প্রতীকী ছবি।
পরিবারের লোকেদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে মঙ্গলবার সকাল থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর রসদ খুঁজতে শুরু করেছেন দমদম গোরাবাজারের ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা। শুরু হয়েছে পোড়া কেব্ল, বিদ্যুতের তার সরানোর কাজ। ধ্বংসস্তূপেই অনেকে খুঁজে পেয়েছেন পুড়ে যাওয়া নথিপত্র, টাকা-পয়সা। যদিও ব্যবসায়ীদের উৎকণ্ঠা পুরো কাটেনি। এ দিন সকালেও কয়েকটি দোকান থেকে ধোঁয়া বেরোতে দেখা গিয়েছে। পুড়ে যাওয়া ব্যাঙ্কের পাশে একটি বাড়িতে বিকেলের দিকে ফের ধোঁয়া দেখা যায়। দমকলকর্মীরা দ্রুত তা নিয়ন্ত্রণে আনেন।
২০০৬ সালের আগুনে সর্বস্ব হারিয়েছিলেন দমদম গোরাবাজারের চাল-মুড়ির ব্যবসায়ী শীলা দেব। সব কিছু নতুন ভাবে গুছিয়ে ব্যবসা শুরুও করেছিলেন। কিন্তু রবিবার রাতের ভয়াল আগুন কেড়ে নিয়েছে শীলাদেবীর রুটি-রুজির একমাত্র অবলম্বন দোকানটি।
পোড়া বাজারের চারপাশে এ দিন ভিড় করেছিলেন স্থানীয়েরাও। সকলের একটাই প্রশ্ন, কবে বাজার খুলবে। এক বাসিন্দা চন্দন ভট্টাচার্য বললেন, ‘‘কত তাড়াতাড়ি আবার থলি হাতে এই মানুষগুলোর কাছে আসব, সেটাই ভাবছি।’’ বংশ পরম্পরায় গোরাবাজারে মাছ বিক্রি করে আসছেন বিবেক দেবনাথ। তিনিও জানেন না, কবে থেকে আবার ব্যবসা শুরু করতে পারবেন। আগুনে শেষ হয়ে গিয়েছে মুদির দোকানের গৌতম দত্ত বা আলু-পেঁয়াজের ব্যবসায়ী মদন পালের সব জিনিসপত্র। তাঁদের দোকান এখন ভেঙে পড়া টিনের শেডের নীচে। বিবেকের কথায়, ‘‘যত দ্রুত সম্ভব ফের ব্যবসা শুরু করতে হবে। না হলে খদ্দেররা যে ছিটকে যাবেন!’’ রাজ্য সরকারও ব্যবসায়ীদের পাশে থাকারই বার্তা দিয়েছে।
এ দিন সকাল থেকে দমদম পুরসভার উদ্যোগে শতাধিক কর্মী টিন, তারের বেড়া, পুড়ে যাওয়া কাঠের কাঠামো-সহ বিভিন্ন জিনিস বার করতে শুরু করেন। ছিল দমকলের তিনটি গাড়িও। যাঁরা কাজ করছিলেন, তাঁদের জন্য সকালের টিফিন, জরুরি ওষুধের ব্যবস্থা করা হয়েছিল পুরসভার তরফে। গোটা কাজটা তদারকি করছিলেন পুর চেয়ারম্যান হরীন্দ্র সিংহ।
বিকেলের মধ্যেই ধ্বংসাবশেষের প্রায় ৫০ শতাংশ সরিয়ে ফেলেন পুরকর্মী ও ব্যবসায়ীরা। পুর কর্তৃপক্ষ জানান, এই কাজ শেষ হলে বাজারের যে অংশ অপেক্ষাকৃত কম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, সেখানে অস্থায়ী বাজার শুরু করা হবে। পরবর্তী কালে কেএমডিএ-র ইঞ্জিনিয়ারেরা বাজারের অবস্থা পর্যালোচনা করবেন।
পুরসভা সূত্রের খবর, তার ভিত্তিতে কী ভাবে বাজারের পুনর্গঠন করা হবে, তার পরিকল্পনা হবে। যদিও নির্বাচনী বিধির কারণে বিষয়টি নিয়ে কেউ মুখ খুলতে চাননি।
এ দিনও ব্যবসায়ীদের একাংশ প্রশ্ন তুলেছেন বাজার সমিতির ভূমিকা, বিশেষত অগ্নি-নির্বাপণ ব্যবস্থা নিয়ে। বিকেলে ক্ষতিগ্রস্ত বাজার দেখতে আসেন পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম, মেয়র তথা দমকল মন্ত্রী শোভন চট্টোপাধ্যায়। তাঁদের সঙ্গে ছিলেন স্থানীয় সাংসদ সৌগত রায় এবং পুরকর্তারা। অধিকাংশ ব্যবসায়ীর মুখে ঘুরে-ফিরে এসেছে একটাই প্রশ্ন— কেন দমকল দেরিতে এসেছে, গাড়িতে জল ছিল না কেন, এমন ভয়াবহ আগুনই বা লাগল কেমন করে। কিন্তু কোনও প্রশ্নের উত্তরই তাঁরা পাননি।
দমকলমন্ত্রী অবশ্য জানিয়েছেন, ঘটনার ফরেন্সিক তদন্ত হবে। কী ভাবে আগুন লাগল, বাজারের পরিস্থিতি বিশেষত অগ্নি-নির্বাপণ ব্যবস্থা খতিয়ে দেখে তা নিয়ে সিদ্ধান্ত হবে। এ দিন মন্ত্রী-সাংসদের কাছে ব্যবসায়ীরা দুরবস্থার কথা তুলে ধরেন। পরে পুরমন্ত্রী বলেন, ‘‘রাজ্য সরকার সর্বতোভাবে ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে আছে। বাজারের পুনর্গঠনের বিষয়টি দেখবে পুরসভা। রাজ্য প্রশাসন সহযোগিতা করবে।’’
অগ্নিকাণ্ডে মৃত ভিকি সিংহের বাবা সুনীল রাম সিংহ এবং পরিবারের সদস্যেরা এ দিন দমদম থানায় পুরমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে আর্থিক ক্ষতিপূরণের দিকটি বিবেচনার অনুরোধ জানান। মন্ত্রী জানান, তাঁরা তাঁদের পাশে থাকবেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy