্থিতি বদলায়নি।

নীলোৎপল বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ০৫ ডিসেম্বর ২০২২ ০৮:১৬
ঝুঁকির যাত্রা।

ঝুঁকির যাত্রা। ফাইল চিত্র।

বিমার সুরক্ষা পেতেও ‘টার্গেট’! শহর ও শহরতলি জুড়ে অনলাইন অর্ডারের ভিত্তিতে খাবার সরবরাহকারী সংস্থার ডেলিভারি পার্টনারদের পরিস্থিতি এখন এমনই বলে খবর। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নির্দিষ্ট সংখ্যক ডেলিভারি করতে না পারলে কোনও সুরক্ষাই মেলে না বলে অভিযোগ। পথে দুর্ঘটনায় মৃত্যু ঘটলেও পরিবারকে হন্যে হয়ে ছুটে বেড়াতে হয় বিমার টাকা পেতে। এ দিকে, লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতেই দিনের পর দিন চলতে থাকে তাড়াতাড়ি খাবার পৌঁছনোর এই ঝুঁকির যাত্রা। বালাই থাকে না ট্র্যাফিক সিগন্যাল মানারও।

সম্প্রতি এই পরিস্থিতির বদল চেয়ে বিক্ষোভ-আন্দোলনের পথে হেঁটেছেন খাবার সরবরাহকারী একাধিক সংস্থার কর্মীরা। কিন্তু পরিস্থিতি বদলায়নি। এমনই একটি সংস্থার কর্মী সত্যেন কর্মকার বললেন, ‘‘আমাদের কাজে প্রথম থেকেই উপরি আয়ের লোভ দেখিয়ে লক্ষ্যমাত্রা বেঁধে দেওয়া হয়েছে। টার্গেট পূরণ করার তাড়নাতেই ঘটে যত দুর্ঘটনা। এখন বিমার টাকাও টার্গেট-নির্ভর করে দেওয়া হয়েছে। দেখা যাচ্ছে, যে কাজে আয় করতে জীবনের ঝুঁকি নিতে হয়, সেখানে জীবনকে সুরক্ষিত করতেও ঝুঁকি নিতে হয়!’’

সত্যেন জানান, কলকাতায় বহুল প্রচলিত এমন একটি সংস্থা সরবরাহ কর্মীদের তিনটি আলাদা ভাগে ভাগ করেছে— ‘গোল্ড’, ‘সিলভার’ এবং ‘ব্রোঞ্জ’। তাঁর কথায়, ‘‘ব্রোঞ্জ শ্রেণিভুক্ত কারও মৃত্যু ঘটলে এককালীন ১০ লক্ষ টাকা এবং হাসপাতালে ভর্তির খরচ বাবদ দু’লক্ষ টাকা দেওয়ার কথা উল্লেখ করা আছে। সিলভারে এ সবের পাশাপাশি এক লক্ষ টাকার ‘হেলথ্ কভার’ আছে। সেই সঙ্গে কাজ করতে না পারলে (লস অব পে) টাকা পাওয়ার সুবিধা দেওয়ার কথা উল্লেখ থাকলেও তা কত, সে ব্যাপারে কিছু বলা নেই। গোল্ডের ক্ষেত্রে এ সব কিছুর সঙ্গেই বাড়তি হিসাবে বলা রয়েছে, ডেলিভারি পার্টনারেরপরিবারের কোনও এক জন সদস্যকেও বিমার আওতায় রাখা যাবে। কিন্তু সবই খাতায়-কলমে। কোনওটিই পাওয়া যায় না গোল্ড শ্রেণিভুক্ত না হলে।’’

বিশ্বজিৎ বণিক নামে আর এক ডেলিভারি কর্মীর দাবি, ‘‘গোল্ড শ্রেণিভুক্ত হতে হলে সপ্তাহে অন্তত ৮০টি ভাল অর্ডার পৌঁছে দিতে হবে। কোনও ভাবে টার্গেট পূরণ না হলে বা রেটিং কমে গেলে কিছুই পাওয়া যাবে না।’’ একই পরিস্থিতি খাবার পৌঁছনোর অন্য একটি সংস্থাতেও। তারা সরবরাহ কর্মীদের জন্য তিন লক্ষ টাকার জীবন বিমার ঘোষণা করলেও বেঁধে দিয়েছে টার্গেট। সপ্তাহে নির্দিষ্ট সংখ্যক ‘গুড ডেলিভারি’ করতে না পারলে কিছুই পাওয়ার আশা নেই বলে দাবি কর্মীদের।

‘গুড ডেলিভারি’ কী? এই কাজে যুক্তেরা জানাচ্ছেন, সময় মতো ভাল ভাবে খাবার পৌঁছনোর উপরেই নির্ভর করে সেটি ‘গুড ডেলিভারি’ হিসাবে গণ্য হবে কি না। যে কোনও ডেলিভারির পরেই গ্রাহক সেটির রেটিং দেন। সেই রেটিংয়ের উপরেও নির্ভর করে তা ‘গুড ডেলিভারি’ হল কি না। এক সরবরাহ কর্মীর কথায়, ‘‘অনেক সময়ে দেখা যায়, সময় মতো পৌঁছে গেলেও খাবার বানিয়ে দিতে রেস্তরাঁ দেরি করছে অথবা রেস্তরাঁ ঠান্ডা খাবার দিচ্ছে। বহু ক্ষেত্রে এমনও হয় যে, গ্রাহক লোকেশন ভুল দিয়েছেন বা ফোনের ম্যাপে রাস্তা উল্টোপাল্টা দেখাচ্ছে। এতে ডেলিভারি পার্টনারের দোষ না থাকলেও তাঁর উপরেই দায় এসে পড়ে। রেটিং কম দেওয়া হয়, ‘গুড ডেলিভারি’ হয় না। আয় করতে তো বটেই, বিমার সুবিধা পেতেও কালঘাম ছুটে যায়।’’

অ্যাপ-নির্ভর সংস্থাগুলির যদিও দাবি, এই বিষয়গুলি আগের চেয়ে সরল করা হয়েছে। তা বলে জীবনের সুরক্ষা পাওয়ার ক্ষেত্রেও টার্গেট থাকবে? অ্যাপ-নির্ভর একটি সংস্থার কলকাতা জ়োনের দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিক দিবাকর বর্মা বললেন, “টার্গেট থাকে কাজে উৎসাহ দেওয়ার জন্য। এতে বিপদ হলে বিষয়টি নিয়ে ভাবনাচিন্তা করা হবে।’’ তত দিন উপায়? স্পষ্ট উত্তর মেলেনি।

Food Delivery Agent Insurance
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy