Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

‘মেয়েকে নিজের মতো করেই বাঁচতে বলেছি’

প্রথমে মনে হচ্ছিল, অন্ধকার ওর জন্য নিরাপদ নয়। তাই সূর্য ডোবার পরে ও যেন একা বাইরে না যায়, সে কথাই বলেছিলাম। এর পরেই মনে পড়ল, গত কয়েক বছরে ঘটে যাওয়া বেশ কয়েকটি ঘটনার কথা।

ইনসেটে জয়িতা দাশগুপ্ত 

ইনসেটে জয়িতা দাশগুপ্ত 

জয়িতা দাশগুপ্ত 
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ ডিসেম্বর ২০১৯ ০১:৫৬
Share: Save:

হায়দরাবাদের ঘটনা আমাদের এক মুহূর্তও স্বস্তিতে থাকতে দিচ্ছে না। খবরটা সামনে আসার পরে সেই রাতে খাওয়ার টেবিলেও আলোচনা চলছিল, আমাদের আঠেরো বছরের মেয়ের নিরাপত্তা নিয়ে। কী ভাবে এই ধরনের ঘৃণ্য ঘটনা এড়িয়ে ওকে একটা সুস্থ জীবন দেওয়া সম্ভব, এ সব নিয়েই ভাবছিলাম। এর পরে বেশ কয়েকটা দিন কেটে গেলেও সেই দুশ্চিন্তা থেকে কিছুতেই বেরোতে পারছি না আমরা।

প্রথমে মনে হচ্ছিল, অন্ধকার ওর জন্য নিরাপদ নয়। তাই সূর্য ডোবার পরে ও যেন একা বাইরে না যায়, সে কথাই বলেছিলাম। এর পরেই মনে পড়ল, গত কয়েক বছরে ঘটে যাওয়া বেশ কয়েকটি ঘটনার কথা। যার একটি ঠিক সাত বছর আগের। যে ঘটনা নাড়িয়ে দিয়েছিল গোটা দুনিয়াকে। সেখানে তো মেয়েটি একা ছিলেন না। তাঁর সঙ্গী ছিলেন এক পুরুষ বন্ধুও। তাতেও তো মেয়েটিকে বাঁচানো যায়নি! তবে কি পাশ্চাত্য পোশাক, অর্থাৎ ছোট স্কার্ট কিংবা হাল ফ্যাশনের জামা পরা মেয়েরাই উন্মত্ত শিকারীদের লক্ষ্য? কিন্তু এ দেশে তো শাড়ি পরা কত মেয়ে আছেন, যাঁদের এমন খারাপ ঘটনার শিকার হতে হয়। নিজের মনকে প্রবোধ দেওয়া কথাগুলোকে নিজের মনই যুক্তি দিয়ে নস্যাৎ করে দিচ্ছিল। আর তাতেই ক্রমশ আরও ঘাবড়ে যাচ্ছিলাম।

সত্যি কথা বলতে কি, আমার মেয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে বিভ্রান্ত হই এখন। পড়াশোনার জন্য কিংবা বন্ধুদের সঙ্গে বেড়াতে তো ওকে এ দিক-ও দিক যেতেই হয়। কিন্তু আগের মতো ওকে স্বাধীন দেখতে যেন ভয় লাগছে আমাদের। ওর সব বায়না মানতেও আজকাল দ্বিধা হচ্ছে। অথচ বরাবর তো মেয়েকে নিজের মতো করেই বাঁচতে বলেছি।

ছোট্ট থেকেই ওকে সাহসী হতে বলতাম। এক জন পুরুষ যা পারে, তার সবই সে-ও যেন করতে পারে, এমনটাই তো বলতাম। যেটা নিজের মনে হবে যে করা উচিত নয়, শুধু সে কাজই ওকে করতে নিষেধ করতাম। নিজেই বুঝতে পারছি, আচমকা আমাদের সেই চিন্তাধারা খানিকটা হলেও বদলে যাচ্ছে।

কিন্তু নিজস্ব ভাবনা, পোশাক বদলে ফেলেও তো ধর্ষণের মতো অপরাধ ঠেকানো যাবে না। আমি আমার মেয়ের জন্য যতই নিরাপত্তা দিই, প্রতিরোধ করতে যতই সে চেষ্টা করুক, বিপদ যে হবে না, তা তো জোর দিয়ে বলার পরিস্থিতি এখন নেই। কোনও নির্দিষ্ট নিয়ম নেই, যা ধর্ষককে ঘায়েল করতে পারে।

বাবা-মা হিসেবে এখন তাই আমরা নিজেদের মতো করেই প্রতিরোধের প্রস্তুতি নেব ঠিক করেছি। আত্মরক্ষার জন্য এ শহরে কোথায় প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়, তার খোঁজ করছি। সেখানে আমার দুই ছেলেমেয়েকে পাঠাতে চাই। দুশ্চিন্তা এখন আমাদের নিত্যসঙ্গী ঠিকই, কিন্তু আমার মেয়ের জীবনটা কোন পথে চলবে, তা বিকৃত মানুষেরা ঠিক করে দেবে, এটাও মেনে নিতে পারছি না।

লেখক শিক্ষিকা

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Woman Safety Woman's Security
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE