Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

আজ ফিরে যাবেন উমা, উৎসবের শেষ রাতের তাজ ভিড়েরই মাথায়

মহোৎসবের ময়দানি খবর, এ বারের পুজোয় উত্তর কলকাতায় নতুন কিছু তারকা উঠে এসেছে। ভিড় টানার টক্করে এ বার উত্তরকে নেতৃত্ব দিয়েছে আহিরীটোলা আর কুমোরটুলির পুজোগুলি।

আজ বিজয়াদশমী: ট্যাংরার ঘোলপাড়া সর্বজনীন দুর্গোৎসবে আরাধনা। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী।

আজ বিজয়াদশমী: ট্যাংরার ঘোলপাড়া সর্বজনীন দুর্গোৎসবে আরাধনা। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী।

কুন্তক চট্টোপাধ্যায় ও শিবাজী দে সরকার
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ অক্টোবর ২০১৯ ০২:৪২
Share: Save:

দিন কেটেছে ভিড়ের পায়ে পায়ে। সন্ধ্যায়, গভীর রাতেও ভিড়ের উচ্ছ্বাস। এমনকি নবমী নিশির বিদায়বেলা যখন আসি-আসি করছে, কুমোরটুলি-আহিরীটোলায় ভিড়ে ভাটা নেই তখনও! কলেজ স্কোয়ার থেকে বেরিয়ে সারি দিয়ে দর্শকেরা ঢুকছেন সন্তোষ মিত্র স্কোয়ারের দিকে। পঞ্চমী থেকেই পুলিশকে ভুগিয়েছে রাসবিহারী-চেতলা এলাকা। সোমবার গভীর রাতেও সেখানে জনতার ঢল। তার উপরে নিউ আলিপুর-সুরুচি সঙ্ঘেও ক্রমশ বেড়ে চলেছিল ভিড়।

মহোৎসবের ময়দানি খবর, এ বারের পুজোয় উত্তর কলকাতায় নতুন কিছু তারকা উঠে এসেছে। ভিড় টানার টক্করে এ বার উত্তরকে নেতৃত্ব দিয়েছে আহিরীটোলা আর কুমোরটুলির পুজোগুলি। ষষ্ঠীর দিন থেকে নাগাড়ে জনতার ঢল নেমেছে কুমোরটুলি পার্ক, আহিরীটোলা সর্বজনীন, আহিরীটোলা যুববৃন্দে। তার সঙ্গে তাল মিলিয়েছে সন্তোষ মিত্র স্কোয়ার, কলেজ স্কোয়ারের মতো পুরনো তারকারাও। উত্তরে যেমন সন্তোষ মিত্র স্কোয়ারে নবমীর রাতেও জনস্রোত, তেমনই দক্ষিণে লাগাতার ভিড় টেনেছে চেতলা অগ্রণী। নবমীর সন্ধ্যায় উপচে পড়া ভিড়ে খুদেদের সামলাতে চকলেট বিলি করেছেন কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা-প্রধান মুরলীধর শর্মা।

দক্ষিণে চেতলার পাশাপাশি ভিড় বেড়েছে ত্রিধারা সম্মিলনী, বালিগঞ্জ কালচারাল, দেশপ্রিয় পার্ক, সমাজসেবী, একডালিয়া এভারগ্রিনের মতো পরিচিত তারকা-পুজোতেও। এ বার পুজোর ময়দানে তাক লাগিয়ে দিয়েছে বেহালা ক্লাব। মাঝেরহাট সেতু বিপর্যয়, বেহাল রাস্তা পেরিয়ে যে-সব দর্শক বেহালা গিয়েছেন, তাঁদের মূল্যায়ন, বেহালা ক্লাবের মণ্ডপ ও প্রতিমা চোখ জুড়িয়ে দিয়েছে। তারিফ কুড়িয়েছে বেহালা নূতন সঙ্ঘের প্রতিমাও। অরণ্যের পরিবেশে ভিন্ন মাত্রা জুগিয়েছে বেহালা নূতন দল। খাস কলকাতার বাইরে বেশ কিছু পুজো নজর কেড়েছে। বরাহনগরের নেতাজি কলোনি লোল্যান্ডের প্রাসাদোপম মণ্ডপের কারুকাজে মুগ্ধ দর্শক। প্রভূত প্রশংসা কুড়িয়েছে কেষ্টপুরের প্রফুল্ল কানন, অর্জুনপুরের আমরা সবাইয়ের পুজোও।

সন্তোষ মিত্র স্কোয়ারে ঠাকুর দেখার ভিড়। —নিজস্ব চিত্র।

এ বার পুজো নিয়ে নানান আশঙ্কা ছিল। এবং তার অনেকটাই সেতুকে ঘিরে। ভেঙে পড়ার পরে মাঝেরহাটে নতুন সেতু তৈরি হয়নি। তার উপরে পুজোর ঠিক আগেই টালা সেতুতে বিভ্রাট। উৎসবের শহর স্তব্ধ হয়ে যাবে কি না, তা নিয়েও আশঙ্কা ছিল। চতুর্থী-পঞ্চমীতে যানজট ছিল বিভিন্ন রাস্তায়। কার্যত ষষ্ঠী থেকেই গাড়ি চলাচল ও ভিড় নিয়ন্ত্রণের রাশ হাতে তুলে নেয় পুলিশ। নবমীর রাতে উৎসবমুখর শহরের রাস্তা কার্যত মসৃণ রেখেছে লালবাজার। উল্টোডাঙা নিয়েও চিন্তা ছিল অনেকের। শ্রীভূমির ভিড়, ভিআইপি রোডের গাড়ির সারি এবং স্থানীয় নামী পুজোর ভিড়ের ত্র্যহস্পর্শ বাঁচিয়েও স্বাভাবিক গতি বজায় ছিল উল্টোডাঙা চত্বরে। ভিড়ে ঠাসাঠাসি রাসবিহারী এলাকাতেও পরিস্থিতি সামলে দেন উর্দিধারীরা।

কেউ কেউ অবশ্য বলছেন, নবমীতে ভিড় তুলনায় কম ছিল। তবে বিকেলের তুলনায় রাতে কিছুটা ভিড় বেড়েছে। তার ফলে পরিস্থিতি ভাল হয়েছে। পুলিশকর্তাদের যুক্তি, এ বার রাস্তায় যত্রতত্র ভিড়ের পারাপার এবং অবৈধ পার্কিং বন্ধ করা হয়েছে। সেই জন্যই রাস্তায় মারাত্মক জট দেখা যায়নি। রাসবিহারীর মতো কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে ভিড়ের কারণেই বেশি যানজট হয়েছে।

জনতার অকুণ্ঠ ধন্যবাদ কুড়িয়েছেন প্রকৃতিদেবী এবং বরুণদেব। ঝড়বৃষ্টির আশঙ্কা, দোলাচল নিয়ে বোধন হয়েছিল দুর্গার। নবমী নিশি বলছে, বিক্ষিপ্ত বৃষ্টি হলেও উৎসব মাটি হয়নি। এমনকি উৎসবের প্রাক্কালে মেট্রো রেলে প্রায় নিত্যদিন বিভ্রাট হলেও পুজোর সময় মোটের উপরে নির্বিঘ্নে চলাচল করতে পেরেছেন যাত্রীরা।

অদৃশ্য রেফারির মুখে উৎসব কাপের ফাইনাল ম্যাচের বাঁশি। নবমীর রাতশেষে পায়ে পায়ে ক্লান্তি। তবে বাড়িমুখী জনতার মুখে আলো। পুজো ময়দান বলছে, কোনও পুজো কমিটি, মেট্রো বা পুলিশ নয়। সেতু বিভ্রাট, যানজটের আশঙ্কা, বিরূপ আবহাওয়ার ভ্রুকুটি উপেক্ষা করে যাঁরা পথে নেমেছিলেন, সেই অদম্য দর্শকের হাতেই উঠেছে উৎসব কাপ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Durga Puja 2019 Durga Puja
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE