Advertisement
E-Paper

হাজিরায় অনিয়ম, সাফাই কর্তৃপক্ষের

বায়োমেট্রিক অ্যাটেন্ডেন্সের পদ্ধতি চালু থাকা সত্ত্বেও সময়ে হাজিরা দিচ্ছেন না সরকারি চিকিৎসকেরা। তবু তা নিয়ে হেলদোল নেই কারও। এক চিকিৎসক নিজেই রাজ্যের স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা ও হাসপাতালের অধ্যক্ষকে সরাসরি সে বিষয়ে চিঠি লিখে এই অনিয়মের কথা সকলের নজরে এনেছেন।

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ৩১ অগস্ট ২০১৫ ০১:৫৪

বায়োমেট্রিক অ্যাটেন্ডেন্সের পদ্ধতি চালু থাকা সত্ত্বেও সময়ে হাজিরা দিচ্ছেন না সরকারি চিকিৎসকেরা। তবু তা নিয়ে হেলদোল নেই কারও। এক চিকিৎসক নিজেই রাজ্যের স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা ও হাসপাতালের অধ্যক্ষকে সরাসরি সে বিষয়ে চিঠি লিখে এই অনিয়মের কথা সকলের নজরে এনেছেন। তবুও নির্বিকার কর্তৃপক্ষ। অনিয়ম রুখতে ব্যবস্থা নেওয়া তো দূরস্থান, বরং অভিযুক্ত এক চিকিৎসকের হয়েই কথা বললেন অধ্যক্ষ। এমনই ঘটছে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে।

কিন্তু বায়োমেট্রিক অ্যাটেন্ডেন্সের মতো ব্যবস্থায় দুর্নীতি হচ্ছে কোন ফাঁক দিয়ে? কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের একাধিক কর্তা স্বীকার করেছেন, বায়োমেট্রিক ব্যবস্থা ঘটা করে শুরু হলেও সেটি পুরোপুরি গুরুত্বহীন হয়ে রয়েছে। কে, কবে এলেন না আর কার কবে দেরি হল, এ ব্যাপারে বায়োমেট্রিক রিপোর্ট মেডিক্যালে দেখাই হয় না। সব হিসেবই চলে আদ্যিকালের হাজিরা খাতা দেখে। আর তাতেই সুবিধা হচ্ছে হাজিরায় কারচুপিতে। এক কর্তার কথায়, ‘‘খাতা উঠে গেলে তো অনেক জুয়োচুরি ধরা পড়ে যাবে। তাই ডাক্তারদের চাপেই বায়োমেট্রিক হাজিরা-রিপোর্ট দেখা হয় না। অধিকাংশ সময়ে বায়োমেট্রিক মেশিনও খারাপ হয়ে থাকে। দেখা হয় হাজিরা খাতাই। আর সেখানেই দুর্নীতি।’’

কী রকম? দেখা যাচ্ছে, হাজিরা খাতায় মাসের পর মাস কিছু চিকিৎসক ‘লেট মার্ক’ (L) এবং ‘কোয়্যারি মার্ক’ (?)-এর উপরে দেদার সই করে চলেছেন। তাঁদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। অথচ, সরকারি নিয়মে মাসে তিন দিন ‘লেট’ হলেই একটি ‘সিএল’ কাটা যাওয়ার কথা। মাসে অধিকাংশ দিন দেরি করে এসে কেন তাঁরা কাজে গাফিলতি করছেন, কেন রোগীদের ও ছাত্রদের সমস্যায় ফেলছেন, তা নিয়ে চিন্তিত নন কর্তৃপক্ষ।

এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি অভিযোগ যে চিকিৎসকের বিরুদ্ধে উঠেছে, তিনি হলেন মেডিক্যালের প্যাথোলজি বিভাগের অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর সুপ্রিয় রায়চৌধুরী। আর যে চিকিৎসক স্বাস্থ্য দফতরে এই হাজিরা-দুর্নীতি নিয়ে অভিযোগ করেছেন, তিনি হলেন মেডিক্যালের প্যাথোলজির আর এক চিকিৎসক জয়ন্ত সরকার।

পাশাপাশি, তিনি ‘তথ্য জানার আইন’-এ চিঠি দিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে জিজ্ঞাসা করেছেন, অভিযুক্ত চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে কী শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে? যদি ওই চিকিৎসকেরা এমন ভাবে কাজে গড়িমসি দেখিয়ে পার পেয়ে যান, তা হলে বাকি চিকিৎসকেরা কোন দুঃখে কাজ করতে যাবেন? কেন হাসপাতালে কাজের পরিবেশ ক্ষুণ্ণ হচ্ছে দেখেও কর্তৃপক্ষ নির্বিকার? যদিও সেই ‘আরটিআই’-এর কোনও উত্তর তিনি এখনও কর্তৃপক্ষের থেকে পাননি। যাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় কোনও তদন্তও শুরু হয়নি।

সুপ্রিয়বাবুকে এ ব্যাপারে ফোন করা হলে তিনি প্রশ্ন শুনে ‘কিছু বলব না’ বলে ফোন নামিয়ে রাখেন। তার পর থেকে তাঁর ফোন ‘সুইচড অফ।’ অধ্যক্ষ তপনকুমার লাহিড়ীর এই হাজিরা-দুর্নীতি নিয়ে মন্তব্য, ‘‘তিনি আমার অনুমতি নিয়েই ওই ভাবে সই করেছেন। আসলে ওঁর বাড়িতে কিছু ব্যক্তিগত সমস্যা চলছিল।’’

সমস্যা থাকলে তিনি সেটি সরকারি ভাবে চিঠি লিখে দফতরকে জানালেন না কেন? কেন দেড় বছরেরও বেশি সময় ধরে এক জনকে লেট মার্কের উপরে সই করতে দেওয়া হবে? অধ্যক্ষের জবাব, ‘‘ওঁকে অনেক বার আমি নিজে এবং আরও কিছু চিকিৎসক এ ব্যাপারে কড়া ভাবে বলেছি। সতর্কও করেছি। তা-ও শোনেননি। সব সময়ে সকলের বিরুদ্ধে শাস্তি নেওয়া যায় না।’’
স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা সুশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য, ‘‘মেডিক্যালে হাজিরা নিয়ে একটা গোলমাল হচ্ছে। আমরা বিষয়টি দেখছি।’’

kolkata medical college biometric attendence doctors attendence irregular attendence
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy