Advertisement
E-Paper

বিদ্যুৎ-জল ছাড়াই পোড়া বাড়িতে চার পরিবার

আস্ত একটি বাড়ি। যাতে রয়েছে ৩২টি ফ্ল্যাট। বাইরের দিকে ১২টি দোকান এবং সংলগ্ন ফুটপাতে ৪৫-৫০টির মতো স্টল। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত হাজার হাজার লোকের আনাগোনা আর কোলাহলে ভরে থাকত ওই বাড়ি ও তার সামনের ফুটপাত।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২২ জানুয়ারি ২০১৯ ০২:১৩
আগুন নিভে যাওয়ার পরে গড়িয়াহাটের সেই বহুতল। সোমবার। ছবি: সুমন বল্লভ

আগুন নিভে যাওয়ার পরে গড়িয়াহাটের সেই বহুতল। সোমবার। ছবি: সুমন বল্লভ

আস্ত একটি বাড়ি। যাতে রয়েছে ৩২টি ফ্ল্যাট। বাইরের দিকে ১২টি দোকান এবং সংলগ্ন ফুটপাতে ৪৫-৫০টির মতো স্টল। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত হাজার হাজার লোকের আনাগোনা আর কোলাহলে ভরে থাকত ওই বাড়ি ও তার সামনের ফুটপাত।

কিন্তু শনিবার রাতের অগ্নিকাণ্ডের পরে সেই বাড়ি ও তার বাইরের ছবিটা বদলে গিয়েছে এক লহমায়। বাইরের সব দোকান ও হকারদের স্টল পুড়ে গিয়েছে। সিইএসসি কেটে দিয়ে গিয়েছে বিদ্যুতের লাইন। ফলে সন্ধ্যার পর থেকেই গোটা বাড়ি অন্ধকারে ডুবে গিয়েছে।

ওই চত্বর জুড়ে এখন শুধুই কাঠ, শাড়ি, জামাকাপড় আর ব্যাগের পোড়া স্তূপ। সঙ্গে পোড়া গন্ধ। আর সেই পোড়া স্তূপের উপরেই দল বেঁধে দাঁড়িয়ে কিংবা বসে রয়েছেন পুড়ে যাওয়া দোকানের মালিক, কর্মচারী থেকে শুরু করে হকারেরা। মাঝেমধ্যে দোকানের ভিতরের পোড়া স্তূপ থেকে আগুনের ফুলকি দেখতে পেলেই তাঁরা ছুটছেন জল নিয়ে। পাছে নতুন করে আগুন না ছড়িয়ে পড়ে, সেই আতঙ্কে। শনিবারের অগ্নিকাণ্ডের পরে গুরুদাস ভবনের ভিতরের ও বাইরের জীবন বদলে গিয়েছে এ ভাবেই। তবে বাইরে লোকজনের কোলাহল থাকলেও ভিতরে শুধুই শূন্যতা।

শনিবার রাতেই ওই বহুতলের আবাসিকেরা প্রাণ বাঁচাতে ফ্ল্যাট ছেড়ে কোনও রকমে নেমে এসেছিলেন রাস্তায়। রবিবার দুপুরে আগুন নেভার পরে তাঁরা অনেকেই ফ্ল্যাটে ফিরে আসেন। কিন্তু দেখা যায়, বিদ্যুৎ নেই, জল নেই। জ্বালানো যাবে না গ্যাস বা কোনও কিছুই। ওই অবস্থায় সেখানে থাকা যে সম্ভব নয়, তা বুঝেই প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র গুছিয়ে আবাসিকেরা অধিকাংশই চলে যান আত্মীয়-বন্ধুদের বাড়িতে। কয়েক জন আশ্রয় নিয়েছিলেন স্থানীয় একটি গেস্ট হাউসে।

রুদ্রনীল ভট্টাচার্য (বাঁ দিকে) ও পৌলোমী গঙ্গোপাধ্যায়। নিজস্ব চিত্র

কিন্তু সোমবার গিয়ে দেখা যায়, অধিকাংশ বাসিন্দা ফ্ল্য়াট ছেড়ে অন্যত্র চলে গেলেও চারটি ফ্ল্যাটের আবাসিকেরা ফিরে এসেছেন গুরুদাস ভবনে। কেউ রবিবার রাতে, তো কেউ সোমবার সকালে। যেমন, পৌলোমী গঙ্গোপাধ্যায় ও তাঁর স্বামী সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। বিদ্যুৎ ও জলহীন ফ্ল্যাটেই এ দিন তাঁরা ফিরে আসেন।

পৌলোমী জানান, তাঁদেরই উপরতলার একটি ফ্ল্যাট অগ্নিকাণ্ডের পরে খোলা ছিল। অভিযোগ, সেই ফ্ল্যাট থেকে কিছু জিনিসপত্র চুরি হয়েছে। সে কথা শুনেই তিনি ও তাঁর স্বামী পোড়া বাড়িতেই ফিরে আসার সিদ্ধান্ত নেন। তবে ৮৮ বছরের ঠাকুরমা ছবিদেবী ও শ্বশুর-শাশুড়ি সমীর গঙ্গোপাধ্যায় এবং কুমকুমদেবীর শ্বাসকষ্টের সমস্যা থাকায় তাঁরা আশ্রয় নিয়েছেন আত্মীয়ের বাড়িতে। কিন্তু জল, বিদ্যুৎ ছাড়া আছেন কী করে? পৌলোমী জানান, বাইরে থেকে খাবার আর জলের বোতল কিনে এনেছেন। আর রাতে মোমবাতি জ্বালিয়ে থাকবেন। একই ভাবে ওই বহুতলের ৪৭এ এবং ৪৭বি গড়িয়াহাট রোডের দিকে রয়ে গিয়েছে আরও তিন পরিবার। তারাও বাইরে থেকে খাবার এবং জলের বোতল আনিয়ে রেখেছে। কত দিন এ ভাবে থাকবেন? রুদ্রনীল ভট্টাচার্য নামে এক বাসিন্দার কথায়, ‘‘এই বাড়িতে চারটি গেট রয়েছে। বড় রাস্তার উপরে হওয়ায় সব সময়েই চুরির আশঙ্কা রয়েছে। গোটা বাড়িতে কেউ না থাকলে যে কোনও সময়ে চুরি হতে পারে। এ ভাবেই থাকতে হবে। কিছু করার নেই।’’

কিন্তু বিদ্যুৎ কবে আসবে? রুদ্রনীল জানান, সেটা জানা নেই। তবে পিছনের দিকের অংশে আগুন ছড়ায়নি। ফলে কাউন্সিলর, পুলিশ, দমকলকে তাঁরা আবেদন করবেন, যাতে পিছনের অংশে বিদ্যুৎ সংযোগ তাড়াতাড়ি চালু করে দেয় সিইএসসি। তত দিন তাঁরা এ ভাবেই থাকবেন।

Gariahat Gariahat Fire Kolkata Fire Electricity Fire Water
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy