Advertisement
০২ মে ২০২৪
Green Crackers

Green Cracker: ছাড়পত্র পেতে পুজোর আগেই পরীক্ষায় রাজ্যের সবুজ বাজি

এই মুহূর্তে ফুলঝুরি, রংমশাল, চরকি এবং তুবড়ি পাঠানো হচ্ছে পরীক্ষার জন্য। ছাড়পত্র মিললে আরও কয়েক ধরনের বাজি তৈরি করে পাঠানো হবে।

ফাইল চিত্র।

নীলোৎপল বিশ্বাস
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৭ জুলাই ২০২২ ০৭:০১
Share: Save:

এর আগে নিষিদ্ধ বাজির গায়েই সবুজ বাজির তকমা সেঁটে চলেছিল দেদার বিক্রি। তবে চলতি বছরেই কি প্রথম বার প্রকৃত সবুজ বাজি বিক্রি হবে কলকাতার বাজারে? দুর্গাপুজোর আড়াই মাস আগে এই প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছে বাজি ব্যবসায়ী এবং পুলিশের কর্তাদের মধ্যে।

কারণ, দিন কয়েকের মধ্যেই ছাড়পত্র পাওয়ার আশায় প্রথম বার ‘ন্যাশনাল এনভায়রনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউট’-এর (নিরি) নাগপুরের কার্যালয়ে পৌঁছতে চলছে পশ্চিমবঙ্গে তৈরি সবুজ বাজি। দূষণ মাত্রার পাশাপাশি সেগুলি শব্দবিধি লঙ্ঘন করবে কি না, তা-ও সেখানে পরীক্ষা করে দেখা হবে। সেই পরীক্ষায় পাস করলে তবেই মিলবে বাজারে বিক্রি করার ছাড়পত্র।

যে কোনও উৎসবের মরসুমেই বাজি ঘিরে বিতর্ক চলছে গত কয়েক বছর ধরে। কলকাতা হাই কোর্টের একটি রায়ের পরে সুপ্রিম কোর্টের নতুন রায়ে গত বছর সেই বিতর্ক চরমে পৌঁছয়। হাই কোর্ট সব ধরনের বাজি বিক্রি এবং ফাটানো নিষিদ্ধ করলেও অপেক্ষাকৃত কম দূষণ ছড়ায় এমন সবুজ বাজি বিক্রি এবং ফাটানোয় ছাড়পত্র দেয় সুপ্রিম কোর্ট। পরিবেশবিদদের বড় অংশই শীর্ষ আদালতের ওই রায়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেন যে, সবুজ বাজির তকমা সেঁটে নিষিদ্ধ বাজিই বিক্রি হবে না তো?

এ ব্যাপারে তাঁদের যুক্তি ছিল, সবুজ বাজি কী, এ নিয়ে জনমানসে তেমন কোনও ধারণাই নেই। যাচাই করার কাজে পুলিশেরও সে ভাবে প্রশিক্ষণ নেই। পরিসংখ্যান দিয়ে তাঁরা জানান, রাজ্যে কেন্দ্রীয় সরকারি সংস্থা পেট্রোলিয়াম অ্যান্ড এক্সপ্লোসিভ অর্গানাইজ়েশন (পেসো)-এর ছাড়পত্র পাওয়া বাজি কারখানার সংখ্যা মাত্র তিনটি। রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের তালিকায় রয়েছে ৩৭টি বাজি কারখানা। বাকি সব কারখানা অবৈধ। স্বীকৃত কারখানাগুলির কোনওটিতেই সবুজ বাজি তৈরি হয় না। তা ছাড়া এমন বাজি তৈরির জন্য নিরি-র ছাড়পত্র লাগে। দেশের কোন কোন জায়গায় সবুজ বাজি তৈরির ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে, তা-ও স্পষ্ট নয়।

ফলে, এ রাজ্যে তো তৈরি হয়ই না, বাইরের কোথা থেকেই বা এই বাজি আসবে সেটিও স্পষ্ট নয়। আদতে দুর্গাপুজোর পরে কালীপুজো ও ছটে দেখা গিয়েছিল, পরিবেশবিদদের আশঙ্কা অনেকাংশে সত্যি হয়েছে। সবুজ বাজির আড়ালে বাজারে দেদার বিকিয়েছে নিষিদ্ধ বাজি। কিন্তু পরে পুলিশ ধরপাকড় চালিয়ে কিছু ক্ষেত্রে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

চলতি বছরে এ নিয়ে আরও কড়াকড়ি হতে পারে বুঝেই সম্প্রতি এ রাজ্যের বাজি ব্যবসায়ীরা কথা বলেন পুলিশের সঙ্গে। বাজি ব্যবসায়ী এবং কলকাতা পুলিশেরকর্তারা যৌথ ভাবে যোগাযোগ করেন নিরি-র সঙ্গে। এই পরিপ্রেক্ষিতেই সম্প্রতি কলকাতায় আসেন নিরি-র প্রধান বিজ্ঞানী সাধনা রাইলু। তাঁর সঙ্গে ছিলেন নিরি-র আরও পাঁচ বিজ্ঞানী। তাঁদের নিয়ে যাওয়া হয় দক্ষিণ ২৪ পরগনার নুঙ্গি এলাকায়। সেখানকার প্রায় ৪০ জন বাজি ব্যবসায়ীকে তাঁরা হাতেকলমে সবুজ বাজিতৈরি করা শিখিয়েছেন বলে খবর। সেই প্রশিক্ষণ চলেছে দু’দিন ধরে। ব্যবসায়ীদের তাঁরা জানিয়েছেন, বেরিয়াম-সহ বিষাক্ত রাসায়নিক উপাদান বাদ দিয়ে, আর কী কী উপকরণ দিয়ে সবুজ বাজি তৈরি করা যায়। প্রশিক্ষণের শেষে বৃহস্পতিবার থেকে ওই ব্যবসায়ীরাই সবুজ বাজি তৈরি করেছেন। এ বার সেগুলিই পাঠানো হবে নাগপুরে নিরি-র দফতরে পরীক্ষার জন্য।

বাজি ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, এই মুহূর্তে ফুলঝুরি, রংমশাল, চরকি এবং তুবড়ি পাঠানো হচ্ছে পরীক্ষার জন্য। ছাড়পত্র মিললে আরও কয়েক ধরনের বাজি তৈরি করে পাঠানো হবে।

নিরি-র প্রধান বিজ্ঞানী সাধনা বলেন, ‘‘বাজি ব্যবসার সঙ্গে প্রচুর মানুষ জড়িত। আমাদের থেকে শিখে এ বার তাঁরাও সবুজ বাজি বানাতে পারবেন বলে আশা করি। এ বার পুলিশেরও সবুজ বাজি ও নিষিদ্ধ বাজির মধ্যে পার্থক্য করতে সুবিধা হবে।’’ ‘পশ্চিমবঙ্গ বাজিশিল্প উন্নয়ন সমিতি’র সভাপতি শুভঙ্কর মান্না বললেন, ‘‘বাজি ব্যবসাকে বাঁচিয়ে রাখতে এই পথে হাঁটতেই হত। এর পরেও হয়তো অনেকে বেআইনি বাজি তৈরির চেষ্টা করবেন। সেটা দেখার জন্য পুলিশ আছে। তবে বৈধ ভাবে সবুজ বাজি বিক্রি করতে চাইলে আর কোনও সমস্যা থাকবে না। আগামী দুর্গাপুজোর আগেই এ রাজ্যের বাজি-বাজারে সবুজ বিপ্লব হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Green Crackers
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE