সেই হাতি। —নিজস্ব চিত্র।
হাতির ভরণপোষণ বাস্তবিকই বড্ড ভারী হয়ে পড়েছে। সল্টলেকে বৈশাখী ময়দানের সার্কাস থেকে দিন কয়েক তাকে আটক করে রাখা হয়েছে সল্টলেকের হরিণ বাগানে। কিন্তু পূর্ণবয়স্ক সেই ঐরাবতের জন্য নিত্য কলাপাতা, ডালপালা সমেত কচি বট, ঘন শাঁসালো চেড্ডি ঘাস, ফল-মূল, আটার মণ্ড, এমনকী মুগ-মুসুর ডাল— সামাল দেওয়া কঠিন হয়ে পড়ছে বন দফতরের।
বিধাননগর আদালতের কাছে তাই আবেদন করেছে বন বিভাগ, খানাপিনার খরচে আর পেরে ওঠা যাচ্ছে না। হাতির হেফাজত এ বার অন্য কাউকে দেওয়া হোক।
খাবারের খরচ জোগানোর হ্যাপাই নয়, বন দফতরের দাবি, কেষ্টপুর খালের কিনারে বন বিভাগের হরিণ বাগানের ‘ট্রানজিট ক্যাম্পে’ হাতির মতো ওজনদার জন্তু রাখার পরিকাঠামোও নেই। আদালতের কাছে তাই বনকর্তাদের আর্জি, এই একচিলতে চৌহদ্দির বাইরে অন্য কোথাও তাকে রাখার নির্দেশ দিক মহামান্য আদালত।
বন দফতরের এক কর্তা জানান, ওই ক্যাম্পে হাতি রাখার মতো কোনও পরিকাঠামো নেই। ছোটখাটো খাঁচায় পাখি-হরিণ-বাঁদর কিংবা দায়ে পড়ে বার কয়েক শিয়াল-ভাল্লুকের মতো প্রাণীদের ঠাঁই হয়েছে। কিন্তু হাতির মতো অতিকায় কোনও প্রাণী রাখার জায়গা ওই ট্রানজিট ক্যাম্প নয়।
তা হলে চিড়িয়াখানা?
শুনেই রে রে করে উঠেছিলেন আলিপুর চিড়িয়াখানার অধিকর্তা কানাইলাল ঘোষ। বলেন, ‘‘সেন্ট্রাল জু অথরিটি-র নির্দেশেই চিড়িয়াখানার পুরনো হাতি দু’টিকে পাঠানো হয়েছে উত্তরবঙ্গে। স্থান সঙ্কুলান হয় না বলেই এত কাণ্ড। এর পরেও এখানে বড় হাতি রাখব কী করে!’’
তা হলে উপায়? কপালে ভাঁজ ফেলে বন দফতরের এক শীর্ষ কর্তা জানান, আদালতের রায় তো মানতেই হবে, তবে সার্কাসের ওই হাতিকে পুষতে তাঁদের বিড়ম্বনার শেষ নেই।
এ ভাবে দীর্ঘ দিন হাতিটিকে ‘বন্দি’ রাখাও যাবে না বলেই তাঁদের অনুমান। ধারণাটা শুধু বনকর্তা নয়, বিধাননগর কমিশনারেটের তাবড় উর্দিধারীদেরও।
কেন? বন দফতর সূত্রে খবর, প্রথমত, সার্কাসে হাতি রাখা বেআইনি নয়। তবে সে ক্ষেত্রে হস্তী-মালিকের মালিকানা শংসাপত্র বা ‘ওনারশিপ সার্টিফিকেট’ ও ‘সেন্ট্রাল জু অথরিটি’র তিন বছরের ছাড়পত্র থাকা জরুরি।
বৈশাখী ময়দানের ওই সার্কাস কর্তৃপক্ষের কাছে প্রথমটি থাকলেও দ্বিতীয়টির মেয়াদ ফুরিয়ে গিয়েছিল। তাঁরা দাবি করেছেন, ছাড়পত্র পুনর্নবীকরণের জন্য দিল্লিতে আবেদন করেছিলেন তাঁরা। নিয়মানুযায়ী, ওই আবেদনের উত্তর আসার সময় সীমার মধ্যে হাতিটিকে আটক করা বেআইনি।
কমিশনারেট সূত্রে জানা গিয়েছে, শাসক দলের দুই কাউন্সিলরের টানাপড়েনের ফলে কিছুটা চাপে পড়েই হাতি আটক করতে বাধ্য হয়েছে তারা। কমিশনারেটের এক কর্তা বলছেন, ‘‘কাজটা বোধহয় ঠিক হয়নি!’’
বন দফতরও অপারগ। তা হলে উপায়? সে প্রশ্নে অবশ্য হেলদোল নেই হাতিটির। হরিণ-বাগানে আপন মনে মুগ-মুসুরে মজে রয়েছে সে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy