গার্ডেনরিচে নির্মীয়মাণ বহুতল ভেঙে ১৩ জনের মৃত্যুর ঘটনায় অন্যতম মূল অভিযুক্ত জমির মালিক মহম্মদ শাহনওয়াজকে নিয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য হাতে এসেছে কলকাতা পুলিশের। তদন্তকারীদের সূত্রে জানা গিয়েছে, গ্রেফতারি এড়াতে নাম-পরিচয় বদলে বর্তমানে সংযুক্ত আরব আমিরশাহিতে গা-ঢাকা দিয়েছেন তিনি। নির্দিষ্ট ভাবে আবুধাবিতেই শাহনওয়াজ আস্তানা গেড়েছেন বলে কলকাতা পুরসভাকে জানিয়েছে লালবাজার। এই পরিস্থিতিতে পলাতক অভিযুক্তকে দেশে ফেরাতে এ বার তৎপরতা বাড়াল প্রশাসন। ইতিমধ্যেই তাঁর বিরুদ্ধে ইন্টারপোলের মাধ্যমে ‘ইয়েলো কর্নার নোটিস’ জারি করা হয়েছে।
২০২৪ সালের ১৩ মার্চ গার্ডেনরিচের ফতেপুর এলাকায় একটি অবৈধ নির্মীয়মাণ বহুতল ভেঙে পড়ে প্রাণ হারান ১৩ জন। ঘটনার পর থেকেই বেপাত্তা ছিলোন জমির অন্যতম মালিক শাহনওয়াজ। প্রাথমিক তদন্তে তাঁর নামে ‘লুক আউট’ নোটিস জারি করা হলেও তাঁকে ধরা সম্ভব হয়নি। পুলিশ সূত্রে খবর, দুর্ঘটনার পর বেশ কিছু দিন কলকাতা ও সংলগ্ন শহরতলি এলাকায় লুকিয়ে ছিলেন তিনি। এরপর লোকসভা নির্বাচনের সময় যখন পুলিশ ও প্রশাসনের নজর অন্য দিকে ব্যস্ত ছিল, সেই সুযোগেই দেশ ছাড়েন শাহনওয়াজ। তদন্তে জানা গিয়েছে, শাহনওয়াজ আগেও কর্মসূত্রে একাধিক বার দুবাই ও আবুধাবিতে গিয়েছিলেন। সেখানে তাঁর পরিচিতি ও যোগাযোগ রয়েছে। সেই যোগাযোগ কাজে লাগিয়েই তিনি আবুধাবিতে নির্মাণশিল্পে নতুন কাজে যোগ দিয়েছেন। নিজের আসল পরিচয় লুকিয়ে সেখানে সে গা-ঢাকা দিয়ে রয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছে লালবাজার। ভারত পোর্টালের মাধ্যমে ইন্টারপোলের কাছে তার সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য চাওয়া হয়েছে যাতে দ্রুত তাঁকে চিহ্নিত করা যায়।
ঘটনার ৮৮ দিনের মাথায় পুলিশ যে চার্জশিট জমা দিয়েছিল, তাতে জমির মালিক ও প্রোমোটার-সহ মোট ৬ জনকে অভিযুক্ত করা হয়। পুলিশের দাবি, বাড়িটি সম্পূর্ণ বেআইনি ভাবে জলাশয় বুজিয়ে তৈরি করা হচ্ছিল। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে খুনের মামলা রুজু করে ট্রায়াল শুরু হলেও শাহনওয়াজ পলাতক থাকায় বিচারপ্রক্রিয়া কিছুটা বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছিল।
লালবাজারের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, ‘‘বিদেশের মাটিতে অপরাধীর অবস্থান নিশ্চিত হওয়ার পর এ বার তাঁকে প্রত্যর্পণের প্রক্রিয়া শুরু করা হবে। ইয়েলো কর্নার নোটিসের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক স্তরে তথ্য আদান-প্রদান করে তাঁকে জালে তোলাই আমাদের মূল লক্ষ্য।’’ কলকাতার বুকে এত বড় বিপর্যয়ের মূল কারিগরকে শেষ পর্যন্ত পুলিশ কী ভাবে ফিরিয়ে আনে, তা অবশ্য সময়ই বলবে।
আরও পড়ুন:
ঘটনাচক্রে, গার্ডেনরিচের যে এলাকায় এই নির্মীয়মাণ বহুতলটি ভেঙে পড়েছিল, তা কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিমের বিধানসভা কেন্দ্র কলকাতা বন্দরের অন্তর্গত। এই ঘটনায় কড়া পদক্ষেপ করে এগ্জ়িকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার পদমর্যাদার অফিসারকে সাসপেন্ড করেছিল পুরসভা। সম্প্রতি ওই জমির মালিকের অবস্থান জানার পর কলকাতা পুরসভার বিল্ডিং বিভাগের এক আধিকারিক বলছেন, ‘‘ওই অভিযুক্তকে ভারতে ফিরিয়ে এনে উপযুক্ত সাজা দিতে চায় কলকাতা পুরসভা। তাই এ ক্ষেত্রে পুলিশের তরফ থেকে যে কোনও ধরনের সাহায্য চাওয়া হলে তা আমরা করতে প্রস্তুত।’’