Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
Google Map

Google: পুলিশকেও পথের ভিড়ের হদিস দেবে গুগ্‌ল

ব্যস্ত সময়ে রাস্তার হাল ফেরাতে অপারেটিং সিস্টেম গুগ্‌লের এই ‘ম্যাপের জাদুকাঠি’ই এ বার ব্যবহার করার কথা ভাবছে কলকাতা পুলিশ।

ফাইল চিত্র।

নীলোৎপল বিশ্বাস
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৯ মে ২০২২ ০৬:১৩
Share: Save:

কম সময়ে দ্রুত গন্তব্যে পৌঁছনোর আগে মোবাইলের ম্যাপে পথের ট্র্যাফিক পরিস্থিতি দেখে নিতে এখন আমজনতা অভ্যস্ত। সেই ম্যাপে যাত্রাপথে লাল রং দেখালেই চিন্তার ভাঁজ কপালে। অর্থাৎ, যে পথে গন্তব্যে পৌঁছনোর চেষ্টা করা হচ্ছে, সেখানে রয়েছে প্রবল যানজট। আগাম তা বুঝে নিয়ে হয় নতুন রাস্তা ধরতে হবে, নয় তো চলতে হবে দেরিতে পৌঁছনোর উদ্বেগ সঙ্গে নিয়েই!

ব্যস্ত সময়ে রাস্তার হাল ফেরাতে অপারেটিং সিস্টেম গুগ্‌লের এই ‘ম্যাপের জাদুকাঠি’ই এ বার ব্যবহার করার কথা ভাবছে কলকাতা পুলিশ। লালবাজার সূত্রের খবর, ইতিমধ্যেই এ নিয়ে কলকাতা পুলিশের কর্তাদের সঙ্গে গুগ্‌ল কর্মকর্তাদের আলোচনা হয়েছে। শহরের ট্র্যাফিক ব্যবস্থাপনাকে আরও বেশি সময়ানুবর্তী করতেই এই পদক্ষেপ বলে দাবি পুলিশকর্তাদের। কিছু দিনের মধ্যেই এ নিয়ে ট্র্যাফিক গার্ডগুলিতে নির্দেশ পাঠানো হতে পারে বলে খবর।

কলকাতার বর্তমান পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েল বরাবরই স্বয়ংক্রিয় ট্র্যাফিক সিগন্যাল ব্যবস্থার পক্ষে। তাঁর মতে, কোনও গাড়িকেই অকারণে সিগন্যালে দাঁড় করিয়ে রাখা বাঞ্ছনীয় নয়। দীর্ঘক্ষণ সিগন্যালে দাঁড়িয়ে থাকার বিরক্তি থেকেই চালক সিগন্যাল সবুজ হলেই তাড়াহুড়ো করেন। এর জেরে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে বলে তাঁর মত। তাই ‘স্পিড ম্যানেজমেন্টের’ মাধ্যমে যে কোনও গাড়িকে সুষ্ঠু ভাবে গন্তব্যে পৌঁছে দেওয়ার পক্ষে কমিশনার।

এই পরিপ্রেক্ষিতে কলকাতা পুলিশের দায়িত্ব নিয়ে ট্র্যাফিক সিগন্যাল ব্যবস্থাকে স্বয়ংক্রিয় করতে জোর দেন পুলিশ কমিশনার। গত কয়েক মাস ধরে শহরের একাধিক গুরুত্বপূর্ণ রাস্তায় স্বয়ংক্রিয় সিগন্যাল ব্যবস্থাতেই যান নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। এর জন্য দিনে প্রত্যেক গাড়িচালকের গড়ে ৭-৮ মিনিট করে সময় বাঁচছে বলে পুলিশের দাবি। শনিবারই ‘কনসাল্টিং ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্ডিয়া’-র (সিইএআই) আয়োজিত এক আলোচনাসভায় কলকাতা ট্র্যাফিক পুলিশের সহকারী কমিশনার অলোক সান্যাল বলেছেন, ‘‘শহরের কোনও সিগন্যালে যাতে ১৮০ সেকেন্ডের বেশি কোনও গাড়িকে দাঁড়িয়ে থাকতে না হয়, সেই চেষ্টা করছি। এর জন্য নির্দিষ্ট গন্তব্যে আরও দ্রুত গাড়ি নিয়ে পৌঁছনো যাবে।’’

এই কাজ করতে গিয়েই সিগন্যাল কোঅর্ডিনেট করার ভাবনাচিন্তা শুরু করে কলকাতা পুলিশ। যার অর্থ, একটি সিগন্যালে অপেক্ষা করার পরে পর পর কয়েকটি সিগন্যাল খোলা পাবেন গাড়িচালক। তার পরে আবার থামতে হবে কোনও একটিতে। এ জন্য একটি নির্দিষ্ট সময়ের ‘সেটিং’ করা হবে সিগন্যালে। বেশ কিছু রাস্তায় যা করাও হয়। কিন্তু এই পদ্ধতিতে মূলত রাস্তার দৈর্ঘ্যের জন্য সমস্যা দেখা যায়। অনেকটা লম্বা রাস্তার সিগন্যাল এমন নির্দিষ্ট সময়ের ব্যবধানে ‘সেট’ করা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। পথ নিরাপত্তা সংক্রান্ত একাধিক বিষয়ে সরকারের সঙ্গে কাজ করা আইআইটি খড়্গপুরের অধ্যাপক ভার্গব মৈত্র বলেন, ‘‘আরও সমস্যা হল, একটি নির্দিষ্ট সিগন্যালেই দিনের এক এক সময়ে এক এক রকম ট্র্যাফিক হয়। এই বিভিন্নতার কারণেই সব সময়ে এক রকম ভাবে গাড়ির চাপ সামলানো সম্ভব নয়। কিন্তু স্বয়ংক্রিয় সিগন্যালিং পদ্ধতিতে হাঁটাই ভবিষ্যৎ। এই কারণেই রিয়েল টাইম ফিডব্যাক দরকার।’’

লালবাজারের এক কর্তা জানান, এই ‘রিয়েল টাইম ফিডব্যাক’ পেতেই গুগ্‌লের সাহায্য নেওয়ার ভাবনা। কিন্তু গুগ্‌ল এই পথের হদিস দেওয়ার কাজ করে কী করে? কলকাতায় নিযুক্ত এই সংস্থার এক কর্তা বলেন, ‘‘নতুন কেনা ফোন চালু করার সময়ে গুগ্‌ল মেল দিয়ে লগ ইন করতে হয়। এর পরেই ফোনটি চলে আসে গুগ্‌লের মুঠোয়। ফোনে ম্যাপ দেখলে তো কথাই নেই, না দেখলেও সংশ্লিষ্ট ফোনটিকে নিজস্ব অ্যালগোরিদমের মাধ্যমে ট্র্যাক করার সমস্যা হয় না গুগ্‌লের। এর পরে কোনও রাস্তার কোনও অংশে কতগুলি ফোন রয়েছে, সেই হিসাব করেই গুগ্‌ল জানায়, ওই পথে কতটা যানজট রয়েছে। বহু ক্ষেত্রেই এই হিসাব মিলে যায়।’’

তবে হিসাব না মেলার গল্পও শোনালেন লালবাজারের সাইবার শাখার এক তদন্তকারী আধিকারিক। তাঁর কথায়, ‘‘এক যুবক মজা করে প্রচুর ফোন একটি বস্তায় ভরে রাস্তার ধারে রেখে দিয়েছিলেন। যার জেরে মোবাইল ম্যাপে ওই রাস্তা দীর্ঘক্ষণ লাল হয়ে ছিল। যার অর্থ, প্রবল যানজট। কিন্তু বাস্তবে রাস্তাটি ছিল একেবারে ফাঁকা! ফলে স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতির সঙ্গে জরুরি পরিস্থিতির জন্য আলাদা বন্দোবস্তও রাখা দরকার।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Google Map police
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE