Advertisement
০৬ মে ২০২৪

কাশীপুর কাণ্ডে ধৃত ২ গোষ্ঠীর চার জন

কাশীপুরে বোমাবাজির ঘটনায় স্বতঃপ্রণোদিত মামলা রুজু করার পরে চার জনকে গ্রেফতার করল পুলিশ। তাদের বিরুদ্ধে দাঙ্গা-হাঙ্গামা, ইচ্ছাকৃত আঘাত, খুনের চেষ্টা-সহ একাধিক জামিন-অযোগ্য ধারায় মামলা দায়ের হয়েছে। বৃহস্পতিবার ধৃতদের শিয়ালদহ আদালতে তোলা হলে পাঁচ দিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দেন বিচারক। পুলিশ জানায়, ধৃতদের নাম মহম্মদ শোয়েব, সাহাবুদ্দিন, সুখেন দাস ও মুন্না সিংহ। বাকি অভিযুক্তদের খোঁজে তল্লাশি চলছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১৭ এপ্রিল ২০১৫ ০০:২২
Share: Save:

কাশীপুরে বোমাবাজির ঘটনায় স্বতঃপ্রণোদিত মামলা রুজু করার পরে চার জনকে গ্রেফতার করল পুলিশ। তাদের বিরুদ্ধে দাঙ্গা-হাঙ্গামা, ইচ্ছাকৃত আঘাত, খুনের চেষ্টা-সহ একাধিক জামিন-অযোগ্য ধারায় মামলা দায়ের হয়েছে। বৃহস্পতিবার ধৃতদের শিয়ালদহ আদালতে তোলা হলে পাঁচ দিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দেন বিচারক। পুলিশ জানায়, ধৃতদের নাম মহম্মদ শোয়েব, সাহাবুদ্দিন, সুখেন দাস ও মুন্না সিংহ। বাকি অভিযুক্তদের খোঁজে তল্লাশি চলছে।

বুধবার ভরদুপুরে মুড়িমুড়কির মতো বোমা পড়ে কাশীপুর উদ্যানবাটী এলাকায়। গুলিও চলে বৃষ্টির মতো। গুলিবিদ্ধ হন দু’জন। তাঁরা আর জি করে ভর্তি। পুলিশ সূত্রে খবর, প্রায় ৩০ রাউন্ড গুলি চলে। বোমা পড়ে সাত-আটটি। ঘণ্টাখানেক ধরে ইট ছোড়াছুড়িও হয়। এর পরেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাস্তায় নামে পুলিশ। রাতেই গ্রেফতার করা হয় চার জনকে।

ঘটনাটি যে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের ফল, তা মালুম হয় বুধবারই। পুলিশ সূত্রে খবর, তৃণমূল নেতা আনোয়ার খানের অনুগামী পাপ্পু সিংহ এলাকা দিয়ে যাচ্ছিলেন। তাঁকে বন্দুক উঁচিয়ে শাসান পুরভোটে দলের প্রার্থী সীতা জয়সোয়ারার ঘনিষ্ঠ স্বপন চক্রবর্তী। তিনি ঘটনাটি স্থানীয় তৃণমূল নেতা নন্দলাল সাউকে জানালে নন্দলাল কাশীপুর থানায় নালিশ করেন। পুলিশ স্বপন চক্রবর্তীকে ডেকে সাবধান করে। এ পরেই জনা ষাটেক ছেলে নিয়ে উদ্যানবাটী এলাকায় চড়াও হন স্বপন। ভাঙচুরের চেষ্টা করেন আনোয়ােরর বাড়িও।

পুলিশ সূত্রে খবর, গ্রেফতারির ক্ষেত্রে উভয় গোষ্ঠীর মধ্যেই ভারসাম্য রক্ষা করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই এলাকা ছিল থমথমে। বেশির ভাগ দোকান ছিল বন্ধ। চলেছে পুলিশের টহল আর মোবাইল ভ্যান। এলাকাবাসী সহজে মুখ খুলতে চাইছিলেন না। এরই মধ্যে বাইক-বাহিনী সহ বিশাল মিছিল নিয়ে বেরোন সীতা জয়সোয়ারা। রতন জায়সবাল নামে স্থানীয় এক মিষ্টির দোকানি বলেন, ‘‘পয়লা বৈশাখে দোকান খোলা রাখব ভেবেছিলাম। হঠাৎ দেখি, কিছু ছেলে দৌড়োদৌড়ি শুরু করল। ইট পড়তে থাকল। বাধ্য হয়ে দোকান বন্ধ করে পালালাম। পরে এসে দেখলাম, ইটের আঘাতে বেঁকে গিয়েছে শাটার।’’

তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের ফলেই যে এই ঝামেলা, তা স্বীকার করে নেন আনোয়ার খান এবং সীতা জয়সোয়ারা দু’জনেই। এ দিন আনোয়ার খান বলেন, ‘‘বুধবার ঝামেলার পরে আমরা থানায় প্রশান্ত, অনিল, শিবু, দিব্যেন্দু, স্বপন-সহ অনেকের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানাই। কিন্তু পুলিশ ওদের না ধরে আমাদের নির্দোষ ছেলেদের ধরে হেনস্থা করতে চাইছে। মানুষই এর জবাব দেবে।’’ তিনি জানান, নির্বাচন কমিশনের কাছে তাঁরা এই এলাকায় শান্তিপূর্ণ ভোট করার আবেদন জানান। তাঁর অভিযোগ, এ দিনের মিছিলেও সীতার পাশে দেখা গিয়েছে স্বপন চক্রবর্তীকে। স্বপনকে হাতিয়ার করে এলাকা দখল করতে চাইছেন সীতা জয়সোয়ারা। সাধারণ তৃণমূলকর্মীরা সীতার পাশে নেই।’’

অন্য দিকে, সীতা সমস্ত দোষ চাপিয়ে দিয়েছেন আনোয়ার খানের উপরেই। তিনি বলেন, ‘‘ওয়ার্ড মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত হয়ে যাওয়ায় আনোয়ার নিজের লোককে ভোটে দাঁড় করাতে পারেনি। তাই সন্ত্রাস তৈরি করতে চাইছে।’’ দলেরও কেউ বুধবারের ঘটনায় যুক্ত ছিল না বলেও তাঁর দাবি। আনোয়ারের সমস্ত দলবিরোধী কাজের ফিরিস্তি উপরমহলে জানিয়েছেন বলে জানান তিনি। তাঁর অভিযোগ, আনোয়ারের লোক পিন্টু সিংহ, নন্দলাল, সেলিম, বাপনরাই গুলি চালিয়েছে।

সব মিলিয়ে ভোটের দু’দিন আগেও থমথমে কাশীপুরের উদ্যানবাটী এলাকা। এলাকার সাধারণ মানুষদের একটাই আশঙ্কা, ‘ভালয় ভালয় ভোটটা মিটলে হয়।’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE